“সেই ছোট্ট বেলায় বড় আপুর আঙ্গুল ধরে আমার প্রথম থিয়েটারে যাও হয়েছিল। তখন আমি শিশুস্রেনীতে পড়ি মাত্র।খুব আগ্রহ জন্মাল প্রথম দিনেই। আমার মত আরো অনেক শিশুরা বই পড়ছে, ছড়া আওড়াচ্ছে, নাচছে, জোরে জোরে গান গাইছে। সেইদিনটার কথা কখনো ভুলা যাবে না। সময়টা ছিল
১৯৯৯ সালের মাঝামাঝিতে। আমার প্রথম নাটক “রাজপুত্রের অভিযান” একটি শিশুতোষ প্রযোজনা । রাজপুত্র ও রাজকন্যা আর সাথে সেই রুপোর কাঠি- সোনার কাঠি নিয়ে রচিত হয়েছিল নাটকটি।
“এমন মজা হয় না, গায়ে সোনার গয়েনা; রাজকন্যার বিয়ে হবে, বাজবে কত বাজনা”। এই গানে আমি নেচে ছিলাম আর আনন্দ করেছিলাম বিয়ের। প্রথম নাটক, প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পাওয়া। তারপর মঞ্চস্থ করা। এইতো শুরু। একের পর এক নাটকে অভিনয় করতে লাগলাম। এরপরে করেছিলাম “কাক ও কোকিল” নাটকটি।আমি কোকিল ছানার চরিত্রে
অভিনয় করেছিলাম। তারপর “কচি পাতার কান্না” নাটকটিতে অভিনয় করি। এই নাটক আমাদের দেশের ছয়টি ঋতু আর ঘর-বাড়িহীন দুই ভাইবোন কে নিয়ে নাটকটি রচনা করা হয়েছিল। লিখেছিলেন ভারতের বিখ্যাত রাইটার সুব্রত মুখোপাধ্যায়। নির্দেশনায় ছিলেন আলমগির মাহমুদ। এই নাটকটিতে আমি হেমন্ত ঋতুটির চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম।
নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ হয় পিপলস থিয়টার এসোসিয়েশন আয়োজিত শিশু নাট্যউৎসব ২০০২ এ। পরে আমাদের নাটকটির উপস্থাপনায় মুগ্ধ হয়ে আয়োজক জনাব লীয়াকত আলী লাকি ( বর্তমান ডিরেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন) ভাই আমাদের কে
ভারতের নয়া দিল্লী তে অনুষ্ঠিত “রাইন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল ২০০৩” যাওর প্রস্তাব করেন। সে সময়ে আমাদের থিয়েটার তথাপি আমাদের মুনশিগঞ্জ জেলার কোন দল প্রথম অন্য দেশে যাবে তাও মফস্বলের একটা দলের জন্নে সেটা ছিল স্বপ্ন। তবে স্বপ্নতো সত্যি হয়। তৎকালীন প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা আর
আমাদের মানে মুনশিগঞ্জ থিয়েটারের অভিভাবকদের বিশেষ করে তৎকালীন সংগঠনটির সম্পাদিকা আঞ্জুমান আরা রুমা আপুর অক্লান্ত পরিশ্রমের পর আমাদের স্বপ্ন সত্যি হয়েছিলো। আমার দলের সাথে প্রথম দেশের বাইরে যাওয়া। সে ছিল অন্য রকম এক অনুভুতি। ৪৪ টি দেশ অংসগ্রহন করেছিল উৎসবটিতে। বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করেছিলাম আমরা। জীবনের মূল্যবান মুহূর্ত গুলোর মধ্যে ছিল দিন গুলো।
এইতো তারপরে একের পর এক প্রযোজনায় অভিনয় করেছি। “বাঁশি” আর “খেলা” নাটক দুটি ছিল অন্যতম। “খেলা” নাটকটিতে অভিনয় করে আমি আমার শিশু শিল্পী হিসেবে সব চেয়ে বেশি প্রশংসিত হয়েছিলাম। পেয়েছিলাম মঞ্চকুঁড়ি পদক ২০০৮। এরই মাঝে বলে রাখি ২০০৭ আমি ও আমার নাট্যজীবনের অভিভাবকদের সাহায্যে আমরা গঠন করি নতুন একটি থিয়েটার। সত্য ও সুন্দরের চর্চা স্লোগানে “সঞ্চালক নাট্য চর্চা কেন্দ্র'”।
“খেলা” নাটকটি সঞ্চালক নাট্য চর্চা কেন্দ্র বহু জায়গাতে মঞ্চস্থ করেছিল। মজার বেপার হল এই নাটকটি আমি যতবার যেখানে অভিনয় করেছি, ততবার দুইবার করে মঞ্চস্থ করতে হয়েছিল। সবার এতো ভালো লাগতো নাটকটি যে আরেকবার দেখার লোভ কেউ সামলাতে পারত না। হোক সেটা দেশে বা দেশের বাইরে। সব যায়গাতে একি ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
২০১০ এর শেষের দিকে নাটকটি ভারতের উত্তর প্রদেশ “বেরেলি”তে পঞ্চম ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ফেস্টিভাল ২০১০ এ মঞ্চস্থ হয়। সেখানে এই “খেলা” নাটকটির অভিনয়ের পাশাপাশি আমি প্রথম নির্দেশনার দায়িত্বও পেয়েছিলাম। আমার জীবনের প্রথম নির্দেশনা তাও অাবার অান্তর্জাতিক একটি মঞ্চে। ভালো লাগার ভালোবাসার আরেক মুহূর্ত। নাটক এতো প্রশংসিত হয়েছিল যে আমি জীবনে প্রথম আন্তর্জাতিক
এ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছিলাম। অল ইন্ডিয়ান কালচারাল এ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক “পাঞ্চাল রত্ন এ্যাওয়ার্ড ২০১০” পেয়েছিলাম। জীবনের গৌরবময় মুহূর্তগুলোর মধ্যে এটি ছিল অপ্রত্যাশিত। যাইহোক, এরপর আমি “আতঙ্ক,স্থাবর, রাজুবালা সুন্দরি, পাহারাদার, ভেংচা, রাজা ও মন্ত্রী, বনের রাজা, মুচির আশ্চর্য বৌ, হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা,মেলা, দাবী, টুল, কমলা সুন্দরীর পালা, লালবানু-শাহ্জামাল সহ আরো অনেক
নাটক আমি অভিনয় ও নির্দেশনা দিয়েছি। ভারতের উড়িষ্যার কাট্টাক এ ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার অলিম্পিয়াড এন্ড ফেস্টিভাল ২০১০ ও ২০১১, ভারতের দিল্লিতে ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন থিয়েটার ফেস্টিভাল ২০১২ ও দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল আর্টস ফেস্টিভাল ২০১৪ তে অংশগ্রহণ করেছিলাম। উড়িষ্যার ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার অলিম্পিয়াড এন্ড ফেস্টিভাল ২০১১ তে অংশগ্রহণ ও ভালো পারফর্মেন্সের জন্য আমাকে “প্লেগ অফ অনার” সম্মানে সম্মানিত করা হয়।
আমার থিয়েটার সঞ্চালক এনেছে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে একের পর এক সম্মান।
এ যাবৎ কালে আমাদের জেলায় সবচেয়ে বড় ৯ দিন ব্যাপী নাট্য উৎসব, জেলা থিয়েটার গুলোর মধ্যে প্রথম বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী তে দুইদিন ব্যাপী নাট্য উৎসব করেছে। নিয়মিত প্রযোজনার পাশাপাশি প্রতি বছর বিজয় দিবসে আলোক চিত্র প্রদর্শনী, চৈত্র সংক্রান্তি উদযাপন, মুন্সীগঞ্জের সংস্কৃতি নিয়ে প্রকাশিত ত্রৈ মাসিক
পত্রিকা থেকে শুরু করে নানা অনুষ্ঠান সফলতার সাথে আয়োজন করেছে ও করে যাচ্ছে। এছাড়া জাতীয় পথ নাট্য উৎসব ২০০৭ থেকে ২০০১৭ পর্যন্ত নিয়মিত অংশগ্রহণ করেছে। ন্যাশনাল চিলড্রেন ফেস্টিভাল ও বিভাগীয় নাট্য উৎসব গুলোতে সঞ্চালক নিয়মিত ভাবে অংশগ্রহণ করেচলেছে।
বর্তমানে আমি আমার থিয়েটারের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি ও একটি লোকজ নাটক ” লালবানু- শাহ্জামাল” ও একটি পথ নাটক “পাইছিরে পাইছি” এর নির্দেশনা দিচ্ছি । আসা করি খুব শীঘ্রই নাটক দুটি মঞ্চস্থ করবো ইনশা আল্লাহ্।”