বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, সহকারী ইংরেজি শিক্ষক সাঈদুর রহমান বাবুল দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নভাবে ছাত্রীদের যৌন হয়রানিমূলক কুপ্রস্তাব ও অশালীন মন্তব্য করে আসছিলেন। সুযোগ পেলেই তিনি ছাত্রীদের শরীরে হাত দিতেন। অভিভাবকদের নিয়েও অশালীন মন্তব্য করতেন। সর্বশেষ গতকাল রোববার নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেন তিনি। বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুন তালুকদারকে জানায় ছাত্রীরা। তিনি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো অভিযুক্ত শিক্ষকের পক্ষ নেন এবং অভিযোগকারী ছাত্রীদের বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। এ সময় তিনি সাঈদুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই মর্মে ছাত্রীদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেন। বিষয়টি জানাজানি হলে অভিভাবকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। আজ ছাত্রীরা ক্লাস বর্জন করে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করতে থাকে। তারা ‘সাইদুরের চামড়া, তুলে নেব আমরা’ বলে স্লোগান দেয়। খবর পেয়ে ছুটে যান সাংবাদিকরা।
নবম শ্রেণির এক ছাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে এনটিভিকে বলে, ‘সে (সাঈদুর রহমান) ক্লাসের মধ্যে মাইকে বলে যে ক্লাসে গিয়া ইয়াং টিচারের কাছে পড়ো। তোমাদের ভাইয়া টিচাররা তোমাদের আড়াই ঘণ্টা-তিন ঘণ্টা কইরা পড়ায়। এতে গার্জিয়ানরা খুশি হয়। এক হাজার টাকা কইরা নেয়। সে তোমাদের দেখায়, কিভাবে বাজে বাজে ওয়েব সাইটে ঢুকতে হয়, কিভাবে সানি লিওনের পর্ন দেখতে হয়। সেগুলো সে শেখায়। আমরা শেখাই না দেইখা তোমরা তাদের কাছে পড়তে যাও।’
‘প্রাইভেটে গেলে সে যা নয় তা বলে। আমাদের কিছু কিছু ফ্রেন্ড আছে, ইনফ্যাক্ট আমাকেও সে বলছে, আমাকে নাকি দেখলে তার ক্লাসে নাইনে যাইতে ইচ্ছা করে। আমার জন্য সে ইয়াং হওয়ার ট্যাবলেট খাবে। তার এগুলা ইচ্ছা হয়। আমার এক ফ্রেন্ড আছে। ওরে বলছে, তোমারে নিয়া আমি রাঙামাটি চইলা যাব। তোমার জন্য রাঙামাটি পোস্টিং নিব। তুমি যদি আমারে একদিনের সুখ দাও, তোমার আর এসএসসির চিন্তা করতে হবে না। তোমাকে আমি সব জায়গায় পাস করায়ে দিব।’ বলে মন্তব্য করে ভুক্তভোগী ছাত্রী।
বেলা ১১টার দিকে সাঈদুর রহমান বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ থেকে বের হন। তাকে দেখতে পেয়ে অভিভাবকরা বলেন, ‘ধর, সালারে ধর।’ এরপর অফিস কক্ষের সামনে গিয়ে সাঈদুরকে কিল-ঘুষি দেন। বিদ্যালয়ের সহকর্মীরা তাকে রক্ষার চেষ্টা করেন এবং অফিস কক্ষে নিয়ে যান। অভিভাবকরা সেখানে গিয়েও তাকে বের করে আনার চেষ্টা করেন। এ সময় এক ছাত্রী বলে, ‘ভিডিও কর, ফুল ভিডিও কর’। ছাত্রীরা সমস্বরে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলে স্লোগান দেয়।
এরপর সাঈদুরকে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে এনে বেদম মারধর করে ছাত্রী ও অভিভাবকেরা। খবর পেয়ে পুলিশ বিদ্যালয়ে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ সময় ছাত্রী ও অভিভাবকরা সহকারী শিক্ষক সাঈদুর রহমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং প্রধান শিক্ষক মামুন তালুকদারের অপসারণ দাবি করেন।
আরেক ছাত্রী বলে, ‘(সাঈদুর) আমাদের বডি পার্টস নিয়ে কমেন্টস করে। সে একটা টিচার! সে একটা টিচার হইয়া আমাদের বাবা না, আমাদের দাদার বয়সী। সে কিভাবে বলে আমরা তার পিছনে ঘুরি। তার মতো বুইড়ার পিছনে আমাদের জুতাও ঘুরে না। সে বলছে, মেয়েদের ভার্জিনিটি টেস্ট হবে। কোন মেয়ে কোন ছেলের সাথে কী করছে সে সব টেস্ট হবে।’
যৌন হয়রানির অভিযোগে টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাঈদুর রহমানকে আজ সোমবার মারধর করে ছাত্রী ও অভিভাবকরা। ছবি : এনটিভি
এ সময় ওই ছাত্রীর মা বলেন, ‘সাইদুর স্যার আমার মেয়ে সম্পর্কে যে বাজে কথা বলছে এটার বিচার চাই। সর্বোচ্চ বিচার চাই।’
আরেক অভিভাবক বলেন, ‘বড় একটা উদাহরণের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে স্যাররা এই ধরনের উক্তি বা অশালীন কথাবার্তা বলতে না পারে। যে স্যার বলে, তোমার ফিগার সুন্দর, বোম্বের নায়িকার মতো। ওই স্যারকে জুতার মালা দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দিতে হবে।’
এক ছাত্রীর মা বলেন, ‘এই স্যার কোনো বাচ্চার জন্য স্কুলের জন্য নিরাপদ না। আমরা চাই তাকে আমাদের সামনে দিয়ে বের করে দিবে। আমরা দেখব, জুতার মালা দিয়ে তাঁকে বের করে দিতে হবে।’
এক ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সাইদুর রহমান এবং শরিফুল ইসলামের অপসারণ চাই। এই স্কুলকে জ্বালাইয়া ফেলছে তারা। মেয়েদের ইজ্জত নিয়া ছিনিমিনি করছে তারা। এই স্কুলে মহিলা হেড মাস্টার দেওয়া হোক।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) আশরাফুল মোমিন বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনায় অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সায়েদুর রহমান বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষককে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দিয়ে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুন তালুকদার বলেন, ‘আমি শুনলাম যে এ রকম কিছু ছাত্রীর সাথে, দুই-একজন ছাত্রী সাথে সে (সাঈদুর রহমান) দুর্ব্যবহার করছে। তার জন্য ছাত্রীরা এবং কিছু অভিভাবকরা বিক্ষুব্ধ হইছে। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
ছাত্রীদের কাছ থেকে সই নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক দাবি করেন, তিনি কোনো ছাত্রীর কাছ থেকে স্বাক্ষর নেননি। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সাঈদুর রহমানকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।