এমপিওভুক্তি দাবিতে ৮ম দিনের মত আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাদের দাবি মেনে না নিলে আরও কঠর কর্মসূচি দিবে বলে জানিয়েছেন নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষকরা।
অনশনের কারণে ১৫৪ জন শিক্ষকই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে ৩৫ জনকে সেলাইন দেওয়া হয়েছে এবং ২১ জন কে ঢাকা মেেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
সোমবার (২ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অামরণ অনেশন চলা কালিন এ তথ্য জানানো হয়।
নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায় বলেন, গত কাল প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাতের আবেদন করেছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সাক্ষাতের অনমিাত পায় নাই।
তিনি বলেন, সংসদে বাজেট পাশ হয়েছে । নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি । যদি আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া হয় তাহলে আরও কঠর কর্মসুচি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন,’আমরা আগেই বলেছিলাম ২৪ জুনের মধ্যে আমাদের দাবি মেনে নেয়া না হলে ২৫ জুন থেকে আমরা আমরণ অনশনে বসবো। পূর্বঘোষিত সেই ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে অনশনে বসেছি। যত ঝড় তুফান আসুক না কেন আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাবে। ২য় দিনের মত অনশনে চারজন শিক্ষক অসুস্থ হয়েছে তাদের আশপাশের হাসপাতালে ভর্তী করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
তিনি আমরণ অনশনরত কোন শিক্ষকের মৃত্যুর দুসংবাদ শোনার আগেই তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আহবান জানান।
উল্লেখ্য গত ১০ জুন থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ব্যানারে রাস্তায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা।
অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত সারাদেশে পাঁচ হাজারের অধিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৫ থেকে ২০ বছর যাবত ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পাঠদান করে শিক্ষক-কর্মচারীরা অত্যন্ত কষ্টকর ও মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেকের চাকরির মেয়াদ আছে ৫-১০ বছর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা সারাদেশে উন্নয়নবঞ্চিত অবস্থায় জীবন যাপন করছে।’
তিনি জানান, ‘গত ১২ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ) এর জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ জারি করা হয়েছে। এই নীতিমালা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠদান অনুমতি ও স্বীকৃতির সময় আরোপিত শর্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। চলতি ২০১৮-১৯ বাজেটে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দের কোন সুস্পষ্ট ঘোষণা নেই। যার ফলে নন-এমপিও শিক্ষক কর্মচারীর অত্যন্ত হতাশ ও আশাহত হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় মহামান্য রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপে সারাদেশের নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তি হলে সকলেই সন্তষ্টচিত্তে বাড়ি ফিরে যাবে।’
এর আগে এমপিওভুক্তির দাবিতে নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার কর্মসূচি শুরু করেন। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ডাকে টানা ওই অবস্থান ও অনশনের একপর্যায়ে গত ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তার তৎকালীন একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান সেখানে গিয়ে আশ্বাস দেন।
এরপর শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন। এরপর সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হয়েছে আসন্ন অর্থ বছরে নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে।
কিন্তু ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের যে বাজেটে এমপিওভুক্তির বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি।তারপর থেকে শিক্ষকরা রাস্তায় নেমে আসে।