আল মামুনুর রশীদ: সাধ ও সাধ্যের মধ্যে নতুন নতুন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে আমার ভাল লাগে। আর ভাল লাগে বলেই এবার ঘুরে এলাম বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড।
সুন্দরবন কেন্দ্রিক স্পটগুলো অনেক রেঞ্জ দিয়ে যাওয়া যায়। আমরা বেছে নেই সাতক্ষীরা রেঞ্জ। রেঞ্জ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নীলডুমুর ঘাট হতে শুরু হয় যাত্রা। তবে এ যাত্রায় নেই ক্লান্তি। সাগরের বুকে সুন্দরবন। ছোটখাল, বড়খাল,ভারানী খাল পেড়িয়ে ইঞ্জিন বোট চলছে। বোটে বসে দেখছি হরিণ, শুকর ও জানা-অজানা পাখি।
রাতের আঁধারে বোটের সার্চ লাইটের আলোতে কুমির দেখা ছিল নতুন অভিজ্ঞতা। হিরণ পয়েন্টে বোট নোঙর করে রাত কাটাই। সকালে ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে পৌঁছে যাই বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড।
১৯৯২ সালে দ্বীপটি প্রথম আবিষ্কৃত হয়। রামপালের জেলে মালেক ফরাজী তার দু’জন সঙ্গী নিয়ে এ দ্বীপে প্রথম পা রাখেন। তিনি বঙ্গবন্ধু ভক্ত হওয়ায় এ দ্বীপের নাম রাখেন বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড। সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্ট থেকে ১৫ কিলোমিটার এবং দুবলার চর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে এ দ্বীপ যেন বাংলাদেশের আরেক সেন্টমার্টিন।
দ্বীপের আয়তন ৭.৮৪ বগ’কিলোমিটার। যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ মিটার উঁচু। তবে দ্বীপের আয়তন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। দ্বীপের সমুদ্র সৈকত ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫০০ মিটার প্রস্থ। এ সমুদ্র সৈকতে সূ্র্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকন করা যায়। দ্বীপটি সবুজ শ্যামল ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট, একপাশে কাঁশবন। এ দ্বীপে কেওড়া, গেওয়া, পশুর, গরান গাছ ও বিভিন্ন লোনা পানির ফার্ণ জাতীয় লতাগুল্ম আছে। দ্বীপটি জীব বৈচিত্র্যময়। লাল কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক ও কচ্ছপ আছে এ দ্বীপে।
স্বচ্ছ নীল জলে ঘুরে বেড়ায় সামুদ্রিক মাছ। সৈকতে বসে দেখেছি ডলফিনের খেলা। দ্বীপে আছে অগনিত গাঙচিল, বালিহাঁস। বালিহাঁস ডিমে তা দিচ্ছে এমন দৃশ্যে চোখ জুড়িয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের প্রতিবেদন মতে, এখানে সরীসৃপ জাতীয় কোন প্রাণী পাওয়া যায়নি।
তবে আমরা নাম না জানা একটি সাপ দেখতে পেয়েছি। এখানে পুরো দ্বীপে উড়ে বেড়ায় রঙিন প্রজাপতি, ঘাস ফড়িং ও মৌমাছি। অনেকেই পুতনীর চরকে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড ভাবেন। আসলে দুটিই আলাদা দ্বীপ। দ্বীপটি অপরুপ সৌন্দর্যে ভরপুর। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার অসুবিধা ও মানব বসতি না থাকায় সম্ভাবনাময় এ দ্বীপটি পর্যটনে ছাঁয়া ফেলতে পারেনি।
আশার কথা হলো, সম্প্রতি সরকার বঙোপসাগরে জেগে ওঠা বিভিন্ন দ্বীপ নিয়ে ইকো-ট্যুরিজম গড়ে তোলার লক্ষ্যে একনেকে বিল পাশ করেছেন। এতে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডসহ অন্যান্য সুন্দর দ্বীপগুলো ভবিষ্যতে পর্যটনে অবদান রাখতে পারবে।
একবার ভাবুন তো! একটা নির্জন দ্বীপ। সাদা সাদা কাশফুলে ঢাকা। পুরো দ্বীপে লাল কাঁকড়ার বিচরণ। গাংচিল, বালিহাঁস। আপনি, সৈকতে দাঁড়িয়ে। নোনা জলের ঢেউ আছড়ে পরছে আপনার পায়ের কাছে!
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরগামী যেকোন বাসে শ্যামনগর নামবেন। এরপর শ্যামনগর থেকে মুন্সীগঞ্জগামী বাসে উঠলে পথে পরবে বংশীপুর বাজার। বাজারের বামদিকের রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে মুন্সীগঞ্জ
বাস স্ট্যান্ড। স্ট্যান্ডে নেমে অটোতে বামদিকের রাস্তা ধরে গেলে সামনে কলবাড়ি বাজার। বাজারের বামের রাস্তায় আরো তিন কি.মি. গেলে নীল ডুমুর বাজার। বাজারের ডানে বোট ঘাট। ঘাট হতে রিজার্ভ বোটে ৮/১০ ঘন্টায় হিরণ পয়েন্ট। হিরণ পয়েন্ট থেকে দক্ষিণে ২ ঘন্টায় বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড।