যখন বিমানে করে যাই তখন সিনেমা দেখি: প্রধানমন্ত্রী

0
237

দেশে ভালো চলচ্চিত্র নিমার্ণ হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি দেখেছি দেশে অনেক ভালো চলচ্চিত্র হয়। সব সময় তো সিনেমা দেখার সুযোগ হয় না। যখন বিমানে করে যাই তখন অবশ্যই সিনেমা দেখি। এই একটাই সুযোগ। নিরিবিলি সুযোগ। তা ছাড়া তো সারা দিন ফাইল আর মিটিং নিয়েই ব্যস্ত।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রোববার (৮ জুলাই) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এময় উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমসহ অনেকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। সেই বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। আমরা আর কোনো ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকতে চাই না। কাজেই শিল্পের দিক থেকেও বিশেষ করে চলচ্চিত্র শিল্পের দিক থেকেও আমরা যেন বিশ্ব মানের চলচ্চিত্র তৈরি করে এগিয়ে যাই। তার জন্য যা করা দরকার আমি করে যাব। আমি জানি আমার বাবার হাতে তৈরি করা এই এফডিসি। তাই এই শিল্পের জন্য যা যা করা দরকার আমি আমার পক্ষ থেকে করে দেবো।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও আমাদের যে সংগ্রাম তা তুলে ধরে প্রয়োজন।’ এসময় তিনি চলচ্চিত্র শিল্পীদের কাছে যেতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেন। যারা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন এবং ভবিষ্যতে যারা পাবেন তাদের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
চলচ্চিত্রের গুরুত্ব সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চলচ্চিত্রে অনেক কথা বলা যায়। সমাজ সংস্কারে ভূমিকা রাখা যায়। একটা সময় একটা কারণে এই চলচ্চিত্র দেখা বন্ধ করে দিয়েছিল। এখন কিন্তু আবার চলচ্চিত্রের জগতটা ফিরে আসছে। আমি আশা করি আমাদের চলচ্চিত্র আধুনিক হবে। চলচ্চিত্রের শিল্পীরা আরও আধুনিক হবেন। কারণ, বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল।’
নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের পার্লামেন্টে একটি বিশেষ বিষয় নিয়ে কাজ হয়েছে। আমাদের জাতীয় সংসদে যে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন রয়েছে তার সময়সীমা আরও ২৫ বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটা নারীর ক্ষমতায়নের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা আমাদের জাতীয় সংসদে ১৫টি সংরক্ষিত আসন নির্দিষ্ট করে দিয়ে যান। কালের পরিক্রমায় এখন ৫০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে। আজ সপ্তদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নারীদের জন্য ১০ বছর পর পর এর সময়সীমা বৃদ্ধি করতে হয়। তাই এবার আমি ২৫ বছর বৃদ্ধি করে দিয়েছি। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা অনেক এগিয়ে গেছে। আমাদের তৃণমূল পর্যায় থেকেও নারীরা নির্বাচিত হবার একটা সুযোগ তৈরি দিয়েছিলাম। আজ এই সংশোধনীর জন্য সবাইকে ভোট দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। সে কারণে ভোট দিয়ে আসাতে আজকের অনুষ্ঠানে আসতে একটু দেরি হয়ে গেল।’
একনজরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৬ বিজয়ীরা
আজীবন সম্মাননা: চলচ্চিত্রের দুই কিংবদন্তি ববিতা ও ফারুক (যৌথভাবে)।
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র: অজ্ঞাতনামা, প্রযোজক ফরিদুর রেজা সাগর।
শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র: ঘ্রাণ, প্রযোজক এসএম কামরুল আহসান।
শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র: জন্মসাথী, প্রযোজক মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও একাত্তর মিডিয়া লিমিটেড।
শ্রেষ্ঠ পরিচালক: অমিতাভ রেজা চৌধুরী, আয়নাবাজি।
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্র: চঞ্চল চৌধুরী, আয়নাবাজি।
শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান চরিত্র: তিশা, ছবি-অস্তিত্ব ও কুসুম শিকদার, ছবি-শঙ্খচিল (যৌথভাবে)।
শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-অভিনেতা: আলীরাজ, ছবি-পুড়ে যায় মন ও ফজলুর রহমান বাবু, ছবি-মেয়েটি এখন কোথায় যাবে (যৌথভাবে)
শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-অভিনেত্রী: তানিয়া আহমেদ, কৃষ্ণপক্ষ।
শ্রেষ্ঠ খল-অভিনেতা: শহীদুজ্জামান সেলিম, অজ্ঞাতনামা।
শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী: আনুম রহমান খান সাঁঝবাতি, শঙ্খচিল।
শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক: ইমন সাহা, মেয়েটি এখন কোথায় যাবে।
শ্রেষ্ঠ গায়ক: ওয়াকিল আহমেদ, গান-অমৃত মেঘের বারি, ছবি-দর্পণ বিসর্জন।
শ্রেষ্ঠ গায়িকা: মেহের আফরোজ শাওন, গান-যদি মন কাঁদে, ছবি-কৃষ্ণপক্ষ।
শ্রেষ্ঠ গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার, গান-বিধিরে ও বিধি, ছবি-মেয়েটি এখন কোথায় যাবে।
শ্রেষ্ঠ সুরকার: ইমন সাহা, গান-বিধিরে ও বিধি, ছবি-মেয়েটি এখন কোথায় যাবে।
শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার: তৌকীর আহমেদ, অজ্ঞাতনামা।
শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা: রুবাইয়াত হোসেন, আন্ডার কনস্ট্রাকশন।
শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার: অনম বিশ্বাস ও গাউসুল আলম, আয়নাবাজি।
শ্রেষ্ঠ সম্পাদক: ইকবাল আহসানুল কবির, আয়নাবাজি।
শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক: উত্তম গুহ, শঙ্খচিল।
শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক: রাশেদ জামান, আয়নাবাজি।
শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক: রিপন নাথ, আয়নাবাজি।
শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা: সাত্তার, ছবি-নিয়তি ও ফারজানা সান, ছবি-আয়নাবাজি (যৌথভাবে)।
শ্রেষ্ঠ মেকাপম্যান: মানিক, আন্ডার কনস্ট্রাকশন।
প্রসঙ্গত, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ও সর্বোচ্চ সম্মাননা পদক। ১৯৭৫ সাল থেকে এই পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে প্রথম আজীবন সম্মাননা পুরস্কার চালু করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here