জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট দলে বাংলাদেশের চার নতুন মুখ, স্কোয়াড দেখুন!

0
396
Bangladeshi bowler Mehedi Hasan Miraz,, second right, celebrates the dismissal of Sri Lanka's Upul Tharanga with teammates on day four of their second test cricket match in Colombo, Sri Lanka, Saturday, March 18, 2017. (AP Photo/Eranga Jayawardena)

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের জন্য ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে বিসিবি। বৃহস্পতিবার (২৫ অক্টোবর) মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে অধিনায়ক করে ঘোষিত দলে জায়গা হয়েছে বেশ কয়েকজন নতুন ক্রিকেটারের।

বাংলাদেশের টেস্ট দল:
ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, মুমিনুল হক, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), আরিফুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, আবু জায়েদ রাহী, শফিউল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ মিঠুন, খালেদ আহমেদ এবং নাজমুল ইসলাম অপু।

প্রথম বারের মতো সাদা পোশাকের দলে ডাক পেয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন, আরিফুল হক, নাজমুল ইসলাম অপু এবং সৈয়দ খালেদ আহমেদ।

টেস্ট দলের নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ইনজুরির কারণে দলের মাঠের বাইরে আছেন। একই কারণে নেই দলের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালকেও। আর তাই আগে থেকেই গুঞ্জন ছিল দলের হাল ধরছেন রিয়াদ। শেষ পর্যন্ত সেটাই হল।

ওয়ানডেতে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের কারণে টেস্ট দলে জায়গা করে নিয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। এ ছাড়া ১৩টি টি-টোয়েন্টি ও চারটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে জাতীয় দলে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন নাজমুল ইসলাম অপু। এবার গায়ে সাদা পোশাক চড়ানোর অপেক্ষা।

বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে দারুণ পারফর্ম্যান্সের ফল পেয়েছেন খালেদ আহমেদ। জাতীয় লিগে চলতি সপ্তাহে ঢাকা মেট্রোর বিপক্ষে এক ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছেন ডানহাতি এ পেসার।

অন্যদিকে ছয়টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেললেও টেস্ট ও ওয়ানডেতে এখনও জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামতে পারেননি আরিফুল হক। সেই সুযোগ এবার আসতে পারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।

এদিকে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়লেন ইমরুল কায়েস। তামিম ইকবালকে টপকে এই রেকর্ড গড়লেন ইমরুল। ওয়ানডেতে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে তিন ম্যাচে তাঁর চেয়ে বেশি রান করার রেকর্ড শুধু একজনের

এই সিরিজে তিন ম্যাচ মিলিয়ে ইমরুল সব মিলিয়ে রান করেছেন ৩৪৯। তিন ম্যাচের দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড পাকিস্তানের বাবর আজমের। ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মোট ৩৬০ রান করেছিলেন তিনি। সৌম্য অমন উগ্রমূর্তি না ধরলে কিংবা জিম্বাবুয়ে তিনশোর্ধ্ব রান করলে ইমরুল হয়তো ওয়ানডের এই রেকর্ড নতুন করে লেখাতেন। যেভাবে ব্যাট করছিলেন তাতে এই সম্ভাবনার বিপক্ষে বাজি ধরার লোক খুঁজে পেতে কষ্ট হবে।

কী দুর্দান্ত ব্যাটিংটাই না করছেন ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকার। জিম্বাবুয়ের ২৮৬ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই কাইল জারভিসের বলে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েছিলেন লিটন দাস। মুহূর্তেই মনে ‘কু’ ডাক শুরু হয়েছিল চট্টগ্রামের  গ্যালারি ভর্তি করা দর্শকদের। না জানি কী দুঃখ আছে আজ কপালে! কিন্তু ইমরুল কায়েসের সঙ্গে জুটি বেঁধে সব শঙ্কা কিছুক্ষণের মধ্যেই পেছনে ফেললেন সৌম্য সরকার।

ইমরুলের জন্য তা নিশ্চিতভাবেই আনন্দের। অন্তত নিন্দুকের সংখ্যা তো কমছে!

অনেকে বলেন দুর্ভাগা। অনেক আবার ঠোঁট ওলটান। না, ছেলেটা সেভাবে প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে পারে না। দলে তাই আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই ধরে ফেলেছেন সেই ছেলেটি কে। তাঁর নাম বলাটা শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। কারণ বাংলাদেশ ক্রিকেট সম্পর্কে তিল পরিমাণ খোঁজ-খবর রাখা ভক্তটি পর্যন্ত জানেন, লোকে মুখে মুখে ফেরা সেই চিরায়ত দুর্ভাগা একজনই—ইমরুল কায়েস।

সামর্থ্যের প্রমাণ ইমরুল এর আগেও অনেকবারই দিয়েছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইমরুলের ব্যাটে যেন রানের ফল্গুধারা বইছে। এশিয়া কাপে দেশ থেকে হুট করে উড়াল দিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৭২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। এরপর দুটি ইনিংসে কথা বলেনি ইমরুলের ব্যাট। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সিরিজে ইমরুলের ব্যাট শুধু কথাই বলছে না। এর সঙ্গে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটিও নিজের করে নিয়েছেন ইমরুল।

তামিম এখানেই ইমরুলের পেছনে পড়লেন। ২৫তম ওভারে এনগারাভার দ্বিতীয় বলে ২টি রান নিয়ে তামিমকে পেছনে ফেললেন এই ওপেনার। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৩১২ রান করেছিলেন তামিম। সেই সিরিজে তামিমের দুটি সেঞ্চুরি আর এক ফিফটিতে ধবলধোলাই হয়েছিল পাকিস্তান। আর তামিমও তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছিলেন। ইমরুল আজ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৫তম ওভারের সেই দ্বিতীয় বলে ‘ডাবলস’ নিয়ে তামিমের রেকর্ডটি নতুন করে লেখালেন।

শুধুই রেকর্ডটা নতুন করে লেখালেন? নাকি ইমরুল নিজেই নিজেকে নতুন করে চেনালেন? দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকা সেই ছেলেটাই এখন এতটা ধারাবাহিক! হোক না প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে, কিংবা যে কেউ—টানা রানের মধ্যে থাকা চাট্টিখানি কথা নয়। ইমরুল এই কঠিন কাজটাই ‘জলবৎ তরলং’ বানিয়ে ফেললেন এই সিরিজে। সেটিও ওপেনিংয়ে দলের ‘অটোমেটিক চয়েস’ তামিম ইকবালের অভাব পুষিয়ে দিয়ে! এই সিরিজে কেউ তামিমের অভাব টের পেয়েছেন? মনে হয় না।

এই সিরিজের প্রথম ম্যাচে দলের বিপর্যয়ে ১৪৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছিলেন ইমরুল। সেটি অনেকের চোখেই চাপের মধ্যে বাংলাদেশের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা স্ট্রোক-প্লে সমৃদ্ধ ইনিংস। পরের ম্যাচেই ভোল পাল্টেছেন। ২৪৬ রান তাড়া করতে নেমে খেলেছেন ঠান্ডা মাথার ৯০ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। আর আজ তো এক কাঠি সরেস। ২৮৭ রানের লক্ষ্যও যেন ছেলের হাতের মোয়া! দলের জয় থেকে ১৩ রান দূরত্বে যখন আউট হচ্ছেন ইমরুল, তখনো ম্যাচের বাকি ১০ ওভার! ১১২ বলে ১০টা চার ও ২ ছক্কায় ১১৫ রান করে তবেই ফিরেছেন এই ওপেনার।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আবারও সেঞ্চুরি হাঁকালেন ওপেনার ইমরুল কায়েস। তিন ম্যাচের মধ্যে দুটি সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন এ ওপেনার। প্রথম ম্যাচে ঢাকায় সেঞ্চুরি (১৪৪) করেন তিনি। বুধবার চট্টগ্রামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মাত্র ১০ রানের জন্য শতরান বঞ্চিত হন তিনি।

আজ শুক্রবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের শেষ খেলায় অনবদ্য সেঞ্চুরি করে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইট ওয়াশ করার ভূমিকা পালন করেন তিনি।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৭৬তম ম্যাচে ক্যারিয়ারে এটি ইমরুলের চতুর্থ সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতে তার ১৬টি ফিফটি রয়েছে।

ওয়ানডে ক্রিকেটে পাশাপাশি টেস্টেও সফল কায়েস। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ৩৪ ম্যাচ খেলে তিনটি সেঞ্চুরি এবং ৪টি ফিফটির সাহায্যে ১ হাজার ৬৭৯ রান করেছেন ইমরুল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here