মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে হত্যা করতেই ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞ

0
260

দেশইনফো প্রতিবেদক: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও লাখো শহীদের রক্তের ঋণ শোধ করতে, আরো নিষ্ঠার সাথে কাজ করার জন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের বার বার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আসলে আমাদের বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার মাধ্যমেই তাঁর এবং ৩০ লাখ শহীদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে। একাত্তরের আগে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে বাঙালির কোনো অধিকার ছিলো না। বঙ্গবন্ধু সব সময় বাঙালির অধিকার আদায়ের কথা বলেছেন। সে কারণে তাকে নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছে, তাঁকে ফাঁসি পর্যন্ত দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেয়ার পরও তিনি সব সময় ন্যায্য অধিকারের কথা বলেছেন।

১৯৫৬ সালের ৯ জানুয়ারি পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় কর্মক্ষেত্রে পূর্ববাংলা এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জাতিগত বৈষম্যের যে চিত্র উপস্থাপিত হয় তা প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে তুলে ধরে বলেন- সে সময় পাকিস্তান সরকারে সচিবদের পদ ছিল ২২টি। যার সবকটির পদাধিকারি ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানীরা।

যুগ্ম সচিব পদে পশ্চিম পাকিস্তানের ছিল ৪২ জন এবং বাঙালিদের ৮ জন। উপসচিব ৬৯টি পদে আসীন ছিল পশ্চিম পাতিস্তানীরা অন্যদিকে ২৩ জন ছিলেন বাঙালি। সেকশন অফিসার- পশ্চিম পাকিস্তানীরা ছিল ৩২৫ জন আর বাঙালিরা ৫০ জন। প্রথম শ্রেনীর গেজেটেড অফিসার-পশ্চিম পাকিস্তানের ছিল ৩৭৬৯ জন এবং বাঙালি ৮১১ জন। সিনিয়র গেজেটেড অফিসার-পশ্চিম পাকিস্তানী ৬৯২ জন আর বাঙালি ৪২ জন।

সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে বৈষম্য ছিল আরও ভয়াবহ ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩টি জেনারেল পদ, ২০টি মেজর জেনারেলের পদ এবং ৩৪টি ব্রিগেডিয়ারের পদের সবকটিতেই পশ্চিম পাকিস্তানীরা আসীন ছিলেন। কর্নেল পদে- পশ্চিম পাকিস্তানী ছিল ৪৯ জন এবং বাঙালি মাত্র একজন। লে. কর্নেল পদে- পশ্চিম পাকিস্তানী ১৯৮ জন আর বাঙালি ২ জন। মেজর পদে- পশ্চিম পাকিস্তানী ৫৯০ জন আর বাঙালি ছিলেন ১০ জন।

নৌবাহিনীর ৬শ’ পদের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানী ৫৯৩ জন এবং বাঙালি ছিলেন ৭ জন। অন্যদিকে বিমানবাহিনীর ৬৪০টি পদের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানীরা ৬শ’ পদে আর বাঙালিরা ৪০টি পদে আসীন ছিলেন।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। যুদ্ধজয়ের পর মাত্র তিন মাসের মধ্যে ভারতের সৈন্য ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ সময় তিনি বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে সম্মিলিত যুদ্ধজয়ের পর মিত্রবাহিনী দেশে থেকে যাওয়ার নজীর উল্লেখ করেন।

বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতা এনেই দেননি। মানুষের মুক্তির জন্য ব্যাপক কর্মসূচিও হাতে নিয়েছেন। যুদ্ধের পর এ দেশে রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট ছিলো না। ছিল না অবকাঠামোগত কিছুই। জাতির পিতা সেই বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলেছেন। আমাদেরকে একটি সংবিধান দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায় এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য করে গেছেন বাংলাদেশকে।

মূলত যেসব আন্তর্জাতিক শক্তি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলো, পরে তাদের ষড়যন্ত্রেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। ফজিলাতুন নেছা, শেখ কামাল, জামালসহ ছোট্ট রাসেলকেও তারা হত্যা করেছিলো।

বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরী দিয়ে পুরস্কৃত করা এবং দেশের কারাগারে আটক বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে তাদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেন জিয়াউর রহমান। এক ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে তিনি এ কর্মটি সম্পাদন করেন।

পচাত্তরের ১৫ আগষ্টের বিয়োগান্তক অধ্যায়। আমাদের এই কষ্ট, দুঃখ, ব্যথা-বেদনা ভুলেও দেশের জন্য, মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করাই আমাদের দায়িত্ব। আমরা বিজয়ী জাতি, বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে যেন মাথা উঁচু করে চলাই আমাদের এক ও অভিন্ন লক্ষ্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here