শিহাব শাহীন: ১৯৭১ সালের ৩০ অগাষ্ট ভোরবেলা পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আলতাফ মাহমুদের পুরো বাড়িটি ঘিরে ফেলে। তারপর তাঁর ঘরে ঢুকে জানতে চায়, ‘কে আলতাফ মাহমুদ?’ আলতাফ মাহমুদ জবাব দিলেন, ‘আমি’। এরপর পাক হানাদাররা তাঁর বাড়ীর আঙিনায় কাঁঠাল গাছের নিচে ট্রাঙ্কের ভিতর ভরে লুকিয়ে রাখা মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রশস্ত্র গোলাবারুদ তাঁকে দিয়ে মাটি খুঁড়ে বের করে এবং যাওয়ার সময় আস্ত্রশস্ত্রের সাথে তাঁকেও সঙ্গে করে নিয়ে যায়। রমনা থানায় নিয়ে বন্দী অবস্থায় তাঁকে নির্মম নির্যাতন করা হয়।
পরবর্তীতে ৩ সেপ্টেম্বর পাকিরা চোখ বেঁধে তাঁকে নাখালপাড়ারর এমপি হোস্টেলে নিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন ও নিপীড়ন চালায়। তারপর থেকে পরিবারের সদস্যসহ কেউ আর তাঁর খোঁজ পাননি, তিনিও আর ফিরে আসেন নি।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারীর ভাষা আন্দোলনের প্রক্ষাপটে শহীদের স্মরনে আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো শিরোনামের কালজয়ী অমর সঙ্গীতে ১৯৬৯ সালে তাঁর পুনরায় সুরারোপের মাধ্যমে চিরদিনের জন্য আমাদের মাতৃভাষার ইতিহাসের অংশ হয়ে যান আলতাফ মাহমুদ। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান তাঁর ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিতে এই সুরটি ব্যবহার করেন। উল্লেখ্য, বিশিষ্ট সুরকার আব্দুল লতিফ এই গানটিতে প্রথম সুর করেন।
আর ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় যোদ্ধা হিসাবে অংশ নিয়ে সেই সাথে তাঁর ঢাকার রাজারবাগের আউটার সার্কুলার রোডের বাসায় মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়ও নিরাপত্তা দিয়ে এবং তাঁদের শক্তি ও সাহস যুগিয়ে জীবন উৎসর্গ করার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের অনিবার্য অংশ হয়ে যান আমাদের সাংস্কৃতির জগতের অন্যতম নক্ষত্র ও ২১ ফেব্রুয়ারীর কালজয়ী অমর সঙ্গীতের সুরকার শহীদ আলতাফ মাহমুদ।