সারাদেশে আবারও নতুন করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. রুহুল কবির রিজভী।
এসময় তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিনে প্রায় ৪ শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সরকার আতঙ্কে ভুগছে। গুম. খুন, বিচারবর্হিভূত হত্যা, দুর্নীতি দুঃশাসনের কাদায় আটকে পড়ে এখন বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তারের মাধ্যমে মরণ কামড় দিচ্ছে। পুরোনো মামলা চালু করা এবং নাশকতার অভিযোগ এনে দেশব্যাপি মামলা জড়ানো হয়েছে নেতা-কর্মীদের।’
সরকারকে হুমকি দিয়ে রিজভী বলেন, ‘সরকার পতনের মহালগ্ন এসে গেছে। আর কোন উপায় নেই। সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তেই হবে।’ ‘পরশু দিনের প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে দাপট থাকলেও চেহারায় ছিল অন্যমনস্কতা ও দুঃশ্চিন্তার ছাপ। তবে আমরা সুস্পষ্টভাবে আবার জানিয়ে রাখি, দাপট দেখিয়ে গণদাবী উপেক্ষা করলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।’
ছাত্রদলের সাবেক এই নেতা বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর একটা সমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশে যে দমন-পীড়ন শুরু করেছে সরকার তার কারণ কারো বুঝতে বাকী থাকার কথা না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রীদের সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘দেশের ভোটারদের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ভিত্তিত্বে ভাগ করে ফায়দা লুটার অভিনব চক্রান্ত শুরু করেছে আওয়ামী মন্ত্রী ও নেতারা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘জাতীয় ঐক্যের নামে সাম্প্রদায়িক চক্রান্ত হচ্ছে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।’ আকস্মিকভাবে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের আওয়ামী নেতার বক্তব্য অশুভ চক্রান্তের ইঙ্গিতবাহী। আবহমান বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিনষ্টকরে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করতে নেমে পড়েছেন ওবায়দুল কাদের সাহেবরা। জনসমাজে সাম্প্রদায়িক ঐক্য যখন অটুটবন্ধনে গ্রথিত, তখন ওবায়দুল কাদের সাহেবের আচমকা সাম্প্রদায়িকতা টেনে আনা দেশের মানুষকে পরিকল্পিত বিভাজনের দিকে ঠেলে দেওয়ার এক গভীর চক্রান্ত করছেন। শান্তি ও সহবস্থানের মধ্য দিয়ে ধর্ম, বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে জণগনের নির্বিঘ্নে বসবাসের ওপর ওবায়দুল কাদের বক্তব্য মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার শামিল। ক্ষমতার মোহে মশগুল হয়ে আওয়ামী নেতারা মনের বিকারে প্রলাপ বকতে গিয়ে এখন সাম্প্রদায়িকতাকে সামনে নিয়ে আসছে। তারা ক্ষমতায় থাকার জন্য রাষ্ট্র সমাজের স্থিতিকে ভেঙ্গে ফেলতে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর মন্দির, গীর্জা ও প্যাগোডায় সবচেয়ে বেশী আক্রমণ হয়েছে দাবি করে বিএনপির এই মুখ্যপাত্র বলেন, ‘তাঁর আমলেই সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত ও নিরাপত্তাহীন। তাদের ব্যক্তিগত, সাংগঠনিক ও ধর্মীয় সম্পত্তির ওপরও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোকেরা হামলা করেছে। আওয়ামী লীগের লোকেরাই তাদের ঘর-বাড়ি জায়গা জমি দখল করেছে, আগুন দিয়ে মন্দিরসহ তাদের উপাসনালয় জ্বালিয়ে দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাহেব বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে এক লাখ মানুষকে হত্যা করা হবে। এ তথ্য কোন পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে সংগ্রহ করেছেন জনাব তোফায়েল আহমেদ-এটি জানতে জানতে চাই। এ তথ্যের উৎস কি হাসানুল হক ইনু, নাকি সজিব ওয়াজেদ জয়? এক লাখ লোক মারা যাওয়ার আশংকা করছেন কেনো? আপনাদের কোন অপকর্মের কারণে আপনাদের এ আশঙ্কা করছেন?
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, ‘বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুস সালাম আজাদ, জাসাসের সাধারণ সম্পাদক ও চিত্রনায়ক হেলাল খান প্রমুখ।