![]()

৭৮ হাজারেরও বেশি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে দিতে সারা দেশে জেরবার অবস্থা বিএনপির প্রায় ১৫ লাখ নেতাকর্মীর। মামলা-হামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে বিএনপি আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচিতে রীতিমতো দলীয় নেতাকর্মীর উপস্থিতিই কমে গেছে। মামলার ও গ্রেপ্তারের ভয় সারাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের।
গত রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় দলীয় কর্মীদের আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতির আহ্বান জানানোর পর সরকারবিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে গত সোমবার একটি মামলা দিয়েছে পুলিশ। যেটা নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে।
মামলার বিবরণী অনুযায়ী, গত রোববার রাত সোয়া ৮টার দিকে মগবাজার এলাকায় বিএনপি সমর্থকরা হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। তারা হত্যার উদ্দেশে পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায় বলেও উল্লেখ করেছে বাদী হাতিরঝিল থানার এসআই শরিফ। অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা যানবাহন ভাঙচুর করে এবং পুলিশের কাজে বাধা দেয়। মির্জা ফখরুল ছাড়াও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদ, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ড. মঈন খান ও রুহুল কবির রিজভী, আমান উল্লাহ আমান এবং রুহুল কুদ্দুস তালুকদারসহ ৪৫ নেতাকর্মীকে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগে পুলিশ বলছে, রোববারের সমাবেশে বিএনপি নেতারা সরকারবিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার পর ফেরার পথে দলের সমর্থকরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। অথচ মামলার আসামি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। রুহুল কবির রিজভী ওইদিনের সমাবেশে যোগদানই করেননি।
পুলিশ জানিয়েছে, বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশেই তারা মগবাজার এলাকায় ভাঙচুর হাত বোমা বিস্ফোরণের মতো অপরাধ করে। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তারকৃত কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিষয়টি জানতে পারে। অথচ স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, রোববার রাতে মগবাজার এলাকায় ওই ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। উপরন্তু সাদা পোশাকের পুলিশ ওইদিন বিকালে কয়েকজন পথচারীকে বিনা উসকানিতে ধরে নিয়ে গেছে।
জানা গেছে, রমনা, শাহবাগ, মতিঝিল, পল্টন, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, লালবাগ এবং ধানমন্ডি থানাতেও রোববার বিকাল ও সোমবার সকালের মধ্যে নামে-বেনামে বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অন্তত ৯টি মামলা করেছে পুলিশ। সবার বিরুদ্ধেই একই অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, ফখরুলসহ বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়েই তারা অপরাধে জড়িয়েছেন। এসব মামলায় কুমিল্লা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও এমপি প্রার্থী মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরফুদ্দিন, ঢাকা ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রাশেদ বিন সোলায়মান, ভালুকা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন এবং ঢাকার ৪১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি সামছুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পুলিশের দাবি ঘটনাস্থল থেকেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে একের পর এক মামলা দেওয়ার হিড়িক পড়েছে। বেশিরভাগ মামলাই দেওয়া হচ্ছে আজগুবি ঘটনার ওপর ভিত্তি করে। ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, পুলিশকে মারধর করার মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি অথচ মামলার এজাহারে এসব কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
এসব মামলার আসামিদের মধ্যে মৃত ব্যক্তি, ৮৬ বছরের প্যারালাইসড রোগী, এমনকি হজ ও চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে থাকা ব্যক্তিও রয়েছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, ঢাকা মহানগর বিএনপি, অঙ্গসংগঠনের কমিটিসহ মহানগর, জেলা-উপজেলা এমনকি ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটি ধরে মামলা দিচ্ছে পুলিশ।