গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়নে “জায়গা আছে ঘর নাই প্রকল্পে” ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারী এ প্রকল্পে বিনামূল্যে ঘর দেবার কথা থাকলেও প্রতিটি উপকার ভোগীদের কাছ থেকে ২০/২৫ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের বিরুদ্ধে। কোন কোন ইউনিয়নে যাদের সামর্থ রয়েছে তাদেরকেও এই ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, এমন অভিযোগও রয়েছে।সরকারী এ প্রকল্পে বিনামূল্যে এসব ঘর দেবার কথা রযেছে। অবশ্য সুর্নিদৃষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবার কথা বলেছেন জেলা প্রশাসক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা ও জানাগেছে, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার একটি ইউনিয়ন বৌলতলী। এ ইউনিয়নে “জায়গা আছে ঘর নাই” প্রকল্পের আওতায় ১৩টি ঘরের বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর এ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার কামনা বিশ্বাস। “জায়গা আছে ঘর নাই প্রকল্পের” ঘর দেবার কথা বলে টাকা নিয়েছেন এমন প্রশ্নে টাকা নেবার কথা খুব সহজেই স্বীকার করলেন তিনি। কার কাছ থেকে কত টাকা নিয়েছেন তা বলে দেওয়ার মম্যঅমে বোঝা যায় “জায়গা আছে ঘর নাই” প্রকল্পে দূর্নীতি হয়েছে। এমনকি ঘর দেবার কথা বলেও দরিদ্র লোকদের কাছ থেকে নিয়েছেন টাকা।
আরো জানাগেছে, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প “যাদের জায়গা আছে, ঘর নাই” প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জে ১৫৮১ ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩৩২টি, কাশিয়ানী উপজেলায় ৪৭১টি, কোটালীপাড়ায় ৩০৭টি, মুকসুদপুর উপজেলায় ৩৫৮টি ও টুঙ্গিপাড়ায় ১১৩টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি ঘরে সরকার একলাখ টাকা বরাদ্দ করেছেন।
এই প্রকল্পে অনুমোদিত ঘরের তালিকা উপজেলা পর্যায়ে আসার পর ইউপি চেয়ারম্যানরা সংশ্লিস্ট উপজেলা থেকে নিজ নিজ ইউনিয়নের তালিকা সংগ্রহ করে কপি দিচ্ছেন মেম্বারদের কাছে। এই সুযোগে মেম্বার ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বাররা তালিকাভুক্ত উপকারভোগীদের বাড়িতে গিয়ে তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঘর পাবার সংবাদ দিয়ে ঘর পেতে হলে ২০ থেকে ২৫ হাজার করে টাকা দেওয়ার বলছেন। আর টাকা না দিলে ঘর পাওয়া যাবে না বলে আসছেন।
উপকারভোগীরা তাদের কথা বিশ্বাস করে সুদে এনে বা ধারদেনা করে ঘর বাতিল হওয়ার ভয়ে টাকা দিচ্ছেন মেম্বারদের কাছে। মেম্বারগন এই টাকার একটি অংশ দিচ্ছেন সংশ্লিস্ট চেয়ারম্যারদের দেয়ায় উপকারভোগী কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এমনি যে টাকা নেয়ায় কোন লুকোছাপা নেই।
আবার উপকারভোগী অনেকে টাকা না দিতে পারলে মেম্বাররাই অন্যের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ঘর তুলে দিচ্ছেন। এমনকি তালিকায় নাম দেয়া রয়েছে, তদ্বির করে আগামীতে ঘর এনে দেয়া হবে এমন আশ্বাস দিয়েও অগ্রিম টাকা নেয়া হচ্ছে প্রায় ইউনিয়নেই। গোপালগঞ্জ জেলার পাঁচ উপজেলার ৬৮ ইউনিয়নের সর্বত্রই এই অবস্থা বিরাজ করার অভিযোগ উঠেছে। তবে ঘর বরাদ্দ বাতিল হবার ভয়ে দরিদ্র এসব মানুষ মুখ খুলতে চান না। তবে টাকা দেয়ার কথা অনেকেই স্বীকার করেছেন।
বৌলতলী এলাকার উপকারভোগী গীতা বিশ্বাস, তন্দ্রা বিশ্বাস ও কাঞ্চন বিশ্বাস জানান, ঘর দেবার কথা বলে জনপ্রতিনিধিরা আমাদের কাছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দাবী করেন। এ টাকা দিতে না পারলে ঘর দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়। পরে আমরা ধার-দেনা ও ঋণ নিয়ে তাদেরকে টাকা দিই। সদর উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নেই টাকা নিয়ে শুধু দরিদ্রদেরকেই নয়, অনেক অবস্থা সম্পন্নদেরকেও এই প্রকল্পের আওতায় ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
তালিকায় নাম নেই অথচ ঘর পেয়েছে সেই ঝর্না বিশ্বাস বলেন, আমার নামে কোন ঘর বরাদ্দ ছিল না। কিন্তু বৌলতলী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার কামনা বিশ্বাস আমাকে ঘরদিবে বলে ২৫ হাজার টাকা দাবী করে। আমিও তাতে ২৫ হাজার টাকা দেই। পরে ঘরেটি আমার জমিতে বানানো হয়। কিন্তু পরবর্তীতে আমার সেই টাকা ফেরত দেওয়া হয়।
অভিযুক্ত গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলতলী ইউনিয়নের সংরক্ষিত ২নং ওয়ার্ড মেম্বার কামনা বিশ্বাস টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের অফিসে টাকা দিতে হয়েছে যে কারনে উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা নিতে হয়েছে।
যে বরাদ্দ পাইনি তাকেও টাকার বিনিময়ে ঘর দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, এটি যাকে দয়া হয়েছে সে উপকারভোগীদের আত্মীয়। তার কাছ থেকে টাকা ২৫ হাজার টাকা নিলেও তা ফেরত দিয়ে দিয়েছি।
সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিরান হোসেন মিয়া বলেন, আমি বিভিন্ন ইউনিয়নে এই প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ শুনেছি। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
সুনিদৃষ্ট অভিযোগ পেলে সংশ্রিষ্ট জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি কল্যানমুখী প্রকল্প গ্রহন করেছেন। যারা এ প্রকল্পটি নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।