নোয়াখালী বিভাগ হলে নোয়াখালীতে মন্ত্রী নির্বাচন করবো: হিরো আলম

0
436

বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ১৮৭৬ সালে সৃষ্ট অতি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জেলার নাম নোয়াখালী। এ জেলার প্রথম পত্তন ১৮২১ সালে।

তৎকালীন বৃটিশ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ ১৮২২ সালে নোয়াখালীর জন্য একটি জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেটের পদ সৃষ্টি করে। একজন স্বতন্ত্র কালেকটর নিযুক্ত হয় ১৮৩০ সালে। জেলা হিসেবে ১৮৭৬ সালে পূর্ণ মর্যাদা লাভ করে ঐতিহ্যবাহী নোয়াখালী জেলা ।

সুধারাম মজুমদার নামে একজন ভুম্যধিকারী ব্যক্তির দানকৃত স্থানে শহর স্থাপিত হওয়ায় এ শহর সুধারাম নামে পরিচিতি লাভ করে। সুধারাম মজুমদারের ছেলে বগলা মজুদার হাইস্কুলের গণ্ডি না টপকালেও সে সময় ডেপুটি ম্যজিস্ট্রেটের পদ অলংকিত করেছেন। কারণ তখনকার ইংরেজ সরকারের তুষ্টি সাধন করতে সক্ষম বলে প্রভাবশালী ব্যাক্তির সন্তানই এসব পদে অধিষ্ঠিত হত। আর তখনকার সিনিয়র ডেপুটি কালেকটর কবি নবীনচন্দ্র সেন “আমার জীবন ” শীর্ষক স্মৃতি কথায় বগলা বাবু সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন “তেলেপোকাও পাখি-বগলা বাবুও হাকিম।

এক সময়ের সমুদ্রতীর থেকে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থিত নারিকেল কুঞ্জ ও ঝাউগাছ শোভিত মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যে ভরপুর জেলাটি দেখতে বিভিন্ন দেশের পর্যটক আসতেন এ জেলায়। লাল ইটের কাকর বিছানো রাস্তায় চলতো ঘোড়ার গাড়ী। জজ সাহেব কোর্টে যেতেন জুড়িগাড়ী চড়ে, আর ঘোড়ায় চড়ে পথ চলতো পুলিশ, ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট চলাফেরা করতেন সাইকেলে।

এ জেলায় জন্মেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী হাজারো বীর মুক্তিযোদ্ধা। শাহাদাত বরণকারী সেনানী বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনসহ অনেক বীর সৈনিক। জন্মেছে আধ্যাত্মিক সুফিসাধক, শিক্ষক, কবি, বুদ্বিজীবী, সাংবাদিক, যারা নিজ কর্মে কীর্তিমান। রয়েছে সামাজিক সাংস্কৃতিক অনেক ঐতিহ্য। প্রাচীন শিল্পস্থাপত্বের অনেক নিদর্শন । রয়েছে রাজনৈতিক সংগ্রামী ইতিহাস। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিচরণ করছে নোয়াখালীর হাজারো মায়ের সন্তান। আছে শিক্ষা সংস্কৃতির উচ্চধারায় এবং নিজ কর্মগুণে সরকারি অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে অলংকিত ব্যক্তিবর্গ। এ জেলায় আছে শিল্প কারখানা, সরকারি-বেসরকারি কর্মসংস্থানের অনেক সুযোগ। চরাঞ্চলের সোনার ফসল ধান, শাক-সবজি, সোয়াবিন, তরমুজ।

অপার সম্ভাবনার হাতছানী নোয়াখালীকে বিভাগ করা হলে দেশের উন্নয়নে এ জেলা হবে ইকোনোমিক জোন। এ জেলা থেকে দেশের সর্বত্র যাতায়াত করা যায়। আছে নৌ-পথ সুবিধা। নৌ-পথে পণ্য আমদানি-রফতানি মাধ্যমে বিশ্বের সাথে ব্যবসার সহজ এবং লাভজনক সুযোগ । যা দেশ উন্নয়নে বড় ভুমিকা রাখবে। আছে পর্যটন শিল্পের হাতছানী। সমুদ্র বুকে জেগে উঠা দমার চর যেখানে হাজারো একর জমি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পর্যটন শিল্প গড়ে যেখান থেকে প্রতি বছর হাজার কোটি মিলিয়ন বৈদেশিক অর্থ-উপার্জন সক্ষম। সমুদ্রকন্যা নিঝুমদ্বীপে আছে বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণে সুবিশাল বনভূমি সেথায় আছে বন মায়াবিনী ৩০ হাজার চিত্রল হরিণ, আছে কেউড়া, শালসহ শত প্রজাতির প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর অরণ্য।

অথচ বৃহত্তর জেলা সিলেট ও বরিশাল এবং রংপুর বিভাগ হলেও প্রাচীন এই জেলাটি এখনও বিভাগ হয়নি। তাই বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রায় এক কোটি মানুষের প্রাণের দাবি নোয়াখালী জেলাকে বিভাগ ঘোষণা করা।

প্রাচীন সমতট অঞ্চল যা বর্তমানে বৃহত্তর কুমিল্লা নামে পরিচিতি । এই বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা ও কুমিল্লা জেলাসহ ফেনী, লক্ষ্মীপুর চাঁদপুর, ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এই ছয় জেলা নিয়ে নোয়াখালী বিভাগ গঠন করলে সেটি আয়তনে ও জনসংখ্যায় অন্য বিভাগের তুলনায় বড় হবে।

বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা বিশেষত চাঁদপুর, বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার মধ্যখানে অবস্থিত বলে নোয়াখালী জেলাকে বিভাগ করা হলে এই বিভাগের আয়তন হবে ১৩.৩০২ বর্গ কিলোমিটার, যা আয়তনে সিলেট ও বরিশাল বিভাগের চেয়েও বড় হবে। এই ছয় জেলা নিয়ে নোয়াখালী  বিভাগ গঠন হলে এ প্রস্তাবিত বিভাগের জনসংখ্যা হবে প্রায় পৌনে দুই কোটি, যা সিলেটে ও বরিশাল বিভাগের জনসংখ্যার চেয়ে দুই গুণের বেশি।

তা ছাড়া ১৮৮৭ সালে যখন  চট্রগ্রাম বিভাগ গঠিত হয় তখন বর্তমান বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ২ কোটি ৯০ লাখ । আর এখন শুধু বৃহত্তর নোয়াখালী ও বৃহত্তর কুমিল্লার জনসংখ্যাই হচ্ছে পৌনে দুই কোটি। সুতারাং এ বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে বিভাগীয় সেবা দিতে বৃহত্তর

নোয়াখালী ও বৃহত্তর কুমিল্লা কে নিয়ে নোয়াখালী বিভাগ গঠন অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ আদম শুমারী ২০১১ অনুসারে বরিশাল বিভাগের জনসংখ্যা মাত্র ৮৪ লক্ষ। অথচ বৃহত্তর নোয়াখালীতে হচ্ছে ১ কোটি ৭০ লক্ষ, যা বরিশাল বিভাগের জনসংখ্যার দ্বিগুণ । যেখানে মাত্র চারটি জেলা নিয়ে সিলেট বিভাগ করা হয়েছে। সেখানে ছয়টি জেলা নিয়ে নোয়াখালী বিভাগ গঠন অত্যন্ত  যুক্তিসঙ্গত এবং সময়োপযোগী দাবি বটে।

সুতরাং জনসংখ্যা ও আয়তন উভয় দিক বিচারে বৃহত্তর কুমিল্লাকে নিয়ে নোয়াখালী বিভাগ গঠন অত্যন্ত যুক্তি সংঙ্গত দাবী । আর তাতে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে অত্র অঞ্চলের প্রায় দুই কোটি মানুষ খুব সহজে বিভাগীয় পর্যায়ে সেবা পেতে সক্ষম হবে । নোয়াখালী ফেনী, লক্ষ্মীপুর ,চাঁদপুর , কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এই ছয় জেলার মানুষের বর্তমানে বিভাগীয় নানা কাজ সারতে এবং সময় ও অর্থ নষ্ট করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক ভোগান্তি সহ্য করে চট্রগ্রাম যেতে হয়। যা নিছক হয়রানি বটে।

উল্লিখিত ছয় জেলাকে নিয়ে নোয়াখালীকে বিভাগ করা হলে এই ছয় জেলার দুই কোটি মানুষ চাকরির পরীক্ষাসহ বিভাগীয় অন্যান্য কাজে বহু কষ্ট ও সময় নষ্ট করে অর্থের অপচয় ঘটিয়ে চট্রগ্রাম যেতে হবে না।

বাংলাদেশ কে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে দরকার প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে জনগনের দোর গোড়ায় সরকারি-বেসরকারি তথ্য ও সেবা পৌঁছানোর প্রক্রিয়া বা মাধ্যম সৃষ্টি করা। এ মাধ্যম দিয়ে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে সুষম উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। এবং তৃণমূল জনগনের ক্ষমতায়ন ঘটে আর এই অঞ্চলের তৃণমূল মানুষের  ক্ষমতায়নের জন্য এই  বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের জনগনের বর্তমান সময়ের দাবী হচ্ছে প্রস্তাবিত নোয়াখালী বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here