ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার ঘটনায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া চার্জশিট আমলে নিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ আদেশ দেন। মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২০ জুন দিন ধার্য করা হয়েছে।
আদালত নুসরাত হত্যায় গ্রেফতার ২১ জনের মধ্যে পাঁচজনকে অব্যাহতি দিয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে, তারা হলেন- সোনাগাজী সিনিয়র মাদ্রাসার বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলম (৫০), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন (১৯), হাফেজ আবদুল কাদের (২৫), আফছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মণি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আবদুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), মোহাম্মদ শমীম (২০) ও মহিউদ্দিন শাকিল (২০)।
জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) প্রিয়রঞ্জণ দত্ত জানান, কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার ২১ আসামিকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ১৬ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে দেয়া চার্জশিট আমলে নেন। আগামী ২০ জুন চার্জ গঠনের দিন ধার্য করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, নুসরাত হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন, কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, প্রভাষক আবসার উদ্দিন, মো. শামিম, ইফতেখার উদ্দিন, নূর উদ্দিন জামিন চাইলে আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
অন্যদিকে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারের পর চার্জশিটে না না থাকায় খালাস পাওয়া ৫ জন হলেন- নুসরাতের সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন ও শাহিদুল ইসলাম।
এর আগে ২৮ মে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা। সেদিন অভিযোগপত্রসহ মামলার কাগজপত্র বিচারক ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে পাঠিয়ে দেন।
সবশেষ গত ৩০ মে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে আসামিদের হাজির করা হলেও বিচারক সেদিন অভিযোগপত্র গ্রহণের ওপর শুনানি না করে ১০ জুন শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ী আজ অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি হলো।
মামলার বাদীপক্ষে ছিলেন- অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু এবং আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন নান্নু ও তাজুল ইসলামসহ কয়েকজন আইনজীবী।
প্রসঙ্গত, গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অগ্নিদগ্ধ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। তার মৃত্যুতে দেশজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। এর আগে ২৭ মার্চ নুসরাতকে যৌন হয়রানির অভিযোগে গ্রেফতার হন ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সিরাজদৌল্লা। এর জের ধরে ৬ এপ্রিল নুসরাতকে পরীক্ষার হল থেকে ডেকে ছাদে নিয়ে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন সিরাজের অনুসারীরা।
এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ১২ এপ্রিল মামলাটি পিবিআইতে পাঠানো হয়। পুলিশ ও পিবিআই এ ঘটনায় ২১ জনকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে ১২ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। গত ২৮ মে আদালতে ১৬ জনের ফাঁসির আবেদন করে অভিযোগপত্র দেয় পিবিআই।