ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কে জনগণ

0
359

ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশা এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। শুরুতে রাজধানীকেন্দ্রিক হলেও চলতি মাসের শুরু থেকে তা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। প্রথমে রাজধানীর আশপাশের জেলা ও সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গু ছড়ায়।

এরপর চলতি মাসের মাঝামাঝি খুলনা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়। গত দুই দিন ধরে বরিশালের বিভিন্ন জেলা থেকেও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের খবর আসছে। সর্বশেষ বগুড়া, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, পাবনা, পিরোজপুর ও চট্টগ্রামে আরও ৫১ জন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তবে এসব রোগীর নাম গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকায় যুক্ত হয়নি। আগামী আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ভরা মৌসুমে এ রোগের ভয়াবহতা আরও বাড়তে পারে বলে সংশ্নিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। আসন্ন দুঃসময় মোকাবেলায় সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তারা।

বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই সংশ্লিষ্টরা সতর্ক করেছিলেন, এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার থাকে। তবে জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত পরিস্থিতি বেশি খারাপ থাকে। কারণ এই সময় রাজধানীতে এডিস মশার প্রকোপ বেশি থাকে। হঠাৎ থেমে থেমে স্বল্পমেয়াদি বৃষ্টিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা খুব বেশি মাত্রায় প্রজনন সক্ষমতা পায়। ফলে এডিস মশার বিস্তারও ঘটে বেশি।

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৯০ জন ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই আছেন ৩৮৬ জন। মশাবাহিত এ রোগে এরইমধ্যে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে, যদিও সরকারের খাতায় আট জনের মৃত্যুর খবর এসেছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৯০ জন ডেঙ্গু রোগী সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৩৬ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৮ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ২২ জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৯ জন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ৩৭ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১১০ জন। এছাড়া, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩ জন ও খুলনা বিভাগে ২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

ডেঙ্গু আতঙ্ক দেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কোনো কোনো পরিবারের একাধিক সদস্য ডেঙ্গু আক্রান্ত। বেশির ভাগ হাসপাতালে পা ফেলার জায়গা নেই। নির্ধারিত বেড ছাড়িয়ে ফ্লোরে, বারান্দায়, লিফটের পাশে, বাথরুমের দরজার সামনে—যে যেখানে পারছে সেখানেই বিছানা পেতে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিচ্ছে।

রোগীর ঢল সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরাও। চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। কিন্তু সে পরিমাণে নেই ডাক্তার বা নার্সের সংখ্যা। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী থেকে শুরু করে চিকিৎসকসহ সবারই।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, এখন সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে ডেঙ্গু রোগীর সেবা দিতে হবে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়া আছে। কেউ চিকিত্সা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে আগামীকাল রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মনিটরিং টিম মাঠে কাজ শুরু করবে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য প্রয়োজনে ১ হাজার বেডের দুটি বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হাসপাতাল দুটি হলো, চানখারপুলে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও মহাখালীতে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here