রোহিঙ্গা ইস্যুতে কারও সঙ্গে নিজেকে লড়াইয়ে না জড়ানো এবং এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমি কারও সঙ্গে লড়াইয়ে জড়াতে চাই না। আমি এই পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ একটি সমাধান চাই। কারণ, তারা (মিয়ানমার) আমার নিকটতম প্রতিবেশী।’
গতকাল সোমবার ওয়াশিংটন পোস্ট–এর সাপ্তাহিক সাময়িকী টুডেস ওয়ার্ল্ডভিউকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। টুডেস ওয়ার্ল্ডভিউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক সাংবাদিক ঈশান থারুর লেখা ‘রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের বোঝা হয়ে থাকতে পারে না: বলেন প্রধানমন্ত্রী’ শিরোনামে এই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, শেখ হাসিনা জানান, তিনি এই ইস্যুটি নিয়ে মিয়ানমারের কার্যত বেসামরিক নেতা নোবেল বিজয়ী অং সান সুকির সাথেও আলোচনা করেছেন। তিনি (সুকি) এই পরিস্থিতির জন্য দেশটির সামরিক বাহিনীকে দায়ী করেন। তিনি আমাকে বলেছেন যে, সেনাবাহিনী তার কথা খুব একটা শোনে না।
ভারতে ২০১৬ সালে আয়োজিত আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলনকালে তাদের মধ্যে ওই বৈঠকটি হয়। এরপর থেকে সুকি দেশটির সামরিক বাহিনীর সিদ্ধান্তকেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন এবং এমনকি তিনি জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠিটিকে বুঝাতে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটিও উচ্চারণ করেন না।
শেখ হাসিনা ওই সাক্ষাতকারে বলেন, এখন আমি দেখতে পাচ্ছি যে তিনি (সুকি) তার অবস্থান থেকে সরে এসেছেন।
সাম্প্রতিক একটি নিবন্ধের বরাত দিয়ে রিপোর্টে বলা হয় ইউএন কমিশনের একটি প্রতিবেদন সতর্ক করে দিয়েছে, ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে যে ধরনের সহিংতার কারণে রোহিঙ্গারা দেশত্যাগে বাধ্য হয় এখনো সেখানে একই অবস্থা বিরাজ করছে।
নিবন্ধটিতে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের ছোট একটি দলের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে দেশটির সঙ্গে চুক্তি হলেও শরণার্থীদের অধিকাংশ রাখাইনে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সংঘটিত সহিংসতার বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশের জন্য এটা একটা বড় বোঝা, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তাদের ওপর যা ঘটেছে তা এক ধরনের গণহত্যা। হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ অনেক কিছু ঘটেছে। নিরাপত্তার জন্য তারা তাদের দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। আজকের দেশের এই বোঝা আঞ্চলিক সংকটে রূপ নিতে পারে। ক্রমবর্ধমান হতাশাগ্রস্ত ও কর্মহীন শরণার্থীরা মৌলবাদ ও উগ্রবাদের দিকে ঝুঁকে যেতে পারে। দীর্ঘদিন অবস্থান করলে খুব সহজেই তারা ‘জঙ্গি গ্রুপগুলো’তে যোগ দিতে পারে। নিরাপত্তার কথা ভেবে সরকার গত সপ্তাহে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ এবং সেখানে টহলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের এখন থাকার জন্য স্বাগত জানানো হয়েছে। তারা আমাদের মাটিতে আছে। আমরা আর কী করতে পারি!
মিয়ানমারকে চাপে ফেলতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী কী করতে পারে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মিয়ানমারের সমস্যা হচ্ছে তারা অন্য কারো কথা শোনে না। আমার প্রত্যাশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর আরো চাপ প্রয়োগ করবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এনজিও ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার শরণার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করছে।