জাবালে নূর বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের নিহত দুই শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজীব ও দিয়া খাতুন মীম হত্যা মামলায় দুই চালকসহ তিন জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া আসামিদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন−জাবালে নূরের চালক মাসুম বিল্লাহ, আরেক গাড়ির চালক জোবায়ের সুমন ও হেলপার আসাদ কাজী। আসাদ পলাতক রয়েছেন। এ মামলায় বাকি দুই আসামি হেলপার এনায়েত হোসেন এবং বাস মালিক জাহাঙ্গীর আলম খালাস পেয়েছেন।
রোববার (১ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার আগে কারাগার থেকে জাবালে নূর পরিবহনের মালিক জাহাঙ্গীর আলম, দুই চালক মাসুম বিল্লাহ ও জুবায়ের সুমন এবং তাদের সহকারী এনায়েত হোসেনকে আদালতে হাজির করা হয়।
এর আগে, গত ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার দিন পহেলা ডিসেম্বর ধার্য করেন আদালত। এ মামলায় ৪১ জনের মধ্যে ৩৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে বাসচাপায় নিহত হয় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব (১৭) ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম (১৬)। আহত হয় আরও ১০-১৫ শিক্ষার্থী। ঘটনার দিনই নিহত মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন।
২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেন। ২৫ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ইমরুল কায়েশ আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ঘটনার দিন দুপুরে চালক ও তাদের সহকারীরা বেশি লোক ওঠানোর লোভে যাত্রীদের কথা না শুনে এবং তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে জিল্লুর রহমান উড়াল সড়কের ঢালের সামনে রাস্তা ব্লক করে দাঁড়ান। এ সময় আরেকটি বাসের চালক মাসুম বিল্লাহ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ১৪-১৫ শিক্ষার্থীর ওপর গাড়িয়ে উঠিয়ে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই দুই শিক্ষার্থী নিহত এবং নয়জন আহত হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাপস কুমার পাল জানান, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে পরিচালনা করা হয়েছে। সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ সক্ষম হয়েছে। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছি।
নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীমের মা রোকসানা বেগম জানান, আমার মেয়ে যদি রাস্তা পার হওয়ার সময় অ্যাক্সিডেন্ট (দুর্ঘটনা) হতো, তাহলে মনে এতটা দুঃখ থাকত না। মনে করতাম, হয়তো আমার মেয়েরই ভুল ছিল। কিন্তু আমার মেয়ে গাড়িতে ওঠার জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিল। যেখান থেকে যাত্রীরা গাড়িতে ওঠে, সেখানেই দাঁড়িয়েছিল। ড্রাইভারটা যদি একটু সাবধানে গাড়ি চালাত, তাহলে আমার মেয়ে মারা যেত না। আদালতের কাছে আমরা ন্যায়বিচার প্রার্থনা করি।