বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিভিন্ন নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সেবার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ১৮ নভেম্বর, বুধবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সারাদেশে বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ক্লিনিকগুলোর সেবা বিষয়ে পর্যালোচনা সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
এছাড়াও বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ক্যাটাগরিও নির্ধারণ করে দেয়া হবে এবং এ জন্য একটি কমিটি করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সামনে করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলার জন্য প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলো যেন প্রস্তুতি গ্রহণ করে। তারা সরকারি হাসপাতালগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেভাবে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিয়েছে, একই ধরনের সেবা দিতে তাদের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। আমরা আরও বলেছি, স্বাস্থ্যসেবার মান আরও বাড়াতে হবে। যাদের লাইসেন্স নবায়ন করা নেই তাদের তা নবায়ন করতে হবে, বিশেষ করে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের।’
তিনি বলেন, ‘যদি লাইসেন্স নবায়ন না থাকে, সরকারের নিয়মনীতির লঙ্ঘণ থাকে তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারাঅনেক কিছুতে আমাদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে একমত হয়েছেন। আগামীতে প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা পরীক্ষায় যে চার্জ হবে এবং ওনারা যে সেবা দেবেন, সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হবে। সেটা ওনাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে করা হবে। একটি ক্লিনিক, হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কী ধরনের যন্ত্রপাতি, জায়গা ও জনবল লাগবে- সেই বিষয়গুলোও নির্ধারণ করে দেয়া হবে। সেই বিষয়েও তারা একমত পোষণ করেছেন।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিভিন্ন হাসপাতালের বিভিন্ন মান রয়েছে। সেখানে টাকার বিনিয়োগ আছে। একটি বড় হাসপাতাল বা ক্লিনিকে অনেক ব্যয় করা হয়েছে। তাই ক্যাটাগরিও নির্ধারণ করে দেয়া হবে, এতেও তারা রাজি আছেন। যে চার্জ নির্ধারণ করে দেয়া হবে সেগুলো প্রদর্শণ করতে হবে। সেখানে উল্লেখ থাকবে যে, এই ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এই সেবা দেয়া হয়, এই সেবার মূল্য এই। যেটা তারা একটা বোর্ডে দিয়ে দেবেন। যেটা সরকারি হাসপাতালে আছে।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘ওনারা (বেসরকারি হাসপাতালের মালিকরা) একটা দাবি করেছেন যে, হাসপাতাল থেকে যে বর্জ্য সৃষ্টি হয় সেগুলো শোধনের একটা ব্যবস্থা করার। এ বিষয়ে আমরা দেখব কীভাবে সাহায্য করতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে সভার মূল্য উদ্দেশ্য হচ্ছে কীভাবে সেবার মান বাড়ানো যায়। জনগণ যাতে প্রতারিত না হন, জনগণ যাতে সঠিক মূল্যে চিকিৎসা পান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা সঠিক মূল্যে করতে পারেন। আমরা কমিটি গঠন করে দেব। কমিটি আস্তে আস্তে তাদেরকে নিয়ে এই কাজগুলো করে সুন্দর একটি সমাধান দেবে।’
বাংলাদেশেও করোনা সংক্রমণ কিছুটা বেড়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘১৭ নভেম্বর, মঙ্গলবার (গতকাল) আমরা দেখলাম, মৃত্যুর হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিস্থিতি যাতে আমাদের আওতার বাইরে চলে না যায়, সেজন্য আমি জনগণের কাছে আহ্বান জানাব, তারা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, মাস্ক পরেন।’
শীতের সময় খেলাধুলা বাড়বে, বিয়েশাদি হবে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে নির্দেশনা আমরা আগেই দিয়েছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সব মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে- আগামী দিনে স্বাস্থ্যবিধি আরও মেনে চলতে হবে। সেবা পেতে হলে মাস্ক পরতে হবে। স্লোগান দিচ্ছি- নো মাস্ক নো সার্ভিস। আমরা আহ্বান করব, সবাই যাতে এটা মানেন।’
একজন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের কারণে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে চিকিৎসক ও নার্সরা কর্মবিরতি পালন করছেন, সেখানে সেবা দেয়া হচ্ছে না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যেকোনো বিষয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে। যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তা তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’