পানিতে ডুবে অপমৃত্যু প্রতিরোধে কাজ করা সকল বেসরকারি-আধা সরকারি এবং অন্যান্য অংশীজনদের পাশে থাকবে সরকার বলে জানিয়েছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক তানিয়া খান। তিনি বলেন, সরকার সব সমেই নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিতে তৎপর। এজন্য প্রায় নিয়মিতই বিভিন্ন প্রকল্প, কর্মসূচী এবং ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে। পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানো এবং অন্যান্য অংশীজনদের সাথে সমন্বয় সভা আয়োজনের জন্য সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)-কে অভিনন্দন এবং সাধুবাদ জানান তিনি। দুপুরে সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি সংশোধিত প্রস্তাবে নতুন আরও কিছু যুক্ত করা যায় কিনা-ভেবে দেখার জন্য উপস্থিত সকল স্টেকহোল্ডারদের প্রতি আহ্বান জানান।
সিরডাপ মিলনায়তনে সকাল ১১ টায় শুরু হওয়া এ আয়োজনে একজন মা, তার পুত্র হারানোর কথা তুলে ধরেন। চাঁদপুর মতলবের কর্মজীবী নারী নুরুন্নাহার। ৫ বছরের শিশু সন্তান মাহিরকে রেখে কাজে গিয়েছিলেন। মাহির সাথে ছিলেন তার বাবা। দুপুরের দিকে খবর পান, সেই মাহি আর নেই। বাসায় ফিরে শুনতে পান, আড়াইটার দিকে বাড়ির পাশের পুকুরে মাহিকে ভেসে থাকতে দেখেন প্রতিবেশীরা। তারাই মাহিকে পুকুর থেকে তুলে হাসপাতালে নিলে, চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সেই থেকে তার মতো আর কোন মায়ের কোল যেন এভাবে শুন্য না হয় সেজন্য সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের একজন কমিউনিটি লিডার হিসেবে কাজ করছেন মাহিরের মা নুরুন্নাহার।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে সিআইপিআরব ‘র নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. একেএম ফজলুর রহমান সকলকে স্বাগত জানান। এসময় তিনি সিআইপিআর ‘র বিভিন্ন কার্যক্রম, উদ্যোগ এবং সফলতার কথা তুলে ধরেন। প্রতিদিন অন্তত ৩০ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যান বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, এখন ১৬ জেলার ৪৫ উপজেলায় প্রায় ৩ লাখ ২৭ হাজার শিশুকে সাাঁতার শেখানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
এসময় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিআইপিআরব’র উপ নির্বাহী পরিচালক ড. আমিনুর রহমান। তিনি বলেন, ২০১৩ সালের শিশু আইন হওয়ার পর শিশুর সেফটি, শিশুর ডেভলপমেন্ট, শিশুর প্রটেকশন এবং শিশুর সার্ভাইভাল নিয়ে সারাদেশে কাজ করা হচ্ছে। তাদের গবেষণা মতে বছরে প্রায় ১৯ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এদের বেশিরভাগের বয়স ১ থেকে ৫ বছরের মধ্যেই এবং সকাল ৯টা থেকে ১টার মধ্যে এই মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি বলে গবেষণায় পাওয়া গেছে বলে জানান ড. আমিনুর রহমান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিন ইউনিসেফের প্রতিনিধি বলেন, ২০০৬ সাল থেকে শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন তারা। পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে ৬ লাখ শিশুকে সাঁতার শেখানো হয়েছে। এই কাজ চলছে দেশের ২৫ জেলা এবং ১২ সিটি কর্পোরেশনে বলেও অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন তিনি। অনুষ্ঠানে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানািইজেশনের প্রতিনিধি জানান, তারা সব ধরণের টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে এই কর্মসূচীর সাথে যুক্ত আছেন।
সিআইপিআরবি’র উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ও সিনারগোস বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় ‘‘শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২৪- পানিতে ডুবা প্রতিরোধ হোক প্রতিটি শিশুর অধিকার” শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এবং আইসিবিসি এর প্রকল্প পরিচালক ফেরদৌসী বেগম উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৯৯২সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ পালন করে আসছে।এ বছরও নানামুখী আয়োজনের মধ্যদিয়ে শিশু সপ্তাহ পালন করছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। এবারের প্রতিপাদ্য “প্রতিটি শিশুর অধিকার রক্ষা আমাদের অঙ্গীকার”। এই শপথের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে ‘‘শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২৪- পানিতে ডুবা প্রতিরোধ হোক প্রতিটি শিশুর অধিকার” শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) । সার্বিক সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ও সিনারগোস বাংলাদেশ।
আলোচনায় অংশ নিয়েছেন নীতি নির্ধারক প্রতিনিধি, কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী প্রকল্পের প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, কমিউনিটি প্রতিনিধি, গণমাধ্যম প্রতিনিধি ও শিশুদের জন্য কাজ করে এমন দেশী এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারী সংস্থার প্রতিনিধিগণ।
মৃত্যুর এই মহামারি প্রতিরোধে ১-৫বছর বয়সী শিশুদের প্রয়োজন সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান এবং ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের প্রয়োজন সাঁতার দক্ষতা।ইতোমধ্যেই একটি জাতীয় নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে, যা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। দেশজুড়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুর যে নিরব মহামারী চলছে আবহমানকাল ধরে, এই নীতিমালা অনুমোদন ও বাস্তবায়ন হলে তা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিআইপিআরবি’র ডেপুটি কমিউনিকেশন ম্যানেজার ফারহানা ফেরদেৌস। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।