বিএনপি নেতা ফখরুল বলেন, ‘আজ আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, সব রাজনৈতিক দল, সংগঠনকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জনগণের দাবি আদায় করতে হবে। অপশাসনকে পরাজিত করতে হবে। জাতিকে মুক্তি দিতে হবে।
ফখরুল আরো বলেন, ‘সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ দানবকে সরাতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। তাই গণতন্ত্রমনা সব রাজনৈতিক দলকে এক হতে হবে। আসুন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হই, গণতন্ত্রকে মুক্ত করি, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিই।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, তফসিল ঘোষণার আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সেনা মোতায়েন করতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। এ ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, জনগণ হতে দেবে না।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বর্তমান যে দানব সরকার দেশের জনগণের ওপর চেপে বসেছে, তাদের থেকে মুক্তি পেতে দরকার সব রাজনৈতিক দল, সংগঠনের ইস্পাতকঠিন ঐক্য।’ তিনি বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তাঁকে কারাগারে রেখে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত বিএনপির মানববন্ধনে ফখরুল এ কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া আট মাস কারারুদ্ধ। সরকার অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় তাঁকে আটকে রেখেছে। উচ্চ আদালত তাঁকে জামিন দিলেও সরকার একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে আটকে রাখছে। তারা চায়, বিএনপি ও দেশনেত্রীকে বাইরে রেখে নির্বাচন করতে।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। এটি তাঁর প্রাপ্য, আমরা সরকারের কাছে বা কারো কাছে কোনো দয়াভিক্ষা চাইছি না। দেশের একজন সম্মানিত নাগরিক হিসেবে তাঁর সাংবিধানিক অধিকার অবশ্যই দিতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মিথ্যা, বানোয়াট মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। সে মামলায় খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়ার পরও তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। তার একটা উদ্দেশ্য, খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে নির্বাচন করে ৫ জানুয়ারির মতো ক্ষমতা দখল করা। কিন্তু দেশের মানুষ খালেদা জিয়া, বিএনপি ও ২০ দল ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেবে না।’
ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকার গত ১০ বছরে বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, সংসদকে ধ্বংস করে দিয়েছে, এখন সংসদে একটা গৃহপালিত বিরোধী দল বসিয়েছে। যারা সরকারেও আছে, বিরোধী দলেও আছে। নিজেদের স্বার্থে প্রশাসন দলীয়করণ করেছে, এখন বিচার বিভাগ পুরোপুরি ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এখন সরকার বিরোধী দলকে ধ্বংস করতে ভৌতিক মামলা দেওয়া শুরু করেছে, যেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। আমরা সরকারকে বলতে চাই, এভাবে গুম, খুন, মিথ্যা মামলা-নির্যাতন করে ক্ষমতা ধরে রাখা যাবে না। আজ এ নির্যাতনকারী সরকার থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে হবে।’
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন সন্ত্রাসী সরকারে পরিণত হয়েছে। তাই এদের থেকে মুক্তি পেতে দরকার ইস্পাতকঠিন ঐক্য।’
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সঞ্চালনা করেন দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ। উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও খায়রুল কবির খোকন, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম প্রমুখ।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘সরকার খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দিচ্ছে না। তিনি গুরুতর অসুস্থ। তাঁকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় যেকোনো পরিস্থিতির দায় সরকারকেই নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে একটি জাতীয় ঐক্য গঠন করে সরকারে পতন নিশ্চিত করা হবে। সে জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে। আন্দোলন ছাড়া সরকারের অপশাসন থেকে মুক্তির কোনো বিকল্প নেই।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হবে। আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই গণতন্ত্রের লড়াই এগিয়ে নিয়ে সব দাবি আদায় করে নির্বাচনে যাব।’