মঈন উদ্দিন আহমেদ, হবিগঞ্জ ঃ টানা বৃষ্টিতে আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ভাটি অঞ্চলে শতাধিক একর বোরো ফসলের পাকা ধান। তলিয়ে যাবার আশংকা রয়েছে আরো প্রায় হাজার একর পাকা ফসলের জমি। এতে দরিদ্র কৃষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা। এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও হঠাৎ বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়াতে কৃষকরা এখন ভীষন চিন্তায় রয়েছেন সারা বছর কি খাবেন? তারা কিভাবে মহাজনের ঋণ শোধ করবেন?
নবীগঞ্জের ১নং বড় ভাকৈর ইউনিয়নের শৈলা রামপুর গ্রামের বিঞ্চু পাল, মহাদেব চন্দ্র পাল, অমর আলী, সমর চন্দ্র পালের প্রায় সবটুকু জমির পাকা ধান পানিতে ডুবে গেছে। দুই একদিনের মধ্যে বৃষ্টির পনি নেমে গেলে এসব ধান কাটা সম্ভব আর না হয় পঁচে নষ্ট হয়ে যাবে। তারা অভিযোগ করে বলেন, মকার হাওর ও করগাঁও হাওরের ক্যানেলটি মাটি দিয়ে ভরাট হয়ে গেলেও এর খননের ব্যবস্থা না করায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে ধানের জমিতে পানি জমে থাকছে। ফলে একরের পর একর জমি পানিতে ডুবে গেছে। জমির বোরো ধানের উপর রামপুর গ্রামের কৃষকরা নির্ভরশীল হওয়ায় সারা বছরের খাবারের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসাবে রয়েছে মহাজন ও বিভিন্ন এনজিও’র ঋণ। তিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর চৌধুরী।
করগাও, শৈলা রামপুর, ভাকৈর, বোয়ালিয়া গ্রামের মানুষের চোখে-মুখে এখন দুুশ্চিন্তার ছাপ। কিভাবে পাকা ধান ঘরে তুলবেন সে চিন্তায় দিশাহারা চাষিরা।
তিগ্রস্থ চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ বছর এলাকায় বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে এসব ফসল ঘরে তোলার সময় হলেও হঠাৎ করে ঝড়-বৃষ্টিতে অধিকাংশ জমির ফসল তলিয়ে গেছে। পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শত শত হেক্টর জমির ফসল। চোখের সামনে এ তি দেখেও কিছু করার নেই তাদের। প্রতিদিনই ঝড়-বৃষ্টি লেগে থাকায় চাষিদের জন্য চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। এলাকার অধিকাংশ চাষিরা বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও এবং সুদে কারবারীদের কাছ থেকে অধিক মুনাফায় টাকা এনে চাষাবাদে ব্যয় করেছেন। এ অবস্থায় তাদের শেষ অবলম্বন বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এখন দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
বড় হাওরের কৃষক গোলাম হোসেন বলেন, এই বৃষ্টি আর পানি যদি ছয় সাতদিন থাকে ‘এইবার ধানের ভাত খাওয়া যাইত না, এই ধান গরুরে খাওয়াইতে অইব’। আকরাম উল্লা বলেন ব্যাংকের ঋণ কিভাবে শোধ করবো এই চিন্তাই ঘুম আসে না। তিনি বলেন আমরা শ্রমিকের অভাবে অর্ধেক ধান কাটতে পারি নাই । এবার যদি বোরো ফসল ঘরে তুলতে না পারি তাহলে যে ক্ষতি হবে তা কিছুতেই পোষাতে পারবো না।
উপজেলা কৃষি অফিসার দুলাল উদ্দিন জানান, কালবৈশাখী ঝড় ও টানা বর্ষনে ঢলের পানিতে এ উপজেলায় হাওরাঞ্চলের পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছ্ ে। কৃৃষকের যে তি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়া কৃষকদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ উপজেলা শতাধিক একর জমির পাকা ধান ঝরাসহ তলিয়ে গেছে।