মাহমুদা আক্তার। বাংলাদেশ অনুর্ধ ১৫ নারী ফুটবলারদের গোল কিপার। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ নারী ফুটবলারদেও যত কৃতিত্ব তার বেশির ভাগের দাবিদার। কারণ প্রত্যকেটা জয়ে বাংলাদেশের জালে বল জড়াতেই দেন নি কলসিন্দুরের এই ম্যাগনেটিক ওম্যান মাহমুদা। কি এক অদ্ভুত শক্তি আছে মাহমুদার। প্রতিপক্ষের বল জালে না গিয়ে চলে আসে মাহমুদার হাতে। অনেকটা ম্যাগনেটের মতো। দেশইনফো সম্পাদক সাজেদা হক কথা বলেছিল দারুন প্ওায়ারফুল এই ম্যাগনেটিক ওম্যান মাহমুদা আক্তারের সাথে। নিচে তারই চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
দেশইনফো : নিজের সম্পর্কে একটু বল।
মাহমুদা আক্তার : আমার নাম মাহমুদা আক্তার। আমি কলসিন্দুর স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়ি। আমার বাবার নাম মহিবুল হোসেন। আমার মায়ের নাম ফজিলা খাতুন। আমরা চার বোন এক ভাই।
দেশইনফো : কবে থেকে খেলছো?
মাহমুদা আক্তার : আমি ২০১২ সাল থেকে খেলা শুরু করেছি। অনুর্ধ ১৪ তে তাজিকিস্তানের সাথে প্লানটিক এর একটা আর অনুর্ধ ১৬ এর কোয়ালিফাইং রাউন্ডে ২টা গোল খেয়েছি। এছাড়া জাপানের কাছে দুইটা আর অস্ট্রেলিয়া টিমের সাথে খেলায় ৩টা গোল খেয়েছি।
দেশইনফো : গোল কিপার হিসেবে খেলতে কেমন লাগে তোমার?
মাহমুদা আক্তার : শুরু থেকেই গোল কিপার হিসেবে খেলছি, তাই এটাই এখন আমার নেশা এবং পেশা। যখন গোলপোস্টে থাকি তখন যতটুক পারি চেষ্টা করি নেট চেক দেওয়ার। ১১ জন মাঠে নামে। দশ জনের কাছ থেকে বলটা আমার কাছেই আশে। সেটা আমি কেমন করে চেক দেব, মানে আমার নেটে বল ঢুকবেন না সেই চেষ্টাই করি আমার সরবচ্চ দিয়ে।
দেশইনফো : খেলায় কি ধরণের ভুল হয় ?
মাহমুদা আক্তার : এমনিতে প্র্যাকটিসে পারি কিন্তু গেমে ভুল হয়। যেমন, অস্ট্রেলিয়ার সাথে ম্যাচে কর্নার কিক করেছে ওরা আমি যদি যায়গায় থাকতাম তাহলে গোল হতো না। আমি না বুঝে বের হয়ে এসেছিলা। আবার এক ম্যাচে ডিফেন্ডার বলছে বল নিয়ে আসছে, সে ফাইনাল দেফেনড করতে গেছে। আমি একটু আগায়ে ছিলাম, হঠাৎ শুটিং করছে। আমার উপর দিয়ে গোল হয়ে গেছে।
দেশইনফো : পেনালটি হলে কি কর ?
মাহমুদা আক্তার : কোচ বলেছেন যে কোন এক দিকে বেছে নিতে। সেই দিকে বল আসলে ধরতে পারি আর না হলে নাই। দুই দিকে লক্ষ রাখলে কোনটাই হয়না। আসলে পেনালটিক হোল ভাগ্যের ব্যাপার।
দেশইনফো : খেলায় তোমার ভূমিকা কেমন ?
মাহমুদা আক্তার : আমি যদি একটা দুইটা ভালো সেভ দেই তাহলে টিম স্প্রিট বেড়ে যায়। আর যদি আমার ভুলে গোল হয়ে যায় তাহলে দলের মন খারাপ হয়ে যায়। আমি থাইল্যান্ডে একটা সেভ করেছিলা। সেটা আমার বেস্ট। এছাড়া জাপানের সাথে কয়েকটা ভালো সেভ দিছি।
দেশইনফো : কোন দলকে টাফ মনে হয়?
মাহমুদা আক্তার : উত্তর করিয়া। অরা খুব ভালো খেলে। ওদের বডি ফিটনেস, স্কিল, হাইট খুব ভালো। তারপরেও আমরা খারাপ খেলি না। ওরা অনেক হার্ড খেলে আমাদের সাথে জিতেছে। এ ছাড়া জাপান ভাল টিম। ওরা দ্রুত গতির দল। ভারত, নেপালও ভাল খেলে।
দেশইনফো : তোমার খেলা শুরু কবে থেকে?
মাহমুদা আক্তার : ২০১১ থেকে। বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টে আমরা খেলা শুরু করেছি। তখন আমি বেষ্ট ইলেভেনে ছিলাম না। নেপালে খেলার সময় তাসলিমা বেস্ট ইলেভেনে ছিল। ২০১৪ সালে আন্ডার সিক্সটিনে খেলা হোল তখন থেকে আমি ইলেভেনে খেলেছি। এরপর জাতীয় দলে বেস্ট ইলেভেনে চান্স পাই।
দেশইনফো : এখন ক্যাম্পে তুমি ছাড়া কয়জন গোলকিপার আছে ?
মাহমুদা আক্তার : পাঁচ জন ?
দেশইনফো : তোমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা কেমন?
মাহমুদা আক্তার : সবাই বেস্ট ইলেভেনে খেলতে চায়। আমিও আমার যায়গা ধরে রাখার জন্য হার্ড প্র্যাকটিস করে যাচ্ছি।
দেশইনফো : আর পড়ালেখা হচ্ছে?
মাহমুদা আক্তার : চালিয়ে যাচ্ছি। সারাজীবন তো খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না। দুদিন পরে ভাল না খেললে জাতীয় দল থেকে বাদ গেলে কি করব? তখন পড়ালেখাটাই সম্বল।
দেশইনফো : পেশা হিসেবে ফুটবল সম্পর্কে তোমার ধারণা বল।
মাহমুদা আক্তার : এখনও বাংলাদেশে সেরকম অবস্থা তৈরি হয়নি। যদি ক্লাব লীগ চলত তাহলে একটা কথা ছিল।
দেশইনফো : ফেডারেশনের সাথে চুক্তি কয়দিনের?
মাহমুদা আক্তার : এক বছরের। মাসে মাসে দশ হাজার টাকা করে হাতে দিয়ে দেয়। পাঁচ মাসের মত পেয়েছি। কিছি বাকি আছে তবে পেয়ে যাব।
দেশইনফো : তুমি খেলার সময় কি কর?
মাহমুদা আক্তার : আমি সবসময় বলের মুভমেন্ট লক্ষ রাখি। প্রতিটি মুভমেন্ট অনুযায়ী আমি নিজের অবস্থানে থাকি। আমার পেছনে তো আর কেউ নেই। নেট সেভ করার জন্য যা করার তাই করি। খেলা শেষে নিজেকে মূল্যায়ন করি। কোন ভুল হলে কোচ যা বলেন সেই মত সংশোধন করে নেই।