রহস্যেঘেরা তাসফিয়া হত্যাকাণ্ড!!!

0
505

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে উদ্ধার হওয়া সানশাইন স্কুলের ছাত্রী তাসফিয়া আমিনের হত্যাকাণ্ড নিয়ে তিন দিন পরও পেরিয়ে গেলেও রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি পুলিশ। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর গোলপাহাড় এলাকার চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যে অটোরিকশায় উঠেছিল পুলিশ এখন সেই অটোরিকশা চালককে খুঁজছে।

এছাড়া হত্যাকাণ্ডের জট খুলতে ফেসবুকভিত্তিক টিনেজ গ্র“প ‘রিচ কিডস গ্রুপের’ সদস্যদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

তাসফিয়া হত্যাকাণ্ডে তার পরিবারের পক্ষ থেকে ছয়জনকে আসামি করে মামলা করা হলেও আদনান মির্জা ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। হত্যা রহস্যের জট খুলতে আপাতত সিসিটিভি ফুটেজের ওপরই নির্ভর করছে পুলিশ।

কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার বিকালে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে তাসফিয়া একটি অটোরিকশায় উঠেছিল। সেই অটোরিকশার চালককেও খুঁজে বের করতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।

রেস্টুরেন্টের পাশের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেট্রোপলিটন হাসপাতাল ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ শুক্রবার সকালে সংগ্রহ করা হয়। এসব ফুটেজ পর্যালোচনা করে খুনিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও জানান, ওই চালককে খুঁজে বের করতে পারলে অনেক প্রশ্নেরই জবাব মিলবে।

রেস্টুরেন্ট থেকে একসঙ্গে বের হয়ে আদনান ও তাসফিয়া আলাদা অটোরিকশায় ওঠে। এরপর তাসফিয়া কেন ও কিভাবে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় গেল সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

পুলিশ জানায়, নাসিরাবাদ-মুরাদপুরকেন্দ্রিক একটি কিশোর গ্রুপের সদস্য এজাহারভুক্ত আসামি আদনান, শওকত, আসিফ, সোহেল ও ইকরাম। ‘রিচ কিডস গ্র“প’ নামের এই কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান আদনান হলেও পুরো গ্রুপের নেপথ্যে আছেন কথিত যুবলীগ কর্মী ফিরোজ। মোটরসাইকেলে করে ঘোরাঘুরি, তুচ্ছ ঘটনায় মারামারি, এলাকায় হিরোইজম প্রদর্শন করে আসছে এই গ্রুপের সদস্যরা।

মঙ্গলবার বিকাল থেকে তাসফিয়া নিখোঁজের পর তার মায়ের ফোন পেয়ে আদনান তাদের বাসায় যান। এ সময় তাসফিয়ার বাবা মো. আমিন প্রথমে আদনানকে নিয়ে চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্টে যান। পরে সেখান থেকে আবার বাসায় যান। সেখানে আদনানকে আটকে রাখা হয়।

খবর পেয়ে ফিরোজ ও ইকরাম সেখানে গিয়ে দুই ঘণ্টার মধ্যে তাসফিয়াকে খুঁজে দেয়ার কথা বলে আদনানকে ছাড়িয়ে আনেন। এরপর রাতে তারা লাপাত্তা হয়ে যান।

পুলিশ জানায়, আদনানের মোবাইল ফোন সেটের কললিস্ট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্য সব অ্যাপসের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

রেস্টুরেন্টের পোশাক এবং মরদেহ উদ্ধারের সময় তাসফিয়ার পোশাকের মধ্যে ভিন্নতা আছে। তদন্তে প্রভাব পড়বে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা সেই বিষয়টি খোলাসা করছেন না। এ অবস্থায় রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে তাসফিয়া সোজা পতেঙ্গায় গিয়েছিলেন নাকি মাঝখানে নিজের বাসা কিংবা অন্য কোথাও গিয়েছিলেন। এটাও তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, ফেসবুকে বন্ধুত্বের মাসপূর্তি উপলক্ষে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায়  গোলপাহাড়ের মোড়ে অবস্থিত রেস্টুরেন্ট চায়না গ্রিলে তাসফিয়াকে ডেকে নেই তার বন্ধু আদনান। তাসফিয়া ও আদনান ২০-২২ মিনিট দোকানে ছিল। ৬টা ১৫ মিনিটে প্রবেশ করে তাসফিয়া ও আদনান। তারা ৬টা ৩৭ মিনিটে বের হয়ে যায়। এরপর দুজনকে দুটি সিএনজিতে উঠে চলে যেতে দেখা যায়।

এরপর বুধবার সকালে পতেঙ্গায় অজ্ঞাত তরুণীর লাশ  সৈকতের ১৮ নম্বর ব্রিজের উত্তরপাশে পাথরের ওপর থেকে উদ্ধারের  খবর পাওয়ার পর তাসফিয়ার বাবা-চাচারা পতেঙ্গা থানায় যান। সেখানে গিয়েই তারা দেখতে পান তাসফিয়ার লাশ।

তাসফিয়া আমিনদের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফের ডেইলপাড়া এলাকায়। তার পরিবার নগরীর ওআর নিজাম আবাসিক এলাকার তিন নম্বর সড়কের কেআরএস ভবনে থাকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here