কামাল পাশা চৌধুরী: বাস বা ট্রাক চালকদের উশৃংখলতা বা নির্মমতা নিয়ে অসংখ্য ঘটনা আছে।তাদের নিয়ম-নীতিহীন বেপরোয়া আচরন সভ্য নাগরিক সমাজের জন্য এক মহাসংকট। কেউ এদের নিয়ন্ত্রণ করছেন না বা করা যাচ্ছেনা।
কিন্তু এই চালকরা কেন এমন অমানবিক অভব্য, আমরা কি কখনও অনুসন্ধান করেছি? এরা কার কাছ থেকে গাড়ি চালানো শিখেছে? প্রচলিত আইন বা ট্রাফিক রুলস তাদেরকে কে শিখিয়েছে? দেশব্যাপী কর্মরত এই অগনিত ড্রাইভারদের কোন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে? আমপারা পড়ানোর শিক্ষক তৈরীর জন্য আমরা হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি, আর যাদের উপর আমাদের বাঁচা-মরা নির্ভর করে তাদের জন্য কয়টা স্কুল করেছি?
একজন বাস বা ট্রাক চালকের চালক হয়ে উঠার প্রক্রিয়াটা কি? তা’ কয়জন জানেন? পরিবার থেকে বৃন্তচ্যুত বা এক ছিন্নমূল বালক শুধু জীবনটা বাঁচিয়ে রাখার মত খাদ্যের বিনিময়ে প্রায় শিশু বয়সে যোগ দেয় কোনও গ্যারেজে। সেখানে ওস্তাদের অকথ্য খিস্তি, সাথে চড় থাপ্পর লাথি লাঠি খেয়ে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে অশ্লীল যৌন নির্যাতন ভোগ করে সে বেড়ে উঠে। এক সময়ে গাড়ির হেল্পার হয়, তখনও নিপীড়নের কমতি থাকে না, এভাবেই সে একদিন গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে।
এর কাছ থেকে আমরা কি মানবিকতা আর সুশীল আচরণ আশা করবো। একে তো মানুষই বলা যায় না। তাকে মানুষ বানাতে সমাজ কি করেছে তার জন্য? গোটা মানবসমাজ তো তার প্রতিপক্ষ।পরিবার, স্নেহ, প্রেম, ভালোবাসার বোধ তাকে তো কোনও দিনই স্পর্শ করেনি। তার কাছে জীবন মানে শুধু বেঁচে থাকা, এর জন্য কার কি লাভ-ক্ষতি হলো তাতে তার কি আসে যায়? কাজের শেষে ক্লান্তি আর একঘেয়েমি কাটাতে কোনও ব্রথেলে গিয়ে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকাই তার জীবনের অপার আনন্দ। একে তো আমরাই তৈরী করেছি এভাবে।
এখনও একই প্রক্রিয়ায় চলছে আমাদের চালক তৈরীর কারখানা। আমদের সভ্যতার সবচেয়ে দ্রুতগতির চাকার স্টিয়ারিং এদের হাতে রেখে আমি নিরাপদ সড়কের জন্য শ্লোগান দেব কি করে?