ইসলামের দৃষ্টিতে এসময় যৌন মিলন হারাম।
মাসিক অবস্থায়ঃ
১) মাসিক অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করা হারাম।
২) মাসিক অবস্থায় স্ত্রীর নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত দেখা বা স্পর্শ করা হারাম।
৩) মাসিক অবস্থায় নামায পড়া যাবে না এবং তার কাযা মাফ।
৪) মাসিক অবস্থায় রোযা রাখা যাবে না, কিন্তু তার কাযা আদায় করতে হবে।
৫) মাসিক অবস্থায় কুরআ’ন শরীফ স্পর্শ করা বা মুখে উচ্চারণ করা হারাম।
৬) মাসিক অবস্থায় স্ত্রীর সাথে শোয়া, তাকে চুম্বন কিংবা আলিঙ্গন করা জায়েয।
৭) মাসিক শেষ, কিন্তু গোসল করে নাই, এমতাবস্থায় সহবাস করা যাবে না।
৮) মাসিক তিন দিনের কম বা ১০ দিনের বেশি হলে ইস্তিহাযা। ইস্তিহাযা অবস্থায় নামায পড়তে হবে।
৯) মাসিক অবস্থায় কাবা ঘর তাওয়াফ করা ছাড়া হজ্বের অন্যান্য কাজ করা যায়।
তবে কেউ যদি ভুলে, অনিচ্ছাকৃত এবং না জেনে তাহলে তার কোন গুনাহ হবে না। আর যদি ইচ্ছাকৃতভাবে করে থাকে তাহলে কাফফারা দিতে হবে। কাফফারার পরিমাণ একদিনার বা অর্ধ দিনার। কোনো কনো ফিকাহ বিদের মতে স্বামী দুটির যে কোন একটি দিতে পারবে। আবার কেউ কেউ বলেন মাসিকের প্রথম দিকে করলে ১ দিনার, শেষের দিকে বা মাসিক শেষ কিন্তু গোসল করে নি এমতাবস্থায় করলে অর্ধ দিনার। [কিতাবুল কাবার/ পৃষ্ঠা-৫৫]
মাসিকের সময় কোনক্রমেই সহবাস করা যাবে না। মাসিক চলাকালীন সহবাস মারাত্মক গোনাহ্, অপরদিকে স্বাস্থ্যগত ও সমস্যা রয়েছে।তাই এর থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে ।
* মিলনের সময় এবং পরবর্তীতে প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে।
* দেহ অপবিত্র লাগে বিধায় মানসিক অরুচি সৃষ্টি হতে পারে।
* রক্তপাত তুলনামূলক ভাবে বেশি হতে পারে।
* পুরুষ লিঙ্গে রক্ত লেগে যৌনমিলনে তার অরুচি জন্মাতে পারে।
* জরায়ু মুখ ঘোরে যেতে পারে, যা পরবর্তীতে মারাত্মক কুফল বয়ে আনতে পারে।
* পুরুষের কোন রোগ (Sexual transmited disease) থাকলে এসময় অতিদ্রুত নারী যোনিতে ছড়িয়ে পড়ে।
* তেমনি নারীদেহেও কোন রোগ (Sexual transmited disease) থাকলে পুরুষ দেহে দ্রুত ছড়াতে পারে।
* মাসিকের সময় জরায়ু ও যোনির অম্লভাব থাকে না। তাই এটি খুব সহজেই রোগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।
ইসলামের দৃষ্টিতে মাসিকের সময় যৌন মিলনঃ
পবিত্র কুরআ’ন এ আল্লাহ তায়ালা বলেন- “আর আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয সম্পর্কে। বলে দেন, এটা অশুচি। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগণ থেকে বিরত থাকো এবং যতক্ষন না তারা পবিত্র হয়ে যায় ততক্ষণ তাদের নিকটবর্তী হবে না। যখন উত্তম রূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যায়, তখন গমন কর তাদের কাছে, যে ভাবে আল্লাহ হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং যারা অপবিত্রতা হতে বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন।” (বাকারা/আয়াত-২২২)
সুতরাং স্বামীর জন্য জায়েয হবে না স্ত্রী সহবাস করা যতক্ষন না স্ত্রী হায়েয থেকে মুক্ত হয়ে গোসল করে পবিত্র হয়।
হায়েয অবস্থায় স্ত্রী সহবাস যে একটি গর্হিত ও হারাম কাজ রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) এর হাদিস থেকেও তার প্রমান পাওয়া যায়।
আমাদের প্রানপ্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন- “যে ব্যাক্তি হায়েয অবস্থায় সহবাস করে বা পিছনের রাস্তা দিয়ে স্ত্রীর সাথে মিলন করে কিংবা কোন গণকের কাছে গমন করে, তবে সে আমার নিকট যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করল।” [তিরমিযী]
বর্তমান চিকিতসা বিজ্ঞান বলছে যে, মাসিক অবস্থায় মেয়েদের জরায়ু থেকে যে স্রাব আসে, তাতে রয়েছে বিষাক্ত কিছু যৌগ। তাই পুরুষদের সিফিলিস, গোনোরিয়া, লিংগ ছোট হয়ে যাওয়া, লিংগ বিকৃতিসহ নানা রোগের কারন মাসিক অবস্থায় সহবাস করা।
ডিম্বানু ভেঙ্গে তা মাসিকের স্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়। মাসিকের সময় কোন ডিম্বানু থাকে না। যারা মনে করে মাসিকের সময় সহবাস না করলে সন্তান হয় না, এটা তাদের চরম মুর্খতা। তবে কখনো কখনো মাসিকের সময় ডিম্বানু গঠিত হয়, যদিও এটা বিরল।
মাসিকের সময় একটি মেয়ে খুবই অসুস্থ থাকে, এর সাথে থাকে অসহ্যকর ব্যাথা-বেদনা, বমি বমি ভাব, মাথা ব্যাথা। এই অবস্থায় তার সাথে সহবাস করা, তার উপর অমানবিক জুলুম ছাড়া আর কিছুই নয়।
এখানে খুবই সহজ কিছু মাসয়ালা দেয়া হলো। মাসিকের মাসয়ালার পরিসর অনেক বড়। মাসিকের মাসয়ালা সমূহ মনে রাখা অনেক কঠিন কাজ। শতকরা ৫ ভাগ মেয়েও সঠিক মাসয়ালা মানা দূরে থাক, জানেও না।