সাজেদা হক: নেপালকে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। গত আগস্ট মাসের সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলে পুরো আসর দুর্দান্ত খেলেও ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশের মেয়েরা। তবে অপরাজিত দল হিসেবেই অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জিতেলো বাংলাদেশ।
আর এই চ্যাম্পিয়নশীপের অংশীদার বাংলার মেসি খ্যাত ফুটবলার তহুরা। নিজেকে মেসির মতোই তৈরি করতে চান তিনি। তহুরার ছোট চোখে বিরাট স্বপ্নেরা ডানা মেলে হরহামেশায়। ছোট গাঁয়ের দুরন্ত এই মেসির মুখোমুখি হয়েছিলো দেশইনফো প্রতিনিধি দল। তাদের সাথে কথোপকথনে উঠে এসেছে খেলা ও খেলার বাইরের বহু ইস্যু। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।
দেশইনফো: কেমন আছ ?
তহুরা: ভালো। আপনি?
দেশইনফো: আলহামদুলিল্লাহ। তোমাকে মেসি বলে ডাকে সবাই । কবে থেকে ডাকে ?
তহুরা: বঙ্গমাতা টুর্নামেন্ট খেলার সময় থেকে শুনে আসছি। এখন এলাকায় যখন এই নামে ডাকে তখন খুব ভালো লাগে। আসলে আমি নিজেও মেসির ভক্ত। আর্জেন্টিনা আমার ফেভারেট দল।
দেশইনফো: তোমার আসল নাম কি?
তহুরা: আমার মা নাম দিয়েছে সারাবান তোহরা। আমার মায়ের নাম সাবেকুন নাহার। বাব ফিরোজ মিয়া। আমারা পাঁচ বোন এক ভাই। আমি তিন নাম্বার। পড়ি ক্লাস নাইনে। বাবা কৃষিকাজ করে সংসার চালান। সামান্য জমি আছে।
দেশইনফো: খেলায় আসার অনুপ্রেরণা কি?
তহুরা: আমি ক্লাস টু তে পড়ার সময় বঙ্গমাতা টুর্নামেন্ট হয়। ওই সময় বড় আপুরা বলেন, তুই ভালো খলতে পারিস। তখন থেকে খেলা শুরু।
দেশইনফো: এখন বাংলাদেশ টিমের মূল চ্যালেঞ্জ কি?
তহুরা: কয়েকদিন আগে সিক্সটিন ওয়ার্ল্ড কাপ খেলে আসলাম। প্রথমবার গিয়ে বেশ ভালো করেছি। আগামীবার আরও ভালো করাটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ।
দেশইনফো: ফেডারেশনের সাথে তোমাদের এক বছরের যে চুক্তি তাতে মাসে ১০ হাজার করে দেওয়ার কথা।
তহুরা: ৪ মাস পেয়েছি। আর বাকিটা পরে দেবে বলেছে।
দেশইনফো:আবার কি ৪ বছরের চুক্তি করবে ফেডারেশন ?
তহুরা: প্রেসিডেন্ট স্যার তো তেমনি বলেছেন। তিনি বলেছেন, মেয়েদের ক্লাব লীগ চালু হবে। এ ছাড়াও আমাদের জন্য যাতে আরও ভালো সুযোগ আসে সে বিষয়ে চেষ্টা করবেন।
দেশইনফো: এখন যা পাচ্ছ তাতে কি যথেষ্ট মনে করো?
তহুরা: আরেকটু হলে ভালো হয়। অনেক মেয়েই ক্যাম্প করছে তাদের মধ্যে যারা জাতীয় দলে চান্স পাবে না তাদের অনেকে কিন্তু খেলা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে শুধু মাত্র আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে। তাই লীগ চালু হওয়াটা জরুরী।
দেশইনফো: পড়াশোনা আর খেলাধুলা কিভাবে সামলাচ্ছ ?
তহুরা: ক্যাম্পে পড়ালেখার সুযোগ আছে।
দেশইনফো: পড়ালেখা করে কি হতে চাও?
তহুরা: কোনোকিছু হতে ইচ্ছে করে না। যতদিন পারি খেলা চালিয়ে যাব। তার পর বাড়িতে বসে থাকব।
দেশইনফো: তোমার আজকের এই অবস্থায় আসার পেছনে কাদের কাছে ঋণী ?
তহুরা: অনেকের কাছে। যখন প্রথম খেলা শুরু করি তাদের কাছে। কাদের মেম্বার তালুকদারেরা আমার আব্বু আম্মুকে বঝাইছে। মিনতি ম্যাডাম, আজাদ দাদা, জুয়েল ভাই। মকবুল সার যিনি জেলা পর্যায়ে খেলার সময় কোচ এনেছিলেন আরও অনেকে। এছাড়া ছোটন সার, লিটু সার, আর আমাদের ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট।
দেশইনফো: বাইরে গেলে সব থেকে কি মিস করো?
তহুরা: বাবা-মা আর এলাকাবাসীকে।
দেশইনফো: শুনলাম তোমরা আনসার দের সাথে চুক্তি করেছ?
তহুরা: আনসার বিকেএসপি এগুল জেলা পর্যায়ে খেলা আছে। আমরা খেলবো। বলেছে পাঁচ হাজার করে পাবো। আর চ্যাম্পিয়ন হলে বেতন বাড়বে। ফেডারেশনের অনুমতি নিয়েই চুক্তিবদ্ধ হয়েছি।
দেশইনফো: তোমার স্বপ্ন কি ?
তহুরা: একদিন সত্যি মেসির মতো খেলা।
দেশইনফো: তোমার স্বপ্ন সত্যি হোক। ধন্যবাদ।
তহুরা: ধন্যবাদ।