রক্ত পরীক্ষায় জানা যাবে ক্যান্সার-ইয়াসমিন হক

0
317

দেশইনফো প্রতিবেদক: রক্ত পরীক্ষা করেই নির্নয় করা যাবে ক্যান্সার বলে দাবি করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক। সকালে উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের (হেকেপ)-এর আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবী করেন।

তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের জন্য এটি একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে একজন রোগীর দেহে কোনো ধরণের যন্ত্রপাতি প্রবেশ না করিয়ে প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে নতুন একটি পদ্ধতিতে রক্ষ পরীক্ষা করে সম্ভাব্য ক্যান্সারের ভবিষ্যতবাণী করার একটি সম্ভাবনা উম্মোচিত হয়েছে।

নন-লিনিয়ার অপটিকস গবেষণায় ক্যান্সার শনাক্তকরণের সাশ্রয়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন এক দল গবেষক। এই গবেষক দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক।

গবেষকদলের প্রধান অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক বলেন, ‘এই গবেষণা মূলত ক্যান্সার নির্ণয়ের সহজ একটা পদ্ধতি। আমরা হেকেপের সহায়তায় এই ভিন্নধর্মী গবেষণা করেছি। হেকেপের দেশি-বিদেশি স্পেশালিস্টরা এ গবেষণা দেখার পরই তা ইউএসএ পেটেন্টের জন্য আবেদনের আগে কাউকে না জানানোর জন্য বলেন। কারণ এ ধরনের গবেষণা বিশ্বে প্রথম। নিশ্চয়ই এ গবেষণার গুরুত্ব আছে বলেই তাঁরা পেটেন্টের জন্য আবেদন করতে বলেছেন। তবে এ বিষয়ে আরো অনেক উচ্চতর গবেষণা প্রয়োজন।’

একই অনুষ্ঠানে ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, ‘এখন পার্টিকুলার ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। সেখানে বায়োপসির মতো পরীক্ষারও প্রয়োজন পড়ে। আর সাধারণত যখন কারো সন্দেহ হয় বা রোগের উপসর্গ দেখা দেয় তখনই মূলত রোগীরা আসে। এখন যদি নতুন কিছু আবিষ্কৃত হয়, তাহলে সেটা তো খুবই ভালো। আর এই আবিষ্কার বাংলাদেশের গবেষকরা করলে চিকিৎসাক্ষেত্রে আমরা আরো এক ধাপ এগিয়ে যাব।’

২০১৬ সালের মার্চ মাসে ‘নন-লিনিয়ার অপটিকস ব্যবহার করে বায়োমার্কার নির্ণয়’ শীর্ষক প্রকল্পটি হেকেপের আওতায় সিপি-৪০৪৪ হিসেবে গৃহীত হয়। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে নন-লিনিয়ার বায়ো-অপটিকস রিসার্চ ল্যাবরেটরি নামে একটি নতুন ল্যাবরেটরি গড়ে তোলা হয়। এ ল্যাবরেটরিতে ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের রক্তের সিরামে শক্তিশালী লেজার রশ্মি পাঠিয়ে নন-লিনিয়ার ধর্মের সূচক পরিমাপ করার কাজ শুরু হয়েছে। ক্যান্সার রোগ নির্ণয়ে বায়োকেমিক্যাল প্রক্রিয়ায় যে বাড়তি রি-এজেন্ট ব্যবহার করতে হয়, শাবিপ্রবিতে উদ্ভাবিত নতুন পদ্ধতিতে তার কিছুরই প্রয়োজন হয় না।

২০১৫ সালের দিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) এই নন-লিনিয়ার অপটিকস রিসার্চ গ্রুপটি গবেষণার ব্যাবহারিক দিক নিয়ে কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। গ্রুপটি হেকেপের উইন্ডো ফোরের আওতায় ইউনিভার্সিটি-ইন্ডাস্ট্রি সমন্বিত গবেষণার জন্য একটি উদ্ভাবনীমূলক পরিকল্পনা জমা দেয়। পরিকল্পনাটি ছিল ক্যান্সার রোগাক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের নন-লিনিয়ার ধর্ম পরিমাপ করে ক্যান্সারের সম্ভাব্য উপস্থিতি ও অবস্থা চিহ্নিত করার একটি প্রক্রিয়া উদ্ভাবন। অর্থাৎ প্রচলিত বায়োকেমিক্যাল ক্যান্সার নির্দেশক বায়োমার্কারের পরিবর্তে একটি অপটিক্যাল বায়োমার্কার উদ্ভাবন করা।

এই পরিকল্পনাটি ছিল ক্যান্সার রোগাক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের নন-লিনিয়ার ধর্ম পরিমাপ করে ক্যান্সারের সম্ভাব্য উপস্থিতি ও অবস্থা চিহ্নিত করার একটি প্রক্রিয়া উদ্ভাবন। সহজ ভাষায় বলা যায় ক্যান্সার রোগাক্রান্ত রোগীদের রক্তে এমন কিছু একটা অনুসন্ধান করে বের করা যার নন-লিনিয়ার ধর্মটি ক্যান্সার রোগের সম্ভাব্যতার একটি ধারণা দেবে।

একই সাথে খুব সহজে নন-লিনিয়ার ধর্টি অনুসন্ধ্যানের জন্য একটা সহজ যন্ত্রও তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়। সহজভাবে বললে এই উদ্ভাবনী প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে শুধু ক্যান্সার রোগাক্রান্ত রোগীদের রক্ত নয়, অন্য যেকোন স্যাম্পলের নন-লিনিয়ার ধর্ম খুবই সহজে সুক্ষভাবে পরিমাপ করা সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, মুহাম্মদ জাফর ইকবালসহ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here