স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীর আন্দোলন

0
55

সাত কলেজকে নিয়ে আলাদাভাবে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২১ অক্টোবর) বেলা ১১টা থেকে ঢাকা কলেজে জড়ো হয়েছেন সাত কলেজের প্রায় ১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। পরে মানববন্ধন করার উদ্দেশ্যে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে সাইন্সল্যাব ও নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নেন তারা।

দুপুর দুইটায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সাইন্সল্যাব, নিউ মার্কেট ও নীলক্ষেত এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে। এসময় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের ‘অধিভুক্তি নাকি মুক্তি, মুক্তি, মুক্তি’, ‘শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য, মানি না, মানবো না’, ‘আর নয় দাসত্ব, হতে চাই স্বতন্ত্র’, ‘ঢাবির জায়গায় ঢাবি থাক, সাত কলেজ মুক্তি পাক’, ‘নিপিড়ন নাকি অধিকার, অধিকার, অধিকার’, ‘প্রশাসনের প্রহসন, মানি না মানবো না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০১৭ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। তবে, এই সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত। ফলে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে নিয়ে কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করা হয়েছিল তা ৮ বছরেও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বিপরীতে এসব কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনে নেমে এসেছে চরম বিশৃঙ্খলা। এক কথায় শিক্ষার মানের উন্নতির পরিবর্তে ঢাবি প্রশাসনের বৈষম্যমূলক বিভিন্ন নীতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার যথাযথ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

তারা বলেন, আমরা মনে করি, দীর্ঘদিনের অধিভুক্তির পরও যেখানে ঢাবির অধীনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার মানের আশা–আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি, সেখানে এমন অধিভুক্তি ধরে রাখা অর্থহীন। ঢাবির অধীনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের সামনে বর্তমানে যেসব সমস্যাগুলো বড় আকারে দেখা দিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়ের অভাব। এছাড়া বিভাগভিত্তিক মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব, গবেষণার সুযোগের অপ্রতুলতা, অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারের অনুপস্থিতি, শ্রেণিকক্ষের তীব্র সংকট, ল্যাব সংকট, আবাসন সমস্যা, পরিবহন সংকট, ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব, অ্যাকাডেমিক সিলেবাস অসম্পূর্ণ থাকাসহ পরীক্ষা মূল্যায়নে গণহারে ফেল করিয়ে দেওয়া—এসব সমস্যাগুলো দীর্ঘদিন ধরে সমাধানহীনভাবে চলছে।

ফলস্বরূপ, সাত কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিকার আদায়ে বারবার রাজপথে আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সাত কলেজ কর্তৃপক্ষ এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান না করে বারবার একে অপরের দিকে দায়িত্ব ঠেলে দিয়ে এসব সমস্যা জিইয়ে রেখেছেন। কিন্তু আমরা আর এমন জটিলতার ধারাবাহিকতা চাই না। আমরা সমাধান চাই।

সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিমের ফোকাল পয়েন্ট ও ঢাকা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা এখন সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত বা স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি তুলেছেন। এ দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কারো থেকেই কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাইনি। তাদের এমন নিশ্চুপ অবস্থান আমাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে।

এসময় তারা ৩ দফা দাবিও তুলে ধরেন। সেগুলো হচ্ছে —

১. সাত কলেজ নিয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করার অভিপ্রায়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সংস্কার কমিটি গঠন করতে হবে।

২. সংস্কার কমিটি অনধিক ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সাত কলেজের শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সাত কলেজের সমন্বয়ে শুধুমাত্র একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার রূপরেখা প্রণয়ন করবেন।

৩. সংস্কার কমিটি বর্তমান কাঠামো সচল রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন। যাতে করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সেশন জটিলতার কোনো ধরনের পরিবেশ তৈরি না হয়।

প্রসঙ্গত, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গতানুগতিক পড়াশোনার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কলেজগুলো হচ্ছে—ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। অধিভুক্ত কলেজগুলোর ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি প্রক্রিয়া, পরীক্ষা, শিক্ষা কার্যক্রম এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিচালিত হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here