শেখ হাসিনা বলেছেন, ইসলামী বিশ্বের বিভেদগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। ভাই ভাই রক্ত ঝরানো বন্ধ করতে হবে। আমরা বিশ্বে যুদ্ধ চাই না শান্তি চাই।
আজ শনিবার ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ৪৫তম সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি। সকাল ১০টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সম্মেলন শুরু হয়। দুদিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালে রিয়াদ শান্তি সম্মেলনে আমি চার দফা প্রস্তাব করেছিলাম।সেগুলো ছিল- সন্ত্রাস্ত্রীদের অস্ত্র সরবরাহের পথ বন্ধ করে দিতে হবে, সন্ত্রাসীদের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করার জন্য অর্থ সরবরাহের পথ বন্ধ করতে হবে, মুসলিম উম্মাহের ভিতরে বিভেদগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।নিজেদের সমস্যাগুলো নিজেরা আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে হবে। এবং সবার জন্য সুবিধা হয় এমন ব্যবস্তা রেখে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পথে বিরোধ নিস্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে ওআইসি বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠার ৫ দফা প্রস্তাব করেন।এগুলো হলো-
ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের উপর সবাইকে আস্থাশীল হতে হবে। সাম্প্রদায়িকতাহীন ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
শান্তিপূর্ণ উপায়ে সকল বিভেদের সমাধান করতে হবে।ওআইসির মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের সমস্যাগুলোর সমাধান করা আবশ্যক।
আত্মসচেতন মৌলিক বিশ্বাসকে অটুট রাখতে আধুনিক সমাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে জীবন যাপন করতে হবে। আমাদের মূল্যবোধভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক লালন করে আলোকিত বিশ্ব ব্যবস্থায় পথ দেখাতে হবে।
দারিদ্র ও ক্ষুধা দূরীকরণে এবং জরুরি মানবিক দুরবস্তা মোকাবিলায় ওআইসিকে বলিষ্ঠ কর্মসূচিসহ দ্রুত কার্যকর উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। ওআইসির ২০২৫ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
ইসলামের মূল্যবোধ শান্তি সংযম ভ্রাত্বদ্ব সমতা ন্যায়বিচার ও সমবেদনা থেকে সর্বদা অনুপ্রেরণা ও শক্তি আহরণ করতে হবে।বিভেদগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। ভাই ভাই রক্ত ঝড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড, রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল লিওনিদোভিচ বাগানোভওসহ সংস্থার সদস্যরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত রয়েছেন।
এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য— ‘টেকসই শান্তি, সংহতি ও উন্নয়নে ইসলামিক মূল্যবোধ’।
ওআইসিভুক্ত ৫৭টি দেশের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এই সম্মেলনে (সিএফএম) যোগ দিয়েছেন। এবারের সিএফএম সম্মেলনে সব রাষ্ট্র, পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র, ওআইসি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানসহ ছয় শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন প্রায় ৪০ জন মন্ত্রী ও সহকারী মন্ত্রী।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ২৫ বছর পর ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের আয়োজন করেছে। ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন এরশাদ সরকারের সময়ে ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ১৪তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।