‘একরাম হত্যা’ মুহূর্তের অডিও নিয়ে তোলপাড়

0
314
টেকনাফে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে গত শনিবার নিহত হয়েছেন টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল হক (৪৬)। র‌্যাবের দাবি, তিনি অন্যতম শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী ছিলেন।
তবে র‌্যাবের এই দাবি অস্বীকার করেছে নিহত একরামের পরিবার ও এলাকাবাসী। তাদের দাবি, একরাম কখনোই ইয়াবা ব্যবসায়ী ছিলেন না। বরং ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এই জনপ্রতিনিধি।
দেশে প্রায় প্রতিদিনই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা স্বত্ত্বেও মাদকবিরোধী এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছিল সাধারণ জনগণ। তবে পৌর কাউন্সিলর নিহতের ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা দেশ। এরই ভেতর ফাঁস হলো একরাম নিহতের মুহূর্তের গা শিউরে ওঠা এক অডিও ক্লিপ।
যে রাত্রে বন্দুকযুদ্ধ হয় সে রাতে আয়েশা তার স্বামীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলা চেষ্টা করেছিলেন। রেকর্ডকৃত সেই অডিও ক্লিপে শোনা যায় মুহুর্মুহু গুলির মধ্যে মুত্যুপথযাত্রী একরামের আর্তনাদ আর আয়েশার কান্না।
বৃহস্পতিবার (৩১ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে এই বন্দুকযুদ্ধকে ঠান্ডা মাথার খুন বলে দাবি করেছেন নিহত একরামুল হকের স্ত্রী আয়েশা বেগম। এসময় একরামের দুই মেয়ে তাহিয়া হক ও নাহিয়ান হকসহ স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
চোখের পানি মুছতে মুছতে আয়েশা বলেন, সবশেষ রাত ১১টা ৩২ মিনিটে তিনি ফোন রিসিভ করলেও কথা বলেননি। ওই সময় মোবাইলের অপর প্রান্তের সব কথা আমরা শুনতে পেরেছি। আমরা শুনছিলাম কত নির্মম পরিস্থিতি তিনি পার করেছেন। কি নির্দয়ভাবে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমার স্বামীর আর্তনাদ এখনো আমার কানে বাজছে।
এ সময় মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে চিৎকার দিয়ে কেঁদেছে একরামের দুই মেয়ে। চিৎকার দিয়ে বলেন, আমার আব্বুকে হত্যা করা হয়েছে। আব্বুকে হত্যার বিচার চাই। আব্বু ছাড়া কে আমাদের স্কুলে নিয়ে যাবে। আমরা কাকে আব্বু বলে ডাকবো।
এ সময় অসহায় মেয়ে দুটির কান্নায় সংবাদ সম্মেলনের পরিবেশ ভারি হয়ে যায়। প্রায় ১৫ মিনিট বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন উপস্থিত সবাই।
সংবাদ সম্মেলনে আয়েশা বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তার ক্রমাগত ফোনের কারণে রাত ৯টায় সেদিন বেরিয়ে যান একরাম। রাত ১১টার দিকে বাড়ি না ফেরায় তাকে ফোন করে মেয়ে। এসময় একরাম জানান, তিনি এক মেজরের সাথে হীলা যাচ্ছেন।
এ সময় আয়েশা উপস্থিত সাংবাদিকদের একটি অডিও ক্লিপ শোনান, “হ্যালো! আমি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছি।… আমি উনার মিসেস বলতেছি… হ্যালো! হ্যালো!…”- উৎকণ্ঠায় উচ্চস্বরে এমনিভাবে কথা বলছেন মোবাইল ফোনের একপ্রান্ত থেকে। অপর প্রান্তের কথার স্বর অনুচ্চ। এর খানিক পর গুলির শব্দ… উহ্… গোঙানি… । এরপর আরেকটি গুলির শব্দ। এপাশে চিৎকার- “ও আল্লা…!”
এমনি কিছু রক্ত ঠাণ্ডা করা কথোপকথনের পৃথক চারটি ক্লিপ মিলিয়ে ১৪ মিনিট ২২ সেকেন্ডের একটি অডিও ক্লিপ সরবরাহ করেন নিহত পৌর কমিশনার একরামুল হকের স্ত্রী। অডিও ক্লিপটি যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে বিষয়টি পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো।
আয়েশা বলেন, একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তার ক্রমাগত ফোনের কারণে ২৬ মে রাত ৯টার দিকে একরাম বাড়ি থেকে বের হন। রাত ১১টার সময়ও বাড়ি ফিরে না এলে, তার মেয়ে সোয়া ১১টার দিকে ফোন করে। সেসময় একরাম মেয়েকে জানান যে, তিনি একজন মেজর সাহেবের সঙ্গে হ্নীলা যাচ্ছেন। যে কথা অডিও ক্লিপটিতেও শোনা যায়।
এরপর, একরাম টিএনও অফিসের যাওয়ার কথাও মেয়েকে বলেন। “কতক্ষণ হবে?”- মেয়ের এমন প্রশ্নের জবাবে একরাম বলেন, “বেশিক্ষণ লাগবে না। আমি চলে আসবো ইনশাল্লাহ।”
স্বামীর খোঁজ নেওয়ার জন্যে আয়েশা ১১টা ৩২ মিনিটে ফোন দিলে ফোনটি রিসিভ করা হয়। কিন্তু, একরাম কিছু বলছিলেন না। আয়েশা বলেন, “হ্যালো!… হ্যালো!… হ্যালো কে? আমি কমিশনারের সাথে কথা বলতে চাচ্ছি।… আমি উনার মিসেস বলতেছি… হ্যালো! হ্যালো!…” এমন সময় ফোনের অপর পাশের অনুচ্চ স্বরে কথা শোনা যায়। শোনা যায় ট্রিগার টানার শব্দও। তারপর গুলি।
একপাশে “ও আল্লা” বলে নারী ও শিশুকণ্ঠে আর্ত-চিৎকার শোনা যায়। “আমার জামাই কিচ্ছু করে নাই।… আমরা বিনা দোষী।… ” বলে একজন নারীর কান্না। ফোনের অপর পাশে বাঁশির ফুঁ… আতঙ্কিত কণ্ঠে গালিগালাজের আওয়াজ।
এসময় নিহত একরামের স্ত্রী আয়েশা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুবিচার প্রার্থনা করেন। কেননা, একরামুল দীর্ঘ ১৩ বছর টেকনাফ যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
এদিকে, একরামের স্ত্রীর এসব অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছে র‌্যাব। একরামের নিহত হওয়ার ঘটনায় তার স্ত্রীর বক্তব্যকে “পুরোপুরি অসত্য” বলেছে সংস্থাটি।
র‌্যাবের লিগ্যাল এবং মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বৃহস্পতিবার (৩১ মে) বলেন, “অভিযানের সময় কী ঘটেছিলো তা গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি (একরাম) যে মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তার যথেষ্ট প্রমাণ গণমাধ্যমের খবরগুলোতেই রয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের যে তালিকা, তাতেও তার নাম রয়েছে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here