শব্দকে পোশাক পরাই
জ্যোতির্ময় নন্দী
শব্দকে নিত্যদিন পোশাক পরাই।
কখনো সাজাই তাকে থানকাপড় কি ধুতি-পাঞ্জাবিতে—
খেতে দিই পাঁচফোড়নের সম্বরা দেয়া ডাল,
পোনামাছের ঝোল আর নিরিমিষ তরকারি।
শেষপাতে একটু অম্বল কি দই দিয়ে
মধুরেন করি সমাপন।
আবার কখনো শব্দকে পরিয়ে দিই শেরওয়ানি, চুস্ত পায়জামা।
চাচার বিরিয়ানি, মোরগ পোলাও কিংবা রুমালি রুটি ও কাবাব ছাড়া
তখন তার মনই ওঠে না।
মাঝে মাঝে শব্দের পরনে খুব গরিব পোশাক—
লুঙ্গি আর ছেঁড়া গেঞ্জিতে তার তখন একটাই পরিচয়—
নিতান্তই বাঙাল বাঙাল—
পান্তা আর শুকনো লঙ্কাই সে তখন
গপাগপ খেয়ে নেয় অমর্ত জ্ঞানে!
পোশাক তো শব্দের খোলস!
খোলস ছাড়িয়ে নিলে শব্দকে চিনতে পারবে তো?
মাংসকে গোশ্ত তো হরহামেশা বলি,
মাংসলকে কিছুতেই গোশ্তল বলতে পারি না!
আবার জলকে পানি বললেও, জলীয়কে পানীয় বললেই
অর্থটা চলে যায় পুরো বিপ্রতীপে!
আমার বড্ড ইচ্ছে করে, বাইরের পোশাক ছাড়িয়ে
নগ্ন শব্দের মুখোমুখি একটুখানি বসি।
তাকে জিজ্ঞেস করি—
তোমাকে নিয়ে আমাদের এত দড়িটানাটানি,
এত চরিত্রহনন, ব্যভিচার, অবিচার নিয়ে তুমি কি ক্ষুব্ধ, বিব্রত?
পক্ষপাতহীন অনাবৃত সৌন্দর্যে তোমার কি
ইচ্ছে করে একান্ত তোমার মতো হতে?
তোমারও কি ইচ্ছে করে—উজ্জ্বল স্বরূপে হতে স্বয়ংপ্রকাশ—
সৃষ্টির আদিতে থাকা অনাহত নিঃশব্দ শব্দের মতো?