পাবনা প্রতিনিধি : ”বেশি করে টাকা উপার্জন হবে, ফিরবে সংসারে স্বচ্ছলতা, হাসি ফুটবে বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান সহ পরিবারের সবার মুখে। এমন স্বপ্ন ও আশা বুকে নিয়ে ধার-দেনা করে প্রায় পাঁচ মাস আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন পাবনার চাটমোহরের আনোয়ার হোসেন মন্ডল (৪০)।
কিন্তু সেখানে গিয়ে কাজ না পেয়ে প্রায় চার মাস ঘরে বসে থাকার পর গত জুলাই মাসে একটি চাকরি জোটে তার। আসন্ন ঈদুল আযহায় বাড়িতে টাকা পাঠানো কথা ছিল আনোয়ার হোসেনের। স্ত্রী আয়েশা খাতুনকে বলেছিলেন, ছেলে ও মেয়েকে ভাল জামা-কাপড় কিনে দিতে এবং বাকি টাকা পাওনাদারদের পরিশোধ করতে। কিন্তু একটি সড়ক দূর্ঘটনা কেড়ে নিল সবার স্বপ্ন।”
পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের জগতলা কান্দিপাড়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে আনোয়ার হোসেন সৌদি আরবে এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। সেই সাথে মৃত্যু হয়েছে তার স্বজনদের স্বপ্ন আর আশা আকাঙ্খার। জীবিকার সন্ধানে বিদেশের মাটিতে গিয়ে লাশ হলেন তিনি। এদিকে আনোয়ারের মৃত্যুর সংবাদ সোমবার সকালে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে স্বজন ও প্রতিবেশির মধ্যে শুরু হয় শোকের মাতম।
নিহতের বাবা আমজাদ হোসেন জানান, চার ছেলের মধ্যে আনোয়ার তার মেঝো সন্তান। জীবিকার সন্ধানে গত পাঁচ মাস আগে তার চাচাতো ভাই হাবিবুর রহমানের মাধ্যমে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে পাড়ি জমান। গত একমাস পূর্বে রিয়াদ থেকে ৪২০ কিলোমিটার দূরে হাবুর এলাকায় আল-আলাইদ নামের একটি কোম্পানীতে চাকরি শুরু করে সে। গত শুক্রবার (৩ আগস্ট) বিকেলে কর্মস্থলে কাজ করার সময় একটি দ্রæত গতির গাড়ি তাকে চাপা দিলে গুরুতর আহত হয় আনোয়ার। সঙ্গে সঙ্গে দেশটির পুলিশ তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় এক হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (৪ আগস্ট) সকালে আনোয়ার হোসেনের মৃত্যু হয়। বর্তমানে তার লাশ সে দেশের পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। আনোয়ারের মরদেহ দেশে আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের কাছে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছে নিহতের পরিবার।
এদিকে আনোয়ারের মৃত্যু সংবাদ সোমবার সকালে পৌঁছায় তার পরিবারের কাছে। এরপর থেকে চলছে স্বজনদের আহাজারী। আনোয়ার হোসেনের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। স্বামীর এমন আকস্মিক মৃত্যু যেন কিছুতেই মানতে পারছেন না স্ত্রী আয়েশা খাতুন। বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি।
জ্ঞান ফিরলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, এক সপ্তাহ আগে তার সাথে শেষ কথা হয়েছিল। তখন বলেছিল, ঈদের আগে টাকা পাঠাবে। সেই টাকায় ছেলেমেয়ের জন্য ঈদের কাপড় কিনতে ও বাকি টাকা পাওনাদারদের পরিশোধ করার কথা বলেছিল। কিন্তু কিছুই তো আর হলো না। এখন আমি কি নিয়ে বাঁচবো। ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথা যাবো। শেষবারের মতো স্বামীর মুখটা দেখতে চান তিনি। এজন্য আনোয়ারের মরদেহ দ্রæত দেশে আনার ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরকার অসীম কুমার জানান, বিদেশে মারা গেলে সে বিষয়টি দেখভাল করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। তবে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে আবেদন করলে প্রশাসনের তরফ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা সম্ভব হয় আমরা করবো।