হাফিজুর রহমান: আমার বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনের প্রিয়-বন্ধু ‘কালপুরুষ’ কবিতাপত্রের সম্পাদক, কবি রফিক নওশাদ আজকের দিনেই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরলোকগমন করেন।
নওশাদ আমার একবছরের সিনিয়র হলেও আমাদের সম্পর্কটা সহপাঠীরই ছিল! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ ও সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র হিসাবে আমাদের সখ্য সর্বজনবিদিতপ্রায়! কালপুরুষ যখন বেরুল, আমিও ওর সাথে খেটেছি দিনরাত! চমৎকার কবিতা লিখত নওশাদ! ছন্দে দখল ছিল ঈর্ষণীয়!
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ঢুকেছিল! পরে সেখান থেকে ক্যাডেট কলেজের চাকরি নিয়ে ঝিনেদায় গিয়েছিল! ওখানে অনেকদিন কাজ করেছে! ভাইস প্রিন্সিপালও ছিল! তখন একবার গিয়েছিলাম ওর কাছে! বোর্ডেও দেখা হয়েছিল একবার! পরে ময়মনসিংহ কি মির্জাপুরে গিয়েছিল! দেখা হয়নি আমাদের আর! ওর বাসাবোর বাড়িতে কতবার গিয়েছি যে!
ছড়াকার আবু সালেহ্ এর মনে পড়বে হয়তো আমাদের কোনো এক কোরবানি ঈদের ঘটনা! নওশাদ তখন হল ছেড়ে দিয়েছে! ঈদে যে ক’জন অভাগা ঘরমুখো হয়নি, সালেহ্ ভাই ও আমি তাদের অন্যতম! ঈদের সকালে হল-মসজিদে নামাজ-শেষে ডাইনিংয়ের খাবার খেলাম দুজন! দুপুরে খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই!
হাতও খালি দুজনেরই!
বেরুলাম দুজনে! সালেহ্ ভাই বললেন তাঁর এক আত্মীয় নারিন্দায় থাকেন! হেঁটে পৌঁছালাম সেখানে!
সদর দরোজায় তালা ঝুলছে! শোনা গেল, ঈদ করতে বাড়িতে গেছেন তাঁরা! আশেপাশে কয়েক বাড়িতে খোঁজা হলো! সব বাড়িই তালাবদ্ধ! অগত্যা মনে হলো নওশাদের বাসায় ঢু দেওয়া যায় তো! রিক্সাভাড়াও নেই কারো পকেটে! নারিন্দা থেকে বাসাবো! হেঁটেহেঁটে যখন পৌঁছালাম নওশাদের বাসায়,তখন প্রায়সন্ধ্যা !
ক্ষুধাতুর পেটে মুরগির মাংস ও পোলাও অমৃতের আস্বাদ দিয়েছিল! ফিরবার সময়ে বেশকিছু টাকা হাতের তালুতে গুঁজে দিয়েছিল নওশাদ!
পোশাকী নাম রফিকুল ইসলাম! রফিক নওশাদ নামে লিখত! আসল নাম কবে হারিয়ে গিয়েছিল! অনেকেই হয়ত জানেনই না! সেই রফিক নওশাদও নেই হয়ে গেল! খুব কষ্ট দিয়ে গেল যে!
আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামিন তাঁকে জান্নাতবাসী করুন।