২০৪ রানের লক্ষ্যমাত্রটা যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য মোটেও সহজ হবে না, সেটি অনুমিতই ছিল। বাস্তবিকই সেটি সহজ হচ্ছে না। বাংলাদেশের দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলাম দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের ‘জীবন অতিষ্ঠ’ করে তুলেছেন। তৃতীয় দিনে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৫১রান তুলতেই হারিয়েছে ৬ উইকেট। সাকিব আর তাইজুল দুজনই ২টি করে উইকেট ভাগ করে নিয়েছেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপর্যয়ের শুরুটা করেছেন কাইরন পাওয়েল। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে সাকিব আল হাসানের একটি বল বাইরে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়েই গড়বড় করে ফেললেন। ব্যাট ফাঁকি দিয়ে বল যখন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে, পাওয়েল তখন ক্রিজ ছেড়ে অনেক বাইরে। মুশফিকের পক্ষে পাওয়েলকে স্টাম্পিং করতে কোনো বেগই পেতে হয়নি।
পঞ্চম ওভারে সাকিবের বলেই ফিরেছেন শাই হোপ। এবারও সহায়ক ভূমিকায় মুশফিকুর রহিম। এবার অবশ্য ক্যাচ নিয়েছেন তিনি। দলীয় রান ১১ হতেই ২ উইকেট চলে যাওয়া ক্যারিবীয় দলের বিপদের শুরু যেন এখানেই। ১১ রানেই তাইজুলের বলে পরপর ফিরেছেন কার্লোস ব্রাফেট আর রোস্টন চেজ। দুটি এলবিডব্লু।
জয়ের জন্য এখনো ১৯৩ রান দরকার ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতে উইকেট ৬টি। এই মুহূর্তে চট্টগ্রামে বোলারদের যে ধরনের রাজত্ব, তাতে ১৯৩ সংখ্যাটাকে বড় বেশিই মনে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের জন্য।
মাহমুদউল্লাহ আর মেহেদী হাসান মিরাজের ৩৭ রানের জুটিটিই চট্টগ্রাম টেস্ট নিয়ে আশা জাগাচ্ছে। এই জুটির কল্যাণেই তো যাচ্ছেতাই ব্যাটিংয়ের পরেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২০৪ রানের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া সম্ভব হলো। টেস্টের তৃতীয় দিন প্রথম সেশনেই চতুর্থ ইনিংস শুরু হয়ে যাচ্ছে—জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট কতটা বোলার, নির্দিষ্ট করে বললে স্পিন-সহায়ক, সেটি বোঝা যায়।
ক্যারিবীয়দের সামনে লক্ষ্যমাত্রাটা আরও বড় দেওয়া যেত। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ নিজের ইনিংসটি আরও একটি বড় করতে পারলেন না। বড় করতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ ও মুশফিকুর রহিম। গ্যাব্রিয়েলের গতি-মুভমেন্টের কাছে হার মেনে তো মুশফিকুর রহিম (১৯) বোল্ডই হয়ে গেলেন। মুশফিক-ধাক্কা সামলে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ-মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু ১৮ রান করেই ফিরেছেন মিরাজ। একাকী সৈনিকের মতোই লড়ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। নাঈম হাসান অবশ্য দ্বিতীয় ইনিংসেও বড় বড় ব্যাটসম্যানদের লজ্জা দিয়েছেন ২৭ বল খেলে। কিন্তু দেবেন্দ্র বিশুর বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতে পারেননি বেশিক্ষণ। যেমনটা পারেননি মাহমুদউল্লাহ, মেহেদী মিরাজদের কেউই।
রোস্টন চেজ বাংলাদেশের ইনিংসটা গুটিয়ে দেন তাইজুল ইসলামকে ওয়ারিক্যানের ক্যাচ বানিয়ে। মাহমুদউল্লাহ ৩১ রান করে বিশুর বলে যে আউটটি হয়েছেন, সেটি একটু সতর্ক হলেই এড়াতে পারতেন। তারপরেও দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ‘নায়ক’ বলতে পারে তাঁকেই।
স্পিন-সহায়ক উইকেট। স্পিনারদেরই রাজত্ব। ক্যারিবীয়দের পক্ষে বিশুই করেছেন মূল রাজত্বটা। ২৬ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। এ ছাড়া রোস্টন চেজ ৩টি। ওয়ারিক্যান আর গ্যাব্রিয়েল নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন ৩ উইকেট।