৪০ বছরে বিএনপি, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাই দলটির চ্যালেঞ্জ

0
270
প্রতিষ্ঠার জন্মলগ্ন থেকে নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে এখন ৪০ বছরে পা দিতে যাচ্ছে বিএনপি। আজ( ১ সেপ্টেম্বর) শনিবার দলটির ৪০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী।দলটি ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠা করেন। একাধিকবার রাষ্ট্রপরিচালনায় অংশ নেওয়া এই রাজনৈতিক দলটি গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করার ফলে সংসদীয় বিরোধীদল হিসেবেও এখন নেই। যদিও জনসমর্থন বিবেচনায় বিএনপিই দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিকদলের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিনে প্রতিবছর আলোচনাসভা, পোষ্টার ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ, আলোকচিত্র প্রর্দশনীর পাশাপাশি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এবার তিনি জিয়া অরফানেস ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে বন্দি থাকায় শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে যেতে পারছেন না। ফলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রয়াত জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করবেন। একই দিন দুপুর আড়াইটার দিকে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি জনসভার আয়োজন করেছে বিএনপি। ইতোমধ্যে জনসভার মৌখিক অনুমতিও পেয়েছে দলটি।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড খন্দকার মোশাররফ হোসেন দেশ ইনফোকে বলেন, আওয়ামী লীগ সৃষ্ট রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ করতেই জিয়াউর রহমান বিএনপি নামক একটি রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি বাকশাল থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন ও খালেদা জিয়া স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। এবং যে লক্ষ্য ও আর্দশ নিয়ে বিএনপি গঠন করা হয় সেক্ষেত্রে শতভাগ সফল বলেই এই দেশের জনগণ সবচেয়ে বেশি সময় বিএনপিকেই রাষ্ট্রপরিচালনার করতে দায়িত্ব দিয়েছেন।
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের নেত্রী খালেদা জিয়া এখন কারাগারে। তাই খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা ও দেশে গণতন্ত্র পুন প্রতিষ্ঠা করা বিএনপিরই দায়িত্ব। আর এটাই বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আগামীর চ্যালেঞ্জ। তাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করে জনগণের সরকার বিএনপিই প্রতিষ্ঠা করবে।’
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় রমনা রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলেরযাত্রা শুরু করেন। জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণাপত্র পাঠ ছাড়াও প্রায় দুই ঘণ্টা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সংবাদ সম্মেলনে নতুন দলের আহ্বায়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রথমে ১৮ জন সদস্যের নামএবং ১৯ সেপ্টেম্বর ওই ১৮ জনসহ ৭৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, বিএনপি গঠন করার আগে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে আরেকটি দল তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সভাপতি করে গঠিত হয়েছিল। ২৮ আগস্ট ১৯৭৮ সালে নতুন দল গঠন করার লক্ষ্যজাগদলের বর্ধিত সভায় ওই দলটি বিলুপ্ত ঘোষণার মাধ্যমে দলের এবং এর অঙ্গ সংগঠনের সকল সদস্য জিয়াউর রহমান ঘোষিত নতুন দলে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে প্রতিষ্ঠার পর বিএনপি অনেক বার ভাঙ্গনের সমুক্ষিণ হয়। প্রতিষ্ঠাদের মধ্যে কয়েকজন জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দল ছেড়ে দেন। এর মধ্যে অন্যতম ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, যদিও পরবর্তীতে তিনি বিএনপিতেই ফিরে আসেন। ২০০১ সালে নির্বাচনের পর বিএনপি মনোনয়নে দলের প্রথম মহাসচিব অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী দেশের রাষ্ট্রপতি হন। কিন্তু নানান  কারনে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সাথে বিএনপি দুরত্ব সৃষ্টি হয়। ফলে প্রায় ছয়মাস রাষ্ট্রপতি থাকার পর বি. চৌধুরীকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। পরবর্তীতে তিনি বিএনপির একটি অংশ নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল বিকল্প ধারা গঠন করেন। এবং ২০০৬ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হবার ঠিক আগের দিন বিএনপির প্রতিষ্ঠাদের একজন কর্ণেল (অব:) ড: অলি আহমেদ বীর বিক্রম বিএনপি সরকারের কতিপয় নেতা কর্মী, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে বিএনপি ত্যাগ করেন এবং নতুন রাজনৈতিক দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিকপার্টি সংক্ষেপে এল.ডি.পি. গঠন করেন। যদিও এলডিপি এখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু বিকল্পধারা বাংলাদেশ বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ না হলেও বিএনপির সঙ্গে যোগ্যাযোগ অব্যাহত রেখেই চলছে। তবে দল ভাঙনের সর্বশেষ ধাক্কা খায় দশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সেনা সমর্থিত সরকারের শাসনামলে। তখন দলের তৎকালিন মহাসচিব মান্নান ভূইয়ার নেতৃত্বে একটি বড় অংশ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের বাইরে গিয়ে বিএনপির রাজনীতি পরিচালনা করতে শুরু করেন। যদিও তারা শেষ পযন্ত সফল হননি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি শুধু বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেই থেমে থাকেননি, বরং এই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা (বাকশাল) থেকে বের করে নিয়ে এসে প্রত্যেকটি রাজনৈতিকদলকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, আজকে যারা জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে ফের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা দিকে যেতে মরিয়া সেই আওয়ামী লীগের পুনজন্ম হয়েছে জিয়াউর রহমানের হাতেই।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতন্ত্রায়ন, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য এবং জনগণের মধ্যে স্ব-নির্ভরতার উত্থান ঘটানো। এগুলোর ভিত্তিতে জিয়াউর রহমান তার ১৯-দফা ঘোষণা করেন। ক্ষণজন্মা জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করে বেশিদিন বেচে থাকতে পারেননি। ষড়যন্ত্রকারিরা ১৯৮১ সালে ৩০ মে তাকে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করে। ভেবে ছিল বিএনপি বুঝি  শেষ হয়ে যাবে? কিন্তু জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য পত্নী তৎকালিন গৃহবধূ খালেদা জিয়া তিলে তিলে জিয়াউর রহমানের দেওয়া আর্দশ ও জাতীয়তাবাদী দর্শনের পতাকাকে হাতে নিয়ে লড়াই সংগ্রাম করে বিএনপির একটি শক্তিশালী ভিত্তি দাড় করিয়েছেন। তিনি ৯০ এর স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। অধিকার আদায়ে একাধিকবার কারাবরণ করেছেন তবুও অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করে যাচ্ছেন, এবং অধিকার আদায়ে, গণতন্ত্র রক্ষায় এখন তিনি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলায় কারান্তরীণ রয়েছেন।  শাসকদলের অত্যাচার নির্যাতন ও দমনপীড়ন বিএনপি ও তার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৭৮ হাজার মামলায় ১৮ লাখের বেশি আসামী করা হয়েছে এবং ৫ শত অধিক নেতাকর্মীকে হত্যা, গুম করা হয়েছে, তারপরও বিন্দু পরিমাণ আদর্শচূত করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবেও না। স্পষ্ট বক্তব্য- এই বিএনপিই আগামী দিনে মানুষের হারিয়ে যাওয়া মৌলিক অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
শুরু থেকেই বিএনপির লক্ষ্য ছিল জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা। স্বাধীনতা পরবর্তি সরকারের ভারত-ঘেষা পররাষ্ট্রনীতির ফলে বাংলাদেশ আন্তর্জার্তিক অঙ্গনে ভারত-সোভিয়েত অক্ষের দিকে চলে যায়, ফলে বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্বশক্তিরসাথে সম্পর্ক তেমন ভাল ছিল না। বিএনপি তার পররাষ্ট্রনীতিতে নিরপেক্ষতা ধারণ করে। বিএনপি মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান  শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিএনপি যে লক্ষ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার অন্যতম কারন হচ্ছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র,স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকার সুরক্ষা ও প্রতিষ্ঠা করতেই।সেই দিক থেকে শতভাগ সফল না হলেও মানুষের অধিকার, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা সংরক্ষণে সহসীকতার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এবং প্রতিষ্ঠার আরেকটি দিক হচ্ছে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বিএনপির চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করা, গণতন্ত্র পুন প্রতিষ্ঠা করা, এবং একটি নির্বাচনকালিন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। মানুষের অধিকার সংরক্ষণ করা।
স্বাধীন বাংলাদেশে সবথেকে বেশী সময় রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। ১৯৯০ এর গণতন্ত্রায়নের পর দেশের মোট চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মোট দুইটিতে জয়লাভ করে। ১৯৯১ এর সাধারণ নির্বাচনেবিএনপি ১৪২ টি আসন লাভ করে। তারা জামায়তে ইসলামীর সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে। ফলশ্রুতিতে বিএনপি সংরক্ষিত ৩০ টি মহিলা আসনের ২৮টি নিজেরা রেখে বাকি ২টি জামায়াতকে দিয়ে দেয়। ২০০১ সালের নির্বাচনেনবিএনপি-সহ চারদল প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়লাভ করে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনা সদস্যদের গুলিতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর প্রায় তিন বছর পর্যন্ত বাংলাদেশ শাসিত হয় অনির্বাচিত সরকার দ্বারা। সে সময় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন তৎকালীনসেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। তিনি রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২০৭টিতে জয়লাভ করে।নির্বাচনে অংশ নিয়ে মালেক উকিলের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ৩৯টি ও মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ২টি আসনে জয়লাভ করে। এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ৮টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ১টি ও মুসলিমডেমোক্রেটিক লীগ ২০টি আসনে জয়লাভ করে। ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র দুই বছরের মাথায় জিয়াউর রহমান আততায়ীর হামলায় নিহত হলে তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি হন। পরে ১৯৮৩ সালে সাত্তারকেসরিয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি হন।
সেপ্টেম্বর ১৯৮১ নির্বাচন কমিশন এক ঘোষণায় ইতোপূর্বে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ঘোষিত তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর পরিবর্তন করে ১৫ নবেম্বর পূর্ণ নির্ধারণ করে। ৮৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করলেও শেষ পর্যন্ত ৩৯ জন প্রার্থী রাষ্ট্রপতিপদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৩,৯০,৫১,০১৪ জন। নির্বাচিত বিএনপি প্রার্থী ক্ষমতাসীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার আওয়ামী লীগ প্রার্থী ড. কামাল হোসেনকে ৮৫,২২,৭১৭ ভোটের ব্যবধানে পরাজিতকরেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা হাফেজ্জী হুজুর ৩৮,৭,২১৫ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন। জেনারেল ওসমানী, মেজর জলিল, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদসহ অন্য প্রার্থীরা জামানত হারান। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচনের ফলাফলকে পূর্বপরিকল্পিত বলে অভিযোগ করেছিল।
সর্বস্তরের জনতার বিক্ষোভ জনসমুদ্রে পরিণত হলে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হন। তিন দফা রূপরেখা অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতহয় পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে বিএনপি সর্বাধিক আসনে জয়লাভ করে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। এ সরকার পাঁচ বছর দেশ শাসনের পর ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়াই ১৯৯৬ সালের১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে। এ নির্বাচন আওয়ামী লীগ বয়কট করায় একই বছর ১২ জুন অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসা এ দলটির হয়ে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।
১৯৯৬ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১৯৯১ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত গণতন্ত্রকে অনেকটা হুমকির সম্মুখে ঢেলে একদলীয় নির্বাচন করে ২য় বারেরমত সরকার গঠন করে। এই সরকারের মেয়াদ ছিল মাত্র ৪৫ দিন। এবং ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। মোট ২১০টিআসন নিয়ে চারদলীয় ঐক্যজোট ক্ষমতায় যায়। এই সময়ে চাপাইনবাবগন্জের কানসাট এ বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনে পুলিশের নির্মম হত্যাযজ্ঞে ১০ জনের অধিক গ্রামবাসী হত্যা, ঢাকার শণির আখড়ার বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতেসাধারণ জনতার আন্দোলন, এর মত কয়েকটি আন্দোলন হয়। এছাড়া ও সরকারি ত্রাণ তাহবিল থেকে ত্রাণ সামগ্রী সরকারীদলের সাংসদদের লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ সরকারের বৈধ মেয়াদ ২০০৬ সালের ৬ অক্টোবর শেষ হওয়ার পরক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে দেশে শুরু হয় ব্যাপক রাজনৈতিক সংঘাত। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি সারাদেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন। আর এ সময় থেকে গত ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় দুই বছর দেশপরিচালনা করেন ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ সরকারের তত্ত্বাবধানে ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩০ আসন নিয়ে জয়লাভ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। এ নির্বাচনে মাত্র ২৯টি আসন পায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং ২৭টি আসনে জয়লাভ করে জাতীয় পার্টি।
বিএনপি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ৭ দলীয় জোট গঠন করে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি এরশাদ আমলে অনুষ্ঠিত ২টি জাতীয়সংসদ নির্বাচন ও সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচন বয়কট করে। এই আন্দোলনে বিএনপির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বৈরাচারী এরশাদের সাথে কোন আপোষ না করা খালেদা জিয়াকেআপোষহীন নেত্রী বলা হয়। বিএনপি সহ সকল বিরোধী দলের গণ আন্দোলনে ৬ই ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে পদত্যাগে বাধ্য হয়।
সাত দলীয় জোট গঠন
নব্বই এর দশকে এরশাদের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নেতৃত্বে ৭টি দলের সমন্বয়ে ৭ দলীয় জোট গঠন করে। জোটভূক্ত দলসমূহ: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয়গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), প্রগ্রেসিভ ন্যাশনালিষ্ট পার্টি (পিএনপি),বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ডেমোক্র্যাটিক লীগ, ইউনাইটেড পিপলস পার্টি (ইউপিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) ।
চারদলীয় জোট গঠন
১৯৯৯ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি এবং ইসলামী ঐক্য জোট মিলিত হয়ে চার-দলীয় ঐক্য জোট গঠন করে। কিন্তু কিছু দিন পরেই জাতীয় পার্টির একটি অংশ এরশাদের নেতৃত্বেদল থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু নাজিউর রহমান মঞ্জুরের সমর্থক অংশটি জোটে থেকে যায়। জোটভূক্ত দলসমূহ : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্য জোট।
বিশ দলীয় জোট গঠন
২০১২ সালের ১৮ই এপ্রিল বিএনপি আরও রাজনৈতিক দলের সাথে একীভূথ হয়ে ১৮ দলীয় জোট গঠন করে। এই জোটে বিএনপির শরিক হিসাবে রয়েছে চার দলের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি),ইসলামী ঐক্যজোট সহ নতুন যোগ দেয় লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি),বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি,জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), খেলাফত মজলিস,জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ বাংলাদেশ মুসলিম লীগ(বিএমএল),ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) , বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ইসলামিক পার্টি, ন্যাপ ভাসানী, ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল) ও পিপলস লীগ। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে জাতীয় পার্টি (কাজীজাফর) ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল যোগ দিলে জোটটি বিশ দলীয় জোটে রূপান্তরিত হয়।
বর্তমানে বিএনপির নেতৃত্বে আছেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী খালেদা জিয়া। তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবার নির্বাচনে তিনি পাঁচটি আসনে নির্বাচন করেজয়ী হয়েছেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর থেকে তার বড় ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। যদিও তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্য এক প্রকার নির্বাসিত রয়েছেন। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে বর্তমানে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে বিএনপির রাজনীতি পরিচলনা করে যাচ্ছেন।
দলটির সহযোগী সংগঠন : জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল এবং অঙ্গ সংগঠন গুলো হচ্ছে: জাতীয়তাবাদী যুবদল, জাতীয়তাবাদী সেচ্ছাসেবকদল, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধাদল, জাতীয়তাবাদী মৎসজীবীদল,জাতীয়তাবাদী তাঁতীদল, জাতীয়তাবাদী ওলামাদল, জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংসদ (জাসাস), জাতীয়তাবাদী কৃষকদল।
পেশাজীবী সংগঠন হচ্ছে: জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, ডক্টর’স এ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ড্যাব), অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (অ্যাব), এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, শিক্ষক -কর্মচারীঐক্যজোট, শত নাগরিক কমিটি প্রমুখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here