মোবাইলে ভোট নেয়ার কথা ভাবছেন ইসি

0
204

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট: নির্বাচনের ভোট প্রদান প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করার পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভোট দেয়ার কথা ভাবছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি। এক্ষেত্রে অসুস্থ ও প্রবাসীদের অগ্রাধিকার বেশি থাকবে। এ পদ্ধতিটি প্রথমে স্থানীয় নির্বাচনে ব্যবহারে সফল হলে পরে জাতীয় নির্বাচনেও ব্যবহার হবে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউপির ভোট মোবাইলের মাধ্যমে নেওয়ার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। পরিকল্পনাটি কমিশন সভায় উঠানো হবে। কমিশন অনুমোদন দিলে পরে এটি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবে ইসি। সেক্ষেত্রে একটি নতুন প্রকল্প নেওয়া হতে পারে।

ইসি সূত্র জানায়, বর্তমান সনাতনী ভোট দান প্রক্রিয়ায় দেশের প্রায় ২০-৩০ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে পারেন না। সকল ভোটার (অসুস্থ ভোটারও) যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন সে লক্ষ্যে কাজ করছে ইসি। মোবাইলে ভোট দান পদ্ধতিটির মাধ্যমে একদিকে সবাই ভোট দিতে পারবেন, অন্যদিকে কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার চুরি বা দখলের চেষ্টা দূর, সরকারি চাকরিজীদের ভোটাদানসহ আরও অনেক সুবিধা তৈরি হবে। পদ্ধতিটি প্রথমে স্থানীয় নির্বাচনে ব্যবহারে সফল হলে পরে জাতীয় নির্বাচনেও ব্যবহার হবে।

জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ব্যালট ও ইভিএম দুটি ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ইভিএম ডিজিটাল পদ্ধতি হলেও কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে হয়। তাছাড়া ফল কাগজের ম্যাধ্যমে উপজেলায় পাঠাতে হয়। নতুন পদ্ধতিতে ভোটারদেরকেন্দ্রে না গিয়ে ঘরে বসে মোবাইলে ভোট দিতে পারবেন। এজন্যই ভোটগ্রহণ ব্যবস্থাকে ডিজিটাল ও যুগোপযোগী করার পরিকল্পনা করছে ইসি।

সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত ও ভোট প্রদান প্রক্রিয়া ডিজিটাল করতে ইসির পরিকল্পনাগুলো হচ্ছে-

১. ভোট প্রদানের জন্য সরকারিভাবে ১০ আঙুলের ছাপ ও আইরিশ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে যেকোনো একটি কোম্পানির সিমের মাধ্যমে ভোটারদের রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সুবিধা হবে, ভোটগ্রহণে নিয়োজিত কর্মকর্তাসহ সব নাগরিক এবং প্রবাসীর ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত হবে। ভোটগ্রহণকালে প্রাণহানির আশঙ্কা থেকে বেরিয়ে আসা যেতে পারে। কেন্দ্র দখলের প্রবণতা দূর করা যাবে।

২. যেসব ভোটার মোবাইলের মাধ্যমে ভোট দিতে চান নির্বাচনের আগে তাদের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। ভোটাররা ইসি সচিবালয় থেকে নির্দেশিত নম্বরে (১২৩) এসএমএস প্রদান করবেন। এনআইডি শাখার বিপরীতে একটি ডায়ালগ বক্স পাঠাবেন (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, নাম ও জন্মতারিখ), ভোটার ডায়লগ বক্স পূরণ করে এনআইডি শাখার নম্বরে এসএমএস প্রদানের পর এনআইডি শাখা অটোমেটিক ভোটারদের একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেবে যা ভোটগ্রহণের দিন ভোট প্রদানে ব্যবহার করবেন ভোটাররা।

এক্ষেত্রে সুবিধা হবে, বর্তমান ব্যস্ত জগতে ভোট দেওয়ার জন্য আর লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্ট করতে হবে না। প্রবাসী ভোটারদের ভোটদানে সুবিধা হবে। চাকরিজীবীরা রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ভোট দিলে নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটির প্রয়োজন হবে না। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা তাদের ভোট প্রদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন না। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ভোট প্রদানে অসুবিধা হবে না।

৩. ইসি রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি টাইমলাইন প্রদান করবে। টাইমলাইনের মধ্যে যেসব ভোটার রেজিস্ট্রেশন করবেন তাদের নাম বাদ দিয়ে রেজিস্ট্রেশন অফিসার ভোটকেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য ভোটার তালিকা মুদ্রণ করবেন। কোনো কারণে মোবাইল কাজ না করলে রেজিস্ট্রেশনকৃত ভোটারদের জন্য একটি আলাদা তালিকাও মুদ্রণ করা যেতে পারে। এক্ষত্রে সুবিধা হবে, রেজিস্ট্রেশনকৃত ভোটাররা বিকাল সাড়ে ৩টার মধ্যে তাদের ভোট প্রদান করবেন এবং নির্ধারিত সময়ের পর সার্ভারটি অটোমেটিক ভোটগ্রহণ হতে বিরত থাকবে। সার্ভারে প্রাপ্ত ফল প্রার্থীদের সামনে প্রিন্ট করতে হবে এবং প্রিন্ট কপি ৪টার মধ্যে সব প্রার্থীকে দিতে হবে।

৪. ভোটাররা রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর উল্লেখ করে পছন্দের প্রতীকে ভোট দেবেন। সার্ভারটি উপজেলা অফিসের হলরুমে থাকবে। এ হলরুমে সব প্রার্থী প্রথমে নিজ নিজ ভোট প্রদান করবেন এবং ভোটার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করবেন। উপজেলা কর্মকর্তা বিকাল ৪টায় প্রার্থীদের ফল হাতে দেবেন। এক্ষেত্রে সুবিধা হবে, ভোটগ্রহণের দিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী উপজেলা সদরে অবস্থান করায় কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। ভোটকেন্দ্রের ফলই চূড়ান্ত ফল না হওয়ায় কোনো প্রার্থী ব্যালট পেপার চুরি বা দখলের চেষ্টা করবেন না।

৫. কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্রে প্রার্থী কর্তৃক অবশ্য নিয়োগকৃত নির্বাচনি এজেন্টের কাছে ম্যানুয়ালি প্রাপ্ত ভোটের ফলের বিবরণী প্রদান করবেন। পিসাইডিং অফিসার কর্তৃক কেন্দ্রের ফল রিটার্নিং অফিসারের কাছে পৌঁছার পর সবার সামনে রিটার্নিং অফিসের সার্ভারের প্রাপ্ত ফলের সঙ্গে যোগ করে বিজয়ী প্রার্থী
ঘোষণা করবেন।

এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেন, ডিজিটাল ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার দিকে এগোতে হবে। ভোট জনগণের একটি মূল্যবান সম্পদ, সেটি যেন কোনোভাবে নষ্ট না হয়। মোবাইলে ভোট দিলে ওই ব্যক্তির সিকিউরিটি কী থাকবে সেটি আগে নিশ্চিত করতে কমিশনকে।

এদিকে বুধবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের এ যুগে বিজ্ঞান সবকিছু সহজ করে দিয়েছে। মোবাইল ফোনসেট থেকে টাকা পাঠানো যাচ্ছে। টাকা যেমন মানুষের প্রিয়, ভোটও প্রিয়। তাই ভোটও যেন মোবাইল থেকে দেওয়া যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। আগে ইভিএম হোক পরে মোবাইল ফোন থেকেও যেন ভোট দেওয়া যায় সেটি ভাবতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here