ছাত্রদের এমন আন্দোলনের পরও সচেতনতা নাই : প্রধানমন্ত্রী

0
645

আজ বুধবার জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সদস্য নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরীর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদনেতা শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরুর পর প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলানিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে পথচারীদের রাস্তায় চলাচলে সচেতন হতে ও আইন মানার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনেকটা আক্ষেপের সুরে তিনি বলেছেন, এ রকম একটি আন্দোলনের পরও মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়নি।

সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ক্ষেত্রবিশেষে পথচারী ও যাত্রীদের দায়ী করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘গাড়িচালকদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। যেখানে-সেখানে রাস্তা পার হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই দুর্ঘটনা থামবে। না হলে থামবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষের একটি অদ্ভুত মানসিকতা আছে, যেখানে-সেখানে রাস্তা পার হতে চায়। ছোট ছোট শিশুদের হাত ধরে রাস্তায় চলে যায়, যেখানে অনবরত গাড়ি চলছে। একটি দ্রুতগতির গাড়ি হাত দেখানোর সঙ্গে সঙ্গেই থেমে যেতে পারে না। কাছেই ফ্লাইওভার বা আন্ডারপাস থাকলেও সেখানে না গিয়ে হুট করে দৌড় দিয়ে রাস্তা পার হতে চায়। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা ঘটলে যারা রাস্তা পারাপার করছে, তাদের দোষ কতটুকু, সেটাও দেখা দরকার।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাস্তা পারাপারের সময় আমি মনে করি সকলকে অন্তত ট্রাফিক আইনটা মেনে চলা উচিত। এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটল, এ রকম একটা আন্দোলন হলো, তারপরও আমরা দেখি, মানুষের মধ্য সেই সচেতনতা নাই। যত্রতত্র রাস্তা পার হচ্ছে।’
ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে এক বাবার সড়ক প্রতিবন্ধক বেড়া ডিঙিয়ে রাস্তা পারাপারের একটি ছবির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সচেতনতার যথেষ্ট অভাব আমাদের। এত বড় একটা ঘটনার পরও দেখবেন, বাচ্চার হাত ধরে দ্রুত রাস্তা পার হচ্ছে। একটা মিনিট সময় নেবে না অথবা ওভারপাস বা আন্ডারপাস দিয়ে যাবে না। এই বিষয়টা সকলের দেখা দরকার।’

সরকারি দলের সাংসদ মো. আবদুল্লাহর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করতে কমিশন গঠনের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় আছে।
সরকারি দলের সাংসদ মনিরুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে। নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনায় দেশের মানুষ সুষ্ঠুভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। সুষ্ঠুভাবে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনকে চাহিদা অনুসারে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন তাদের অর্পিত সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব কার্যক্রম গ্রহণ করবে বলে সরকার প্রত্যাশা করে। সরকার আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বা গাড়িতে ধাক্কা লাগলে গাড়ির চালক জীবন বাঁচাতে দ্রুত চলে যেতে চেষ্টা করে। ফলে যার বাঁচার সম্ভাবনা ছিল, সেও বাঁচে না। কারণ এ ধরনের ঘটনায় আহতকে বাঁচানোর চেয়ে চালককে টেনে নামিয়ে মারধর করার আগ্রহই মানুষের বেশি থাকে। আইন কারও হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয়। মারধর বন্ধ হলে অনেক দুর্ঘটনা কমে যায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ দৌড় দিয়ে রাস্তা পার হতে যাওয়া বা দুটি বাস দাঁড়িয়ে আছে, যেকোনো সময় বাস ছাড়তে পারে, এমন অবস্থায় ফাঁক দিয়ে বের হতে গেলে বাসচালকের পক্ষে তা দেখা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় গাড়ি চলে গেলে দুর্ঘটনা ঘটবে। অথবা গাড়িতে বসার সময় জানালায় হাত ঝুলিয়ে রাখা বা মাথা বের করে রাখলে এ সময় আরেকটা গাড়ি ধাক্কা মারতেই পারে। যেকোনো সমস্যা হতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, এমন অবস্থায় গাড়ির চালককে কীভাবে দোষ দেওয়া যায়?
এর আগে নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কসংক্রান্ত ৯ দফা দাবির অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় ব্যক্তিগতভাবে মর্মাহত ও কষ্ট পেয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই ঘটনায় বাস দুটির চালক, হেলপার ও মালিকের বিরুদ্ধে মামলাসহ তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনের আওতায় কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী নিরাপদ সড়কের জন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
সরকারি দলের এ কে এম রহমতুল্লাহর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা শহরের চারপাশে এলিভেটেড রিং রোড করার পরিকল্পনা আছে।
রাজধানীর যানজট নিয়ে স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর বড় বড় সব শহরে যানজটের সমস্যা আছে। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি যত হচ্ছে, তাঁরা তত বেশি গাড়ি ব্যবহার করছেন। আর যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। আগে যে পরিবারের একটিও গাড়ি ছিল না, এখন তাদের মধ্যে কোনো কোনো পরিবার দুটোও গাড়ি চালাচ্ছে। যাঁর একখানা গাড়ি ছিল তাঁর এখন তিনখানা গাড়ি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যানজট যেমন সমস্যা, তেমনি যানজটে কিন্তু এটাও বুঝায় যে বাংলাদেশের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে অনেক উন্নত হচ্ছে। তাদের আর্থিক সচ্ছলতা বাড়ছে এবং তারা গাড়ি ব্যবহার করতে পারছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ঢাকার যানজট নিরসনে ত্বরিত ব্যবস্থা নিচ্ছে। বেশ কিছু ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে, আরও হচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণকাজে দেরির কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো কাজ করতে গেলে নানা ধরনের সমস্যা থাকে। মানুষের বসতি থাকে, মসজিদ থাকে, হাসপাতাল থাকে, মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকে। সেগুলোকে স্থানান্তর করে পুনর্বাসন করা সময়ের ব্যাপার। এ জন্যই সময়টা বেশি লেগে যায়।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here