কে. এম. রুবেল, ফরিদপুর : ফরিদপুরের সোনালী ব্যাংকের কামারখালী শাখার সাবেক জুনিয়র অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের টাকা জমা না দিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ নিয়ে বেশ কয়েকজন গ্রাহক সোনালী ব্যাংকের উধ্বর্তন কতৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। প্রতারনা করে গ্রাহকদের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্মসাত করায় গ্রাহক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানাগেছে, জুনিয়র অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন মধুখালী উপজেলার সোনালী ব্যাংক কামারখালী ব্রাঞ্চের দায়িত্বে থাকাকালিন সময়ে বেশ কয়েকজন গ্রাহকের টাকা তাদের একাউন্টে জমা না দিয়ে নিজেই আত্মাসাত করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রাহকেরা জাহাঙ্গীর হোসেনের উপর চাপ সৃষ্টি করেন।
টাকা দিয়ে দেয়া হবে বলে গ্রাহকদের সাথে টালবাহানা শুরু করেন। একপর্যায়ে বিষয়টি ব্যাংকের ম্যানেজার সুখেন্দ্র কুমার বিশ্বাসের কাছে জানান ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা। কিন্তু ম্যানেজার গ্রাহকদের বিষয়টি আমলে নেননি বলে অভিযোগ করেন গ্রাহকেরা। সম্প্রতি জাহাঙ্গীর হোসেনকে কামারখালী ব্রাঞ্চ থেকে সরিয়ে মধুখালী ব্রাঞ্চে দেয়া হয়। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা বেশ কয়েকবার মধুখালী ব্রাঞ্চে গিয়ে জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলেও গ্রাহকদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়। কোন উপায়ন্তর না দেখে কয়েকজন গ্রাহক মধুখালী ব্রাঞ্চের ম্যানেজার নাজমুল হাসানকে জানালে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি ধরা পরে।
কয়েকজন ভুক্তভোগী গ্রাহক জানান, ব্যাংকে টাকা জমা দেবার সূত্র ধরে জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে তাদের পরিচয় হয়। জাহাঙ্গীর হোসেন টাকা জমা দিয়ে দেবেন বলে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেন। পরে তাদের তাদের জমাদানের স্লিপও ধরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তারা জানতে পারেন তাদের একাউন্টে কোন টাকা জমা হয়নি। বিষয়টি জাহাঙ্গীর হোসেনকে জানালে সে নানা টালবাহানা শুরু করে। গ্রাহকদের টাকা না দিয়েই সে কামারখালী ব্রাঞ্চ থেকে মধুখালীতে বদলী হয়ে চলে আসে। কয়েকজন গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, তাদের কাছ থেকে জাহাঙ্গীর হোসেন প্রায় ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন।
সোনালী ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা নামপ্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, জাহাঙ্গীর হোসেন যেখানেই যান সেখানেই ‘পকেট ব্যাংকিং’ শুরু করেন। গ্রাহকের টাকা জমা না দিয়ে সেই টাকা দিয়ে ব্যবসা করেন। তার বিরুদ্ধে একাধিকবার কতৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দেয়া হলেও তেমন কোন লাভ হয়নি।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক কামারখালী শাখার ম্যানেজার সুখেন্দ্র কুমার বিশ্বাস জানান, বেশ কয়েকজন গ্রাহক আমার কাছে অভিযোগ করলে তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলি। কিন্তু তারা লিখিত কোন অভিযোগ দেননি। তবুও জাহাঙ্গীর হোসেনকে গ্রাহকদের কথা জানালে সে সবাইকে টাকা দিয়ে দিবে বলে আমাকে আশ্বস্ত করে। গ্রাহকের টাকা জমা না দিয়ে নিজের কাছে রাখার বিষয়টি ব্যাংকের উধ্বর্তন কতৃপক্ষকে জানালে জাহাঙ্গীর হোসনেকে মধুখালী শাখায় বদলী করা হয়।
মধুখালী ব্রাঞ্চের ম্যানেজার নাজমুল হাসান জানান, গ্রাহকদের কাছ থেকে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। তাদের লিখিত ভাবে জানানোর কথা বলেছি। বিষয়টি নিয়ে জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেছেন বেতন পাবার পর গ্রাহকদের সব টাকা শোধ করে দিবেন। ম্যানেজার আরো বলেন, এ ধরনের একজন ব্যক্তিকে নিয়ে কাজ করা কঠিন। তাতে ব্যাংকের বদনাম হয়। জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাখায় কর্মরত থাকাকালীন সময়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে।
সোনালী ব্যাংক ফরিদপুর প্রিন্সিপাল অফিসের ডিজিএম মো. সামসুল হক বলেন, গ্রাহকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এ ধরনের কোন অভিযোগ এখনো পাইনি।