ছাত্রদের এমন কড়া আন্দলনের পরও গাড়ির গতি কমছে না, মানছে কোন নিয়ম

0
339

জানা গেছে, অনেক গাড়িচালকই জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চালানোর নিয়ম সম্পর্কে জানেন না। এ পরিস্থিতিতে নগরপরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, লাইসেন্স দেওয়ার আগেই গাড়িচালকদের নিয়ম শিখতে হবে।

গতকাল রোববার সকালে মেরুল সড়কে দেখা যায় এ দৃশ্য। গত পাঁচ দিনে পল্টন, বিজয়নগর মোড়, কাকরাইল, শান্তিনগর, শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট ঘুরে একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেব্রা ক্রসিংয়ে পথচারীদের পারাপারের সময় কিংবা হাত দিয়ে ইশারা দেওয়া হলেও গাড়ির গতি কমে না। পথচারীরা গাড়ির ফাঁকে ফাঁকে কিংবা কখনো দৌড়ে রাস্তা পার হন। আর যেসব জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ আছে, সেসব জায়গায় সংকেত দিলেও সময়মতো গাড়ির গতি কমছে না। গাড়িগুলো থামছে জেব্রা ক্রসিং পেরিয়ে বা এর ওপর।

আশরাফুল হক সন্তানকে নিয়ে সড়ক পার হওয়ার জন্য জেব্রা ক্রসিংয়ের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও গাড়ির গতি কমার কোনো লক্ষণ দেখছিলেন না তিনি। একপর্যায়ে গাড়ি একটু দূরে দেখে রাস্তা পার হতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ দেখলেন একটি বাস দ্রুতগতিতে ছুটে আসছে। এ সময় তিনি সন্তানকে নিয়ে দৌড়ে সড়ক পার হন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বাজার, বিপণিবিতান ও জনসমাগমের এলাকায় পথচারীদের নিরাপদে ও সহজে পারাপারের জন্য জেব্রা ক্রসিং দেওয়া হয়। নিয়ম হলো, জেব্রা ক্রসিংয়ের সামনে গাড়ির গতি কমিয়ে আনতে হবে। আর সাদা দাগের আগে গাড়ি থামাতে হবে।

গত আগস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর থেকে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে শতাধিক জেব্রা ক্রসিং ও গতিরোধক দেওয়া হয়। আরও বেশ কিছু জেব্রা ক্রসিংয়ের কাজ চলছে। তবে রাজধানীতে ঠিক কতটি জেব্রা ক্রসিং আছে, সেই সংখ্যা জানা যায়নি।

বিজয়নগর মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের একজন সার্জেন্ট বলেন, ‘৬০ ভাগের বেশি চালক ট্রাফিক আইন জানেন না। আর জেব্রা ক্রসিংয়ের আগে থামা ও গাড়ির গতি কমানোর বিষয়েও তাঁরা সচেতন নন। আমরা রাস্তায় চলা গাড়িগুলোকে ট্রাফিক আইন মানানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

গতকাল এই মোড়ে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি থামার সংকেত দিলে গাড়িগুলো থামাতে থামাতে জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর চলে আসে। স্বেচ্ছাসেবীরা সে সময় সেগুলোকে পেছনে নিয়ে যেতে বলেন। কয়েকটি রিকশাকে তাঁরা ঠেলে জেব্রা ক্রসিং থেকে সরিয়ে দেন।

কাকরাইল মোড়ে কথা হয় কামরুল ইসলাম নামের এক প্রবীণ ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি জেব্রা ক্রসিং দিয়ে সড়ক পার হই। কিন্তু প্রায়ই সময় গাড়ি জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর থামে। এ কারণে অনেক সময় রাস্তা দিয়েই পার হতে হয়। স্বেচ্ছাসেবক ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে ঠিক করতে পারছেন না।’

জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর যে গাড়ি থামানো যায় না, তা জানেন না তুরাগ বাসের চালক মো. সবুজ। মালিবাগ রেলগেট এলাকায় বলেন, ‘এগুলো দেখাই যায় না। মানুষ যেদিক দিয়া ইচ্ছা রাস্তা পার হয়। এতে আমাদের গাড়ি চালাইতে সমস্যা হয়।’ আর কয়েকজন রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল জেব্রা ক্রসিংয়ের কী কাজ তা তাঁরা জানেন না। প্রাইভেট কারের একজন চালক বলেন, কেউ নিয়ম মানে না। তাই তিনিও মানেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মীর রেজাউল আলম বলেন, ‘গাড়ি জেব্রা ক্রসিংয়ের আগে সাদা দাগের আগে থামানোর নিয়ম। কিন্তু দেখা যায় গাড়িচালকেরা নিয়ম মানেন না। জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপরই দাঁড়ান। যাঁরা গাড়ি চালান, তাঁরা এসব নিয়ম জানেন বলে আমরা ধরে নিই। তাঁদের যাঁরা লাইসেন্স দিচ্ছেন, তাঁরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন। আর পথচারীদেরও এদিক–সেদিক দিয়ে পারাপার না হয়ে নিয়ম মেনে পার হওয়া উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘সড়কে চালক ও পথচারীরা যাতে নিয়ম মানেন এবং নিরাপদে চলাচল করতে পারেন, সে জন্য পুলিশ সড়কে মাসব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। সুনাগরিক হিসেবে সবার দায়িত্ব ট্রাফিক নিয়ম মেনে গাড়ি চালানো ও পথ চলা। সড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এসব বিষয়ে দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে।’

এ বিষয়ে সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের সভাপতি নগরবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, চালকেরা কোনো অবস্থাতেই গাড়ির চাকা জেব্রা ক্রসিংয়ে থামাতে পারবেন না। জেব্রা ক্রসিং এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে মানুষের চোখে পড়ে। জেব্রা ক্রসিংয়ের আগে সংকেতচিহ্ন থাকতে হবে। যাতে চালকেরা আগে থেকেই জেব্রা ক্রসিংয়ের বিষয়টি জানতে পারেন এবং গাড়ির গতি কমাতে পারেন। এ ছাড়া লাইসেন্স দেওয়ার আগে গাড়িচালকদের নিয়মগুলো শিখতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here