দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উত্তর ও দক্ষিণ গেটে অবস্থান নিয়ে নতুন করে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছে আন্দোলনরত শ্রমিক ও খনির জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ২০ গ্রামের মানুষ।
এতে করে খনির ভেতরে আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি কনসোর্টিয়ামের ৩০০ চীনা কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বাংলাদেশি ১৭৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের ১৩ দফা ও ক্ষতিগ্রস্ত ২০ গ্রামের সমন্বয় কমিটির ৬ দফা দাবি আদায়ে শনিবার সকাল থেকে এ অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে। অনির্দিষ্টকালের অবরোধে বর্তমানে ৪৭৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী অবরুদ্ধ রয়েছেন।
জানা যায়, গত ১৩ মে থেকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক ইউনিয়ন ১৩ দফা দাবিতে ও ক্ষতিগ্রস্ত ২০ গ্রামের মানুষ ৬ দফা দাবিতে ধর্মঘট কর্মসূচি পালনের ডাক দেয়। বুধবার (৩০ মে) নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা জানায়, শুক্রবারের (০১ জুন) মধ্যে দাবি আদায় না হলে শনিবার (০২ জুন) থেকে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
দাবি আদায় না হওয়ায় পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার সকাল থেকে কয়লা খনি শ্রমিক ইউনিয়ন ও খনির জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ২০ গ্রামের মানুষ খনির উত্তর ও দক্ষিণ গেটে অবস্থান নিয়ে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে।
জানা গেছে, শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে খনিতে কয়লা উৎপাদন কমে গেছে। বাংলাদেশি শ্রমিকরা আন্দোলন করায় চীনা শ্রমিক দিয়ে দিনে একটি শিফটে কয়লা উত্তোলন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি কনসোর্টিয়াম। ফলে কয়লা উৎপাদন ৩ হাজার টন থেকে ৮০০ থেকে ১ হাজার টনে নেমে আসে।
এদিকে, খনি থেকে প্রতিদিন বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করতে হয় ২ হাজার ৫০০ টন থেকে ৩ হাজার টন। কয়লা উৎপাদন কমে যাওয়ায় কয়লা ইয়ার্ডে কয়লার মজুদ দিন দিন কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত ১৫ মে সকালে কয়েকজন কর্মকর্তা খনির ভেতরে প্রবেশ করাকে কেন্দ্র করে কর্মকর্তাদের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়। এ ঘটনায় খনি কর্তৃপক্ষ দুটি ও শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষে একটি মামলা করা হয়।
এমন পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে খনিজ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রশাসন) মোস্তফা কামালকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটি গত ২৬ মে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে শ্রমিকদের কাজে যোগদানের অনুরোধ জানায়। কিন্তু শ্রমিকরা কাজে যোগ দেননি।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, চুক্তি অনুযায়ী রেশন, সাপ্তাহিক ছুটি ও বোনাস দেয়ার কথা থাকলেও গত ৯ মাস থেকে শ্রমিকরা তা পাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ফিরে যাওয়ার কোনো পথ নেই।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীর সমন্বয়ক কমিটির আহ্বায়ক মশিউর রহমান বুলবুল ও সদস্য সচিব মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের জায়গা-জমি বাপ-দাদার কবর সব খনিতে মিশে গেছে। অথচ আমাদেরকে বহিরাগত হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। তাই আন্দোলনে নেমেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন বলেন, চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি কনসোর্টিয়ামের হয়ে শ্রমিকরা কাজ করেন। তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বেতন-ভাতা সুযোগ-সুবিধা কি দেবে না দেবে সেটা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিষয়। কিন্তু বার বার আমাদেরকে জিম্মি করছে তারা।
তিনি বলেন, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান শ্রমিকদের বার বার কাজে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু শ্রমিকরা সেই আহ্বানে সাড়া দেননি। এমন পরিস্থিতিতে কি করবে তা পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ জানে। তবে আমরা অবরুদ্ধ অবস্থায় আছি। দুটি গেটের কোনোটি দিয়ে আমাদেরকে বের হতে দিচ্ছে না তারা। এই অবস্থায় জিম্মি হয়ে পড়েছি আমরা।