চলুন ঘুরে আসি বিলাইছড়ি

0
262

এবি তানভীর: যারা ট্রেক করতে পারেন/ভালবাসেন, এমন ঝর্ণা-প্রেমীদের জন্য ২দিনের বেস্ট ট্যুর প্লান।

স্পট সমূহ :
১) ন’কাটা ঝর্ণা
২) মুপ্পোছড়া ঝর্ণা
৩) গাছকাটা ঝর্ণা
৪) ধূপপানি ঝর্না

বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় ঢাকা থেকে কাপ্তাই এর সরাসরি বাসে উঠতে হবে (ভাড়া ৫৫০ টাকা) যাতে শুক্রবার সকাল ৮.৩০ টায় কাপ্তাই হতে বিলাইছড়ির লোকাল বোট ধরতে পারেন। কারন এর পরের লোকাল বোট ১০:৩০ টায়। আপনি চাইলে রিজার্ভ বোটও নিতে পারেন (ভাড়া ১০০০-১৫০০টাকা)।।

ভোরে কাপ্তাই পৌছে সকালের নাস্তা করে শনিবার রাত ৮:৩০ টার ফিরতি টিকেট করে নিবেন। কারন কাপ্তাই থেকে এটাই ঢাকার শেষ বাস। বাস স্ট্যান্ড থেকে সোজা হাটলেই কাপ্তাই ঘাট। ঠিক ৮:৩০ টায় (২মিনিট আগেও না পরেও না) বোট ছাড়ে। ভাড়া ৫৫ টাকা।।

প্রায় ২ঘন্টার এই বোট জার্নিতে, কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য আপনার রাতের বাস-জার্নিকে অনেকটাই ভুলিয়ে দিবে। পথে আর্মির প্রথম চেকপোস্ট পড়বে। সেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। আমরা সকাল ১০:৩০ টায় বিলাইছড়ি পৌছে সোজা হাসপাতাল ঘাটের দিকে যাই। সেখানে ‘নিরিবিলি বোর্ডিং’ এ ২ রুম ঠিক করি। (৪ জনের ডাবল বেডের রুম ৫০০ টাকা, ২ জনের সিঙ্গেল বেডের রুম ৩০০ টাকা- Fixed)।।

এরপরে দুইদিনের জন্য বোট ঠিক করে নিবেন। ২দিনের ৪টা ঝর্নার জন্য বোট ভাড়া ২৮০০-৩৫০০ টাকা। হোটেলে ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে বোটে উঠে পরেন। রওনা হবার আগে ‘ভাতঘর’ নামের হোটেল থেকে দুপুরের খাবার প্যাকেট করে নিয়ে নিবেন (ডিম ভাজি+আলু ভর্তা+ডাল+ভাত= ৬৫ টাকা)।।

৩০ মিনিট পর ১১:৩০ টার দিকে মুপ্পোছড়া ট্রেইলের মাথায় (বাঙ্গালকাটা) পৌছে যাবেন। মাঝিকে বলে রাখলে মাঝিই গাইড ঠিক করে রাখবে (৫০০ টাকা-Fixed)। প্রায় ১:৩০ ঘণ্টা ট্রেকিং-এর পর মুপ্পোছড়া পৌছাবেন। পথে ৫/৬ টা ছোট ছোট ঝর্ণা দেখতে পাবেন। ন’কাটা ঝর্ণার মুখ পাহাড় ধসের কারনে ভেঙ্গে গেছে, তাই আমাদের মত মুখ দেখতে গিয়ে সময় নষ্ট করবেন না। প্রায় ১ ঘণ্টা ঝর্ণার সৌন্দর্য দেখে (পড়ুন পানিতে দাপাদাপি করে) নৌকায় চলে আসবেন। নৌকা থেকে নেমে আরও প্রায় ১:৩০ ঘণ্টার মত হাটলে আপনি গাছকাটা ঝর্ণা দেখতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোন গাইড লাগবে না কারন মাঝিই নিয়ে যাবে, ঐভাবেই কথা বলে নিবেন। এভাবেই প্রথম দিনের যাত্রা শেষ করে হোটেল এ ফিরবেন। গোছল করে রাতের খাবার (পাহাড়ি মুরগি+আলু ভর্তা+ডাল+ভাত= ১১০ টাকা) খেয়ে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরবেন কারন পরের দিন ভোর ৫ টায় উঠতে হবে।।

এখানে বলে রাখি আপনি যদি সময়ের সদ্ব্যবহার না করেন তাহলে গাছকাটা ঝর্ণা দেখার সময় পাবেন না। এক্ষেত্রে বিকালে নৌকায় কাপ্তাই লেক ঘুরে সময় কাটাতে পারেন।।

শনিবার ভোর ৫টায় উঠে রেডি হয়ে ৫:৩০টার মধ্যে নৌকায় চলে যাবেন। রাতে ডিনার করার সময় সকালের নাস্তার (ভুনাখিচুড়ি+ডিমভাজির= ৬০ টাকা) অর্ডার দিয়ে রাখবেন। তারা ভোরে প্যাকেট করে রেখে দিবে। সাথে এক কলসি পানি নিয়ে নিবেন। প্রায় ২ ঘণ্টা পর উলুছড়ি পৌছে যাবেন। পথে আরও ২টা আর্মি চেকপোস্ট পড়বে।।

উলুছড়ি থেকে ছোট ডিঙি নৌকা নিতে হবে। প্রতি নৌকায় (৩০০টাকা) ৪/৫ জন বসতে পারে। সাথে গ্রুপ হিসেবে (সংস্কার চাঁদা ২০০ টাকা+ গাইড ৫০০ টাকা=) ৭০০ টাকা- Fixed দিতে হবে। ২০ মিনিটের মত নৌকা জার্নি করে হাটা শুরু করতে হবে। পথে ২ টা পাহাড় পার করতে হবে। প্রায় ১.৪৫ ঘন্টার মতো অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে ধুপপানি পাড়ায় পৌঁছাবেন। এখানে একটা দোকান আছে সেখানে চাইলে হালকা কিছু খেয়ে নিবেন। এর পর সবচেয়ে রিস্কি একটা ঢাল পার করতে হবে। ২৫-৩০ মিনিট পর পৌছে যাবেন কাক্ষিত লক্ষ্য- ধূপপানি ঝর্ণায়। এর এক ঝলক আপনার ৪:৫০ ঘণ্টার জার্নিকে ৪.৫ সেকেন্ড ভুলিয়ে দিবে। এত বাতাস ছিল যে ব্যালেন্স রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। ১০০ ফুটেরও বেশি উচ্চতার এই ঝর্ণার পানি নিচে পরতে পরতে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ধোয়ার সৃষ্টি করে। এই জন্যই এর নামকরণ করা হয়েছে ধূপপানি ঝর্ণা। চারপাশ মোটামুটি আবদ্ধ থাকায় বাতাসে পানির কণা এত থাকে যে, আপনি কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস বের করতে পারবেন না- যদি না সেটা ওয়াটার প্রুফ হয়।।

এখানে প্রায় ১ ঘন্টার মত গোছল করার সময় পাবেন। ঝর্ণার একদম নিচে যেতে হলে অবশ্যই গাইডের সাহায্য নিবেন। কারন কয়েক জায়গায় প্রায় ৬ ফিট গর্ত আর পানির নিচে এলোমেলো বড় বড় পাথর আছে।।

১১ টার মধ্যে রওনা দিতে হবে। ফেরার পথে ধূপপানি মন্দির দেখে আসবেন। সর্বোচ্চ ১১:৩০ টায় মধ্যে আপনাকে ধূপপানির মায়া ত্যাগ করে ফিরতে হবে নতুবা বিলাইছড়ি থেকে ৪:৩০টায় ছেড়ে যাওয়া শেষ লোকাল বোট ধরতে পারবেন না।।

সতর্কতা:
১) আপনাকে অবশ্যই সময়ের সাথে চলতে হবে। কারন এখানের লোকাল বোট + রাঙ্গামাটি থেকে ফিরতি বাস( রাত ৮:৩০) Sharp time এ চলে।
২) এখানে Teletalk আর Robi ছাড়া অন্য কোন সিমের নেটওয়ার্ক থাকে না।
৩) ধুপপানি হচ্ছে এক বৌদ্ধ বিক্ষুর তীর্থ স্থান। তাই এখানে এসে চিল্লাপাল্লা ও উচ্চবাচ্য করবেন না।

যা সাথে থাকতেই হবে:
১) ভোটার আইডি কার্ড (1st priority)
(অন্যথায় কলেজ/ভার্সিটি আই,ডি,কার্ড বা জন্মসনদ/পাসপোর্ট এর ফটোকপি)
২) যথেষ্ট পরিমান পলিথিন
৩) ট্রেক করার উপযোগী জুতা/সেন্ডেল

বাজেট:
বাস ভাড়া (৫৫০*২)= ১১০০ টাকা
কাপ্তাই থেকে বিলাইছড়ি বোট (৫৫*২)= ১১০ টাকা
শুক্রবার দুপুরের ও রাতের খাবার + শনিবারে সকালের নাস্তা (৬৫+১১০+৬০)= ২৩৫ টাকা
হোটেল, মাঝি, ডিঙি নৌকা, গাইড (১০০০+ ৩০০০+১০০০+৫০০= ৫৫০০/৮জন)= ৬৮৫ টাকা
অন্যান্য খরচ =২৫০ টাকা, ৮ জনের গ্রুপে সর্বমোট প্রায় ২৪০০ টাকার মত পরেছিল।

মাঝির মোবাইল নং:
01558121103 (নিত্য রঞ্জন)
নৌকা বেশ বড় এবং মাঝি অত্যন্ত আন্তরিক ছিল।
উলুছড়ি থেকে নেয়া গাইড ছিল ‘টাইগার’।

বি.দ্র. আমরা যেদিন ঝর্ণা দেখতে যাই, তার আগের ২/৩ দিন ভালই বৃষ্টি হয়েছে, এমনকি আমাদের ট্রেকিং এর মাঝেও বেশ লম্বা সময় ধরে বৃষ্টি ছিল। তাই রাস্তা পিচ্ছল এবং ঝর্ণায় যথেষ্ট তেজ ছিল। শীতকালে গেলে বৃষ্টির প্রকোপ থেকে রক্ষা পাবেন। আমরা ঢাকা ফিরবার পথে কাপ্তাই বাস স্ট্যান্ড পৌঁছেছিলাম ৮:৪০ এ, কিন্তু শেষ বাস ছিল ৮:৩০ এ। মাত্র ১০ মিনিট দেরি করে আসায় আমরা বাস পাই নি। পরে ৩ বার সিএনজি চেঞ্জ করে চট্টগ্রাম বাস স্ট্যান্ড- দামপাড়া যাই। সেখান থেকে ঢাকার বাসে উঠি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here