তৌহিদুজ্জামান তন্ময়: রুট পারমিট না থাকায় কোনো লেগুনা চলতে দেয়া হবে না বলে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার এই ঘোষণার পর থেকে রাজধানীতে লেগুনা চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে যাত্রীদের গন্তব্যে যেতে হয়েছে বিকল্প পথে। এতে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে চরমে।
বুধবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ঢাকার অল্প কিছু রুট ছাড়া বেশিরভাগ রুটের লেগুনা স্ট্যান্ডে গিয়ে কোনো লেগুনা দেখা যায়নি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে মিরপুর ১ নম্বর ও মিরপুর ১০ নম্বরে লেগুনা স্ট্যান্ডে কোনো লেগুনা চলাচল করছে না। মিরপুর ১ থেকে ধানমণ্ডি ১৫ তে যাওয়ার জন্য শফিকুল কায়েস নামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী ব্রেকিংনিউজকে বলেন, সকাল ১০টায় আমার পরীক্ষা কিন্তু লেগুনা না থাকার জন্য আমি কিভাবে যাবো এখন বুঝছি না।
মিরপুর ১০ এ দাঁড়িয়ে থাকা সিনথিয়া কানন জানান, আমি আশা ইউনিভার্সিটিতে পড়ি, এখন শ্যামলী যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থেকেও লেগুনা না পেয়ে বাধ্য হয়েই রিক্সায় যাচ্ছি।
লেগুনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ফার্মগেট, গুলিস্তান, উত্তরা। এসব রুটে অসংখ্য লেগুনা চলাচল করলেও আজ দুই একটি ছাড়া কোনো লেগুনা দেখা যাচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করতে আসা শিক্ষার্থীরা ফার্মগেটে কোচিং সেন্টারে যাতায়াতের জন্য প্রধান যানবাহন হিসেবে লেগুনা ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু আজ থেকে লেগুনা বন্ধের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করতে আসা শিক্ষার্থীরা পড়েছে চরম দুর্ভোগে।
মোহাম্মাদপুরের কৃষি মার্কেট থেকে ইউসিসিতে কোচিং করতে আসা জাকির হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, কৃষি মার্কেট থেকে ১৫ টাকা দিয়ে লেগুনায় চলে আসতাম ফার্মগ। কিন্তু আজ বাস ও রিক্সায় করে এসে খরচ হলো প্রায় ৪০ টাকার মতো। এভাবে হঠাৎ করে লেগুনা বন্ধ করে দেওয়া মোটেও ঠিক হয়নি।
ফার্মগেটের ট্রাফিক পুলিশের একজন সার্জেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ফার্মগেট সড়কে প্রায় ১ হাজার লেগুনা চলাচল করে। ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ অভিযানের আগে এসব লেগুনার ৯০ শতাংশের কাগজপত্র ছিল না। অভিযানের ফলে ৪০ শতাংশ কাগজপত্র ঠিকঠাক করেছে। এখনো ৫০ শতাংশ গাড়ির কাগজপত্র নেই। লাইসেন্সহীন চালকের সংখ্যা যেখানে ৭০ শতাংশ ছিল কিন্তু অভিযানের পর সেটি ৪০ শতাংশে নেমেছে।
ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের সামনের সড়ক ও ইন্দিরা রোডে লেগুনা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইন্দিরা রোড থেকে মোহাম্মদপুর ও জিগাতলায় লেগুনা চলে অন্তত দেড় হাজার। প্রতিদিন লাইনম্যানকে জমা দিতে হয় ২০০ টাকা।
মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) ডিএমপি কমিশনার সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছেন রাজধানীতে লেগুনা চলাচল করতে পারবে না। শহরতলীতে বা শহরের উপকণ্ঠে লেগুনা সীমিত আকারে চলাচল করতে পারবে। কারণ এসব লেগুনার কারণেই সড়কে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। দুর্ঘটনার জন্য অনেকাংশে এসব লেগুনা দায়ী। ডিএমপি কমিশনারের এ ঘোষণার পরপরই রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো থেকে লেগুনার সংখ্যা কমতে থাকে।
এদিকে ফার্মগেটের লেগুনা চালক নয়ন মিয়া বলেন, আমাদের পেটে লাথি পেরে লাভ কি? দৈনিক লেগুনা চালিয়ে যা ইনকাম করতাম তাতে আমার সংসার ভালোভাবেই চলছিল। কিন্তু এখন আমরা যারা লেগুনা চালায় তারা কি করবো? কিভাবে খাবো? এর জবাব কেউ দিতে পারবেন?
তিনি আরও বলেন, আমরা মানুষের সেবা করি। আমাদেরও পেট আছে। আমরা চাই, যেন মানবিক দিক বিবেচনা করে আমাদের রুট পারমিট দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে লেগুনা নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। তবে তার আগে জনগণের স্বার্থে বিকল্প যানের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে অন্যান্য সড়কে লেগুনা চলাচল নিষিদ্ধ করা যাবে না। তা করা হলে সেটা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।