কাল্পনিক মামলার বন্যায় ভাসেছ দেশ: রিজভী

0
220


বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো কারণ ছাড়াই কাল্পনিক মামলার বন্যায় দেশকে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সংবাদ সম্মেলনে  তিনি এ কথা বলেন।

রিজভী বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন প্রতিনিয়ত হামলা-মামলার শিকার। কোন কারণ ছাড়াই কাল্পনিক মামলার বন্যায় ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে দেশকে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে এই ভোটারবিহীন সরকার। কোন ওয়ার্ডেই তিন জন নেতাকর্মী একসাথে চলাফেরা করতে পারছে না। এর ওপর ক্রমাগত বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ীর সামনে রাতের অন্ধকারে এসে থামে কালো টিনটেড গ্লাস দিয়ে ঢাকা মাইক্রোবাস। কর্কশ কড়া নাড়ার শব্দে ভেঙে চুরে খান খান হয়ে যায় রাতের নিস্তবদ্ধতা। বাসাবাড়ি তছনছ করে চলে চিরুনী তল্লাসী। তুলে নিয়ে যায় কিশোর, তরুণ, ছাত্রদল, যুবদল ও অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের। এমনকি বয়স্ক বিএনপি নেতাকর্মীদেরও।

রিজভী বলেন, খাল, বিল, নদীধারে মাইক্রো থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে যেতে বলে। তারপর গুলি করা হয় পেছন থেকে। তা না হলে কিছুদিনের জন্য, নয়তো চিরদিনের জন্য গুম করে অদৃশ্য করা হচ্ছে। তা না হলে লকআপে চলানো হয় অকথ্য অত্যাচার নির্যাতন। বিরোধী দলের প্রতি সরকারের নীতি হচ্ছে-বিরোধী নেতাকর্মীদের ধড় থেকে মুন্ডু খসিয়ে ফেলার নীতি।

২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, এই মামলায় কয়েক দফা চার্জশিট দেয়া এবং বিচার কার্য অনেক দুর এগিয়ে যাওয়ার পর বিচারিক আদালত থেকে চার্জশিট ফিরিয়ে এনে সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হয় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। যা ছিল বেআইনী ও নজীরবিহীন। এতে মূখ্য উদ্দেশ্য ছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মামলায় জড়ানো। ২০১১ সালের ৭ই এপ্রিল মুফতি হান্নানকে অমানুষিক নির্যাতনের করে তাকে দিয়ে আদালতে তারেক রহমানের নাম বলানো হয়।

তারেক রহমানের নাম বলানোর পর মুফতি হান্নান সুযোগ খুঁজছিলো তা প্রত্যাহারের। তা না হলে পুনরায় রিমান্ডে নিয়ে ‘ক্রসফায়ারে’ মৃত্যুবরণ করতে হবে এই আশঙ্কায় চার্জশিট দাখিলের জন্য প্রহর গুনতে থাকে। অবশেষে ২০১১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সেই সুযোগ মুফতি হান্নান পেয়ে যায়। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিনের আদালতে মুফতি হান্নান লিখিতভাবে জানান, ২০১১ এর ৪ এপ্রিল কাশিমপুর কারাগার থেকে এনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলগেটে জেল সুপার লিখিত কাগজ স্বাক্ষর করতে বলে। স্বাক্ষর না করলে অশ্লীল গালিগালাজ করে, বিষ প্রয়োগে মেরে ফেলার কথা বলে।

জেল সুপার তৌহিদ হত্যার হুমকি দেয়। দু’দিন পর সিআইডি’র এএসপি ফজলুল কবিরসহ অন্যান্য অফিসাররা এবং আগে থেকে ম্যাজিষ্ট্রেটের রুমে বসে থাকা কাহার আকন্দ আমার দিকে একটি কাগজ ধরিয়ে দেয়। সেখানে তারেক রহমান, হারিস চৌধুরী, পিন্টু ও বাবরসহ অনেকের নাম জড়িত করা হয়েছে দেখতে পাই। অত:পর জবানবন্দীতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানালে আমাকে জেলের ভিতরে হত্যা করাসহ রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করার হুমকি দেয়া হয়। এরপর রাত ১১টার দিকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বললে আমি অস্বীকার করি।

উল্লেখ্য যে, ম্যাজিষ্ট্রেটের সামনে উপস্থিত করার আগে বিভিন্ন সময় আমাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। ফজলুল কবির ও কাহার আকন্দ দু’জনই আমার চোখে কালো কাপড় বেঁধে র্যাবের কাছে নিয়ে যেতো। এভাবে নির্যাতনের অভিনব কায়দা প্রয়োগ করে মুফতি হান্নানের নিকট থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা চালানো হয়।

বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, গতকাল বিএনপির উদ্যোগে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি সম্বলিত ৭ দফা এবং সুশাসনের অঙ্গীকার সম্বলিত ১২ দফা লক্ষ্যসহ একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসক বরাবরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে হস্তান্তরের কর্মসূচি পালন করা হয়। এই কর্মসূচি পালনকালে সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দেশের কয়েকটি জেলায় নেতাকর্মীদের উপর বেধড়ক লাঠিচার্জে মিছিল পন্ড করে দিয়েছে। পাইকারী হারে গ্রেপ্তর এবং আক্রমণে অনেক নেতাকর্মীকে আহত হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও জেলায় কর্মসূচি পালনকালে বিনা উস্কানীতে পুলিশ হামলা চালিয়ে ব্যানার ছিনিয়ে নেয়। পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটায় প্রায় ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়। অনেকেই গুরুতর আহত হয়ে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।  চট্রগ্রাম উত্তর জেলায় পুলিশ আকস্মিক আক্রমণ চালিয়ে জেলা বিএনপি নেতা প্রফেসর কুতুবউদ্দিন, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপি নেতা ফজলুল হকসহ ৭ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তর করে।

মুন্সিগঞ্জে বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাই স্মারকলিপি প্রদানের আগে সমাবেশে বক্তব্য রাখার পরপরই পুলিশের অতর্কিত লাঠিচার্জে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। এসময় বিএনপি নেতা মো. রানা পুসতি, আলম সিকদার, হাসান মিয়া, আবদুল বাতেনসহ ১০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করে। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অভিমূখে বিএনপি’র একটি মিছিল এগিয়ে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। গাজীপুর জেলা বিএনপি’র দলীয় কার্যালয় পুলিশ সারাদিন অবরুদ্ধ করে রাখে। ফেনী জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন সুমনকে গতরাতে পুলিশ গ্রেপ্তর করে।

দলের পক্ষ থেকে গতকাল স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচিতে পুলিশের ন্যাক্কারজনক হামলা, নেতাকর্মীদেরকে লাঠিচার্জের মাধ্যমে আহত করা এবং গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান রিজভী। একই সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবী জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, দপ্তর সহ সম্পাদক মুনির হোসেন, বেলাল হোসেন প্রমুখ ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here