মার্কেন্টাইল ব্যাংক পিএলসি বাংলাদেশের একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ -এর অধীনে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসাবে এটি ১৯৯৯ সালের ২ জুন যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন আব্দুল জলিল। ব্যাংকটি ২০০৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০৪ সালে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ -এ নিবন্ধিত হয়।
দেশইনফো.কম.বিডি-এর সম্পাদক সাজেদা হকের সাথে খোলামেলা আলোচনা করেছেন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মতি উল হাসান। ব্যাংকিং খাতের সমস্যা, সমাধান, অর্থ পাচার, মার্কেন্টাইলের সবল দিকসহ সরকারি নানান উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়।
দেশইনফো: বর্তমানে ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে আপনি কতটা সন্তুষ্ট?
মতি উল হাসান: আমি তো মনে করি, আগের তুলনায় এখন ব্যাংকিং সেক্টর অনেক বেশি স্থিতিশীল এবং আশাব্যঞ্জক। ব্যাংক চলেই মূলত মানুষের আস্থার উপর নির্ভর করে। দুর্বল ব্যাংক, সবল ব্যাংক ঘোষণা দিয়ে মানুষের সেই আস্থাটায় আঘাত করা হয়েছিলো বলে আমি মনে করি। কিন্তু মানুষ এখন আবারো ব্যাংকমূখী হচ্ছেন। ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে বলতে পারেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের মিডলম্যানশীপ উদ্যোগটা অত্যন্ত কার্যকর হয়েছে বলে আমার মনে হয়। তারপরও শতভাগ আস্থা ফিরে আসতে আরও কিছুটা সময় লাগতে পারে।
দেশইনফো: আরও কতদিন লাগতে পারে?
মতি উল হাসান: কারণ সব ব্যাংকের অবস্থা এবং অবস্থান তো আর একরকম না। কারও লিকুইডিটি সংকট আছে, কারও ঋণ রিকভারীতে সমস্যা আছে। আবার কারও কারও নিজেদের পোর্টফোলিও গোছাতেও হয়তো একটু সময় লাগছে। সব মিলিয়ে আমি বর্তমান ব্যাংকিং খাত নিয়ে বেশ সন্তষ্ট। এছাড়া ফরেন একচেঞ্জ মার্কেটেও অস্থিরতা কমেছে।
দেশইনফো: অস্থিরতা কমাতে সরকারের নেয়া উদ্যোগ যথেষ্ট কি?
মতি উল হাসান: যথেষ্ট না হলেও উদ্যোগ মোটামুটি প্রশংসনীয়। সুশাসন, ন্যায়নীতি, সুনীতিসহ আর্থিক খাতে আমুল পরিবর্তন এনেছে সরকার। ফলে স্বচ্ছতা এসেছে। এখন আর ইচ্ছেমতো কোন কিছুই করতে পারবে না। যাই করুক না কেন তা ডিজিটালাইজড সিস্টেমের কারণে সকলে জেনে যাবে। এটা একটা বেশ ভালো উদ্যোগ। এই যে ডিজিটালাইজেশন, এর ফলে কিন্তু অর্থ পাচারও কমে যাবে। ওপেন ওয়েবসাইটে সকলকে তাদের সঠিক তথ্য সাবমিট করতে হবে। তাছাড়া আমাদের ফরেন কারেন্সি বা প্রবাসী আয় বেড়েছে বহুগুণ। এটিও আমাদের আর্থিক খাতের জন্য সুখবরই বটে।
দেশইনফো: ব্যবসায়ীরা ব্যাংক বিমুখ হতে শুরু করেছিলেন- এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
মতি উল হাসান: অবশ্যই। ব্যাংকিং চ্যানেলের সাপ্লাই চেইন তো নষ্ট হয় নাই। সুতরাং ব্যবসায়ীরা তাদের প্রয়োজনীয় অর্থ এবং পণ্য দুটোই পেয়েছেন। সুতরাং ব্যবসায়ীদের জন্য তেমন কোন সমস্যা হয়নি। তবে গার্মেন্টস খাতে অস্থিরতার একটা প্রভাব ব্যাংকিং সেক্টরেও পড়েছিলো, এটি অস্বীকারের উপায় নাই। তবে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে সরকার গার্মেন্টস খাতেও স্থিতিশীলতা আনতে সক্ষম হয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা আবারও ব্যাংকমুখী হচ্ছেন।
দেশইনফো: আপনার ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা কী?
মতি উল হাসান: ২৫ বছরের একটি ম্যাচিউরড ব্যাংক। ৩৩ হাজার কোটি টাকার ডিপোজিট, ২৮ হ্জাার কোটি টাকার এডভান্স, আমাদের কখনই তারল্য সংকট ছিলো না, এখনো নেই। ১৫২টি শাখায় কোন অভিযোগ নেই, অভিযোগ নেই ৪৪টি উপশাখাতেও। মূলত এই ব্যাংকের প্রধান স্লোগান হলো বাংলার ব্যাংক। যাদের দরকার তারা যেনো দ্রুত এই সেবা পায় সে চিন্তা থেকেই এই ব্যাংকের জন্ম। ১৮৮টি এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে মাত্র ৬ ঘন্টার মধ্যেই প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ তুলতে পারছেন গ্রাহকেরা। এটা তো যুগান্তকারী। আগে ভাবাই যেতো না। মার্কেন্টাইল ব্যাংক পিএলসি বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং পরিসেবা দিয়ে থাকে। যার মধ্যে রয়েছে রিটেইল ব্যাংকিং, কর্পোরেট ব্যাংকিং, ইসলামী ব্যাংকিং, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, ক্যাপিটাল মার্কেট, বৈদেশিক বাণিজ্য, ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। ‘এমবিএল রেইনবো’ অ্যাপ দিয়ে ঘরে বসেই একাউন্ট ওপেনিং সহ যাবতীয় ব্যাংকিং লেনদেন ও ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট সহ বিভিন্ন রকম আর্থিক লেনদেনের সুবিধা রয়েছে।বর্তমানে (নভেম্বর, ২০২৪) ব্যাংকিং শাখা ১৫২টি। উপশাখা ৪৪টি এবং এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা রয়েছে ১৮৮টি এবং এটিএম বুথ ১৮৭ টি। ৩টি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি রয়েছে- মার্কেন্টাইল ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেড, মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জ হাউজ (ইউকে) লিমিটেড ও এমবিএল এসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।
দেশইনফো: আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মতি উল হাসান: আরও অন্তত ১০০টা শাখা বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছি আমরা। গ্রাহকদের অর্থ যাতে সুরক্ষিত থাকে সে ব্যাপারটাকেও গুরুত্ব দিচ্ছি। আপনারা জানেন আমাদের ক্যাপিটাল ভিত্তি খুব ভালো, ইন্টারন্যাশনাল মোডিস দ্বারা রেটিং প্রাপ্ত ব্যাংক মার্কেন্টাইল, এডিবি, আইডিবিতেও লেন-দেন রয়েছে আমাদের। ৪৫টি উইংয়ের মাধ্যমে ইসলামী শরীয়া মেতাবেক সেবা দিয়ে যাচ্ছে মার্র্কেন্টাইল ৮০০ এজেন্সির মাধ্যমে ব্যাংক প্রতি বছর প্রায় ৫০০০ কোটি টাকার রেমিটেন্স আসে।
দেশইনফো: মার্কেন্টাইল ব্যাংকের কোন কোন বিষয়গুলো আরও উন্নত করা দরকার বলে মনে করেন?
মতি উল হাসান: আমাদের ব্যাংক বর্তমানে কর্পোরেট ফোকাসড, আমাদের এসএমই এবং রিটেইল ব্যাংকিং এ যাওয়া প্রয়োজন। তাহলে বৃহৎ ঋণের ঝুকি কমবে বলে আমার মনে হয়। ২০২৫ সালের মধ্যে এপস বেইজড প্রোডাক্ট লঞ্চ করার পরিকল্পনা আমাদের আছে। একই সাথে এগ্রিকালচার বেইজড ঋণ সেবা বাড়ানোর উদ্যোগ আমরা নিতে যাচ্ছে।
দেশইনফো: আমাদের দেশে আসলে এতো ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা আছে কি?
মতি উল হাসান: কিছুটা তো বেশিই । সব মিলিয়ে বর্তমানে আমাদের দেশের ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি। অথচ ভারতে দ্যাখেন এ সংখ্যা মাত্র ২২টি, পাকিস্তানে ১৭ কিংবা ১৮টি। আমাদের মতো ছোট দেশ মাত্র ১৮ কোটি মানুষের জন্য ৬১টি ব্যাংক আমার কাছে বাহুল্যই মনে হয়। আশা করি সরকার এ বিষয়টি নিয়েও ভাববেন। আমরা বর্তমান সরকারের প্রত্যেকটি উদ্যোগ নিয়ে আশাবাদী।
দেশইনফো: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মতি উল হাসান: আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
 
		