ভোটের ‘টার্গেট’ নিয়ে দল গোছাবে এনসিপি

0
32

৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনীতিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। তরুণ নেতৃত্ব এখন দ্যুতি ছড়াচ্ছে সর্বত্র। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল- জাতীয় নাগরিক পার্টি, সংক্ষেপে এনসিপি। তবে প্রশ্ন উঠেছে, নতুন দল আসন্ন নির্বাচনের আগে দল গোছাবে নাকি নির্বাচনের মাঠ প্রস্তুত করবে, দলকে শক্তিশালী করবে নাকি প্রার্থী ও ভোটার খুঁজবে। দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতোই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে নাকি রাজনীতিতে নতুনত্ব আনবে। এসব প্রশ্নের মধ্যে ‘ভোটের টার্গেট নিয়ে মাঠ গোছাবে এনসিপি’— দলটির একাধিক সূত্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

নির্বাচন প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘দল আত্মপ্রকাশের পর আমরা এখন নিবন্ধনের শর্তাবলির প্রতি গুরুত্বারোপ করেছি। সাংগঠনিক কাঠামো বিস্তারে মনোযোগ দিয়েছি। রোজার পর এগুলো পুরোদমে চলবে। এরপর নির্বাচন নিয়ে আমরা ভাবব।’

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করা এবং নির্বাচনের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করবে দলটি। প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে তরুণদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা ও সব বয়সের যোগ্য প্রার্থীকে সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রার্থী বাছাই এবং দলের সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের বিষয়েও ভাবছে দলটির শীর্ষ নেতারা
বিজ্ঞাপন

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিশাল জমায়েতের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি। ওইদিন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হলেও দ্রুত সময়ে ২১৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। গত ৪ মার্চ সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং রায়েরবাজারে চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শহীদদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি পালন শুরু করে এনসিপি। এরপর নিয়মিত দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৃণমূলের সব কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ এবং নতুন দলের কমিটির বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব এস এম সুজা উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি সারা বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় আমাদের সাংগঠনিক ক্যাপাসিটি তৈরি করেছে। সাংগঠনিকভাবে উপজেলা কমিটিগুলো দেওয়া হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতা জাতীয় নাগরিক পার্টির সূচনা হয়। জাতীয় নাগরিক পার্টি একইভাবে সারা দেশে, মাঠ পর্যায়ে যারা আছেন তারা কাজ করে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক দল হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সমাজের নানা অংশের রাজনৈতিক সচেতন মানুষ, বিশেষ করে যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছেন, তারা আমাদের সঙ্গে নানাভাবে আলাপ করছেন, তারা যুক্ত হচ্ছেন, কথা বলছেন, আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আমরা যেহেতু অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে একটা বিশাল রাজনৈতিক শক্তি, আমরা সাধারণ মানুষের কাছাকাছি ইতোমধ্যে চলে গেছি এবং মানুষের আরও কাছে গিয়ে কীভাবে তাদের আশা-আকাঙ্খা পূরণ করা যায়, মানুষের কথা শুনা যায় সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।

এনসিপির নেতারা জানান, পবিত্র রমজানের মধ্যে নিবন্ধনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পাশাপাশি সারা দেশে দলের সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলা হবে। ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ধরে সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। তবে, জোট গড়ে নির্বাচন করার পথে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো হাঁটলেও সেই ধারায় যুক্ত হওয়া বা না হওয়ার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ভোটের প্রক্রিয়া শুরু বা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগমুহূর্তে।

এদিকে, দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে রাজনৈতিক বা নির্বাচনী জোট করা, না করা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে নতুন রাজনৈতিক দলটির নেতারা আপাতত মুখ খুলছেন না। তবে নাম প্রকাশ না করে অনেকে জানিয়েছেন, যেহেতু প্রথম নির্বাচন সেহেতু নিজেদের শক্তি যাচাই করতে চাচ্ছেন তারা। অন্যদিকে, নতুন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হবেন কারা, সেটি নিয়েও নানা গুঞ্জন চলছে। ছাত্র প্রতিনিধি থেকে প্রার্থী দেওয়া হবে, নাকি দলের বাইরে থেকেও যোগ্য প্রার্থী মনোনীত করা হবে— এসব বিষয় নিয়ে জোর আলোচনা চলছে নিজেদের মধ্যে।

জোট ও প্রার্থিতা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখন নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি বিস্তারে মনোযোগী হচ্ছি। আমরা নিজেদের শক্তির পরীক্ষা করতে চাই। জোট বা প্রার্থীর বিষয়ে আমাদের অবস্থান ব্যক্ত করতে আরও সময় লাগবে। আমরা এখন নিজেদের কার্যক্রমে মনোনিবেশ করছি।’ তবে, যে কোনো সময় নির্বাচনের জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি প্রস্তুত বলেও জানান নাহিদ। বলেন, ‘আমরা বলেছি, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি গণপরিষদ নির্বাচনও দেখতে চাই। এ মুহূর্তে নির্বাচনই এনসিপির একমাত্র দাবি নয়। আমরা দৃশ্যমান বিচার দেখতে চাই। ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ, যেখানে সব রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষর থাকবে। জনগণ দেখতে পাবে কোন দল কোন সংস্কারের পক্ষে, কোন দল বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদ কার্যকর দেখতে চাই আমরা।’

দলের আত্মপ্রকাশ হলেও এখনও দলীয় প্রতীক কী হবে— তা নির্ধারণ করতে পারেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি। তবে, দল গঠনের আগে ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক পরিচালিত জনমত জরিপে দলের জন্য বেশকিছু প্রতীকের প্রস্তাব এসেছে। সেগুলোর মধ্যে আছে- বই, খাতা, কলম, মুষ্টিবদ্ধ হাত, কবুতর, শাপলা, ইলিশ, বাঘ ইত্যাদি। এগুলোর মধ্য থেকে একটি প্রতীক চূড়ান্ত করতে পারেন দলের নেতারা।

তারা জানান, দলের নিবন্ধন পেতে ঈদের পর নির্বাচন কমিশনে আবেদন করা হবে। এ ছাড়া সবার সঙ্গে পরামর্শ করে দলীয় ফোরামে আলোচনার পর দলের প্রতীক নির্ধারণ করা হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব এস এম সুজা উদ্দিন আরও বলেন, আমাদের বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গণইফতার চলছে। আগামীর জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। যারা সমাজের যোগ্যতা, সামার্থক এবং জনপ্রিয়তা থাকা সত্যেও ফ্যাসিস্টদের কারণে তারা নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিত হতে পারেননি, সমাজে নানাভাবে রাজনীতিক অঙ্গনে তারা অংশগ্রহণ করতে পারেনি, সেই সব মানুষগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ৩০০ আসনে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করবে। যার নেতৃত্ব দেবে তরুণরা। আমরা গণপরিষদের কথা বলছি, সেটির প্রস্তুতিও আমাদের চলছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here