আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল ও জামিনে নজর

0
13

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রায়ই ঝটিকা মিছিল বের করছেন। জামিন পেয়ে অনেক নেতাকর্মী মিছিলেও যুক্ত হচ্ছেন। মিছিল ঠেকাতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো, টহল জোরদার ও গ্রেপ্তারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। বৈঠকসংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বৈঠকে তথ্য দেওয়া হয়, গত বছর ৫ আগস্টের পর রাজধানীতে যত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৪১ শতাংশ জামিন পেয়েছেন। ঢাকার বাইরে এই সংখ্যা ৬১ শতাংশ।

রোববার রাতে সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র বলছে, বৈঠকে এক কর্মকর্তা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের পর মামলা দিচ্ছে। ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের অনেককে গ্রেপ্তার করছে। কাউকে কাউকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এরপর তারা কারাগারে যাচ্ছেন।

তাদের কেউ কেউ জামিন পেয়ে ফের ঝটিকা মিছিলে যুক্ত হলে– এর দায় শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নয়। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কীভাবে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো যায়, এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কেন কীভাবে অল্প সময়ের মধ্যে তারা জামিন পাচ্ছেন, তা খতিয়ে দেখার কথা বলা হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা বলেন, জামিন পেয়ে অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ঝটিকা মিছিলে অংশ নিচ্ছেন, এটা বন্ধ করতে চাচ্ছি।

বৈঠক সূত্র বলছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভায় ঢাকার সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের যে ঘোষণা দিয়েছেন, সে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, প্রস্তাবিত কাঠামোয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করতে দ্রুত অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ করতে কত সময় লাগবে, সেটি ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অবশ্যই স্পষ্ট করতে হবে। তা না করলে বড় আন্দোলনে যাবেন তারা।

রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এক কর্মকর্তা বলেন, কত দিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ সম্ভব– এ বার্তা তাদের সামনে পরিষ্কার করা দরকার। কিছুটা দেরি হলে এর কারণও শিক্ষার্থীদের কাছে স্পষ্ট করা জরুরি। এটি পরিষ্কার করার দায়িত্ব মন্ত্রণালয়ের। শিক্ষার্থীরা দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নামলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে।

এখন প্রস্তাবিত এ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ত্রিমুখী অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরা বলছেন, কলেজগুলোকে কলেজিয়েট বা অধিভুক্তমূলক কাঠামোয় রূপান্তর করা যেতে পারে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে আলাদা ক্যাম্পাসে স্থাপন করে সাতটি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা যেতে পারে। আর উচ্চ মাধ্যমিক এবং স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় করার বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছেন।

এদিকে জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, পিআর পদ্ধতি, জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দল নিষিদ্ধ করাসহ বেশ কিছু অভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ইসলামী দল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এসব দলের কর্মসূচি ও প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃষ্টিভঙ্গি, রাজপথে এসব দলের কর্মসূচিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে না। তবে বিএনপি পাল্টা কর্মসূচি দিলে তা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরির শঙ্কা করা হচ্ছে। আরেক কর্মকর্তা বলেন, বিএনপি এই ধরনের কর্মসূচিতে যাবে বলে তারা মনে করেন না।

এ ছাড়া আসন্ন দুর্গাপূজার সময় কীভাবে নির্বিঘ্ন পরিবেশ বজায় রাখা যায়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় করণীয় নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। সেখানে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে পূজার আয়োজক কমিটিতে একই ধরনের মুখ ছিলেন। এবার অনেক নতুন মুখ এসেছে। কমিটি নিয়ে যাতে দ্বন্দ্ব-সংঘাত না হয়, সেদিকে নজর দেওয়ার কথা বলা হয়।

বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা বলেন, এখন পর্যন্ত পূজামণ্ডপ ঘিরে ১৩টি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে পাঁচটিতে মণ্ডপের জায়গা ও কমিটি নিয়ে বিরোধ রয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে পাওয়া গেছে। বাকি আটটি ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, এর তদন্ত চলছে।

বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, দেশের সব জায়গায় এবার দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে হবে। এবার মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক পূজামণ্ডপে মোতায়েন করা হবে। আমরা ভাবছি, সব যদি ঠিকঠাক থাকে, পূজাটা ভালোভাবে উদযাপিত হবে।

গত শনিবার একটি সংগঠন সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, এবার পূজা উদযাপনে ২৯ জেলা ঝুঁকিপূর্ণ। সেইসব জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে কী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে– জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, কোন ২৯ জেলা ঝুঁকিপূর্ণ? তালিকাটা দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

মাদকের বদলে দেশ থেকে চাল, সার, ওষুধসহ অন্য সামগ্রী চলে যাচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা– এসব এলাকা থেকে চাল ও সার চলে যায়। এটা যেহেতু সাগর দিয়ে যায়, তাই আমরা বিশেষভাবে নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ডকে নির্দেশনা দিয়েছি। যেভাবে হোক এটা বন্ধ করতে হবে। মাদক কীভাবে সমূলে বিনষ্ট করে দেওয়া যায়, সেটা নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা আছে। আমাদের এখান থেকে সার এবং চাল যাতে না যেতে পারে, সেজন্য আমরা সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেব।

নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা আপনাদের বলতে পারি, নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর হবে। নির্বাচন নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলবে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময়ও দেখবেন দু-একটা ঘটনা ঘটে। আমরা চেষ্টা করছি, ছোটখাটো ঘটনাও যাতে না ঘটে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here