সাজেদা হক: ১৮৭০ সালে ১১০ একর জমিতে গড়ে ওঠে তৎকালীন আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের সর্ববৃহৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। অতীতে কারখানাটিতে তিন শিফটে কাজ হতো। ১৪ হাজারের বেশি কর্মচারী কাজ করতো এখানে। ১৯৯১ সালে রেল সংকোচন নীতির ফলে প্রথমবারের মতো জৌলুশ হারায় কারখানাটি। বর্তমানে তিন হাজার ১৭১ জন লোকবলের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র এক হাজার ১৮৫ জন কর্মচারী। ৬৭ ভাগ কম লোকবল দিয়ে চলছে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম।
১৯৯১ সাল থেকে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় জনবল নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। তবে এর মাঝে কারখানায় সামান্য কিছু শিক্ষানবিশ নিয়োগ করা হয়। ১৯৮৯ সালে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় কারখানার বিপুল সংখ্যক কর্মচারীকে অবসরে পাঠায় মন্ত্রণালয়। এর প্রভাব পড়েছে কারখানার ২৮টি উপ-কারখানায় (শপ)।
প্রতি মাসে এখানে ২৬টি যাত্রীবাহী কোচ ও ২৫টি ওয়াগন মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা থাকে। একই সঙ্গে প্রতি ঈদে যাত্রী সেবার বিষয়টি মাথায় রেখে অতিরিক্ত কোচ মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। এত বিশাল কর্মযজ্ঞ সামাল দিতে যত সংখ্যক জনবল থাকার কথা তত সংখ্যক জনবল নেই কারখানাতে। এর ওপর অবসর ধারা অব্যাহত থাকায় লোকবল দিন দিন কমছে তো কমছেই। ফলে কাজের চাপ বাড়ছে।
জনবল সংকটে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রেলওয়ে কোচ মেরামত কাজ করছেন। ফলে তাদের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। কারখানার অবসরে যাওয়া লোকজন দিয়ে এসব কাজ কারখানায় করা হচ্ছে। লোকবলের অভাবে এই প্রক্রিয়ায় কাজ করে অর্থ সাশ্রয় হলেও কাজের মান ভালো হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে গেল বছর ১৫ নভেম্বর কারখানার ট্রেড ইউনিয়নগুলো রেলওয়ে শ্রমিক লীগের নেতৃত্বে কারখানা গেটে বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। ওই মানববন্ধন থেকে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শূন্য পদের বিপরীতে লোক নিয়োগের দাবি করা হয়। রেলপথ মন্ত্রণালয় বরাবরে একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। কিন্ত দীর্ঘদিনেও সেই দাবি আলোর মুখ দেখেনি।
এতকিছুর পরও আরো প্রায় ১৫০ কর্মকর্তা অবসরে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সৈয়দপুর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় জনবল সংকট আরো প্রবল হবে। স্বল্প সংখক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলা সৈয়দপুর রেলওয়ে কতটা সফলতার মুখ দেখবে তা নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। একই সাথে জনবল সংকটে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার সংকট তৈরি হচ্ছে।
জনবল সংকটে দ্রুত লোক নিয়োগ করা না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে বলে মনে করেন খোদ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্ববধায়ক (ডিএস) মুহাম্মদ কুদরত-ই খুদাও। তবে আশার বানী শুনিয়ে তিনি বলেন, মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় লোক নিয়োগ আপাত বন্ধ রয়েছে, দ্রুত এ সমস্যা কেটে যাবে।
সমস্যার আঁধার কেটে গিয়ে সম্ভাবনার আলো উৎসারিত হবে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায়, সেখানেই প্রতিদিন গ্রথিত হবে নতুন নতুন স্বপ্ন বীজের। সেসব স্বপ্ন বীজ থেকে চারাগাছ, চারাগাছ থেকে মহীরুহে পরিণত হবে, সেই স্বপ্নই ফেরী হবে দিকে দিকে, দেশে দেশে-এমন প্রত্যাশা ভুক্তভোগীদের।