এএসএম মাইনুদ্দিন: সতর্ক না হলে সামান্য ফেইসবুকও হতে পারে মানুষের মৃত্যুর কারণ। একটি ফেইসবুক একাউন্টের পথ ধরেই পরিবারের সদস্যদের অজান্তে ঘাতকরা নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া চট্টগ্রামের মেয়ে তাসফিয়ার সাথে যোগাযোগ করে। বন্ধুত্বের মাসপূর্তির অজুহাতে মেয়েটিকে শবে বরাতের রাতে একটি রেস্টুরেন্টে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে দলবলসহ ধর্ষণ ও খুন করে পতেংগা সমুদ্র সৈকতেলাশ ফেলে যায়।
নিহত তাসফিয়া হাজারো তাসফিয়াকে মেসেজ দিয়ে গেছে, ভার্চুয়াল আর রিয়েলিটি এক নয়। ফেসবুক রিলেশনকে ঠিক ততটুকুই গুরুত্ব দেয়া উচিৎ যতটুকু গুরুত্ব আমরা পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া অপরিচিতদের দেই।
আদনান মির্জা বখে যাওয়া পশু, যে কিনা শুধুমাত্র একটা ফেসবুক ফ্রেন্ড! কিন্তু কত বড় অসাবধান চিত্তে সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষকে একটি মাস স্বপ্নের কোলে লালিত করে নিজের সর্বনাশ ঢেকে এনেছে তাসফিয়া তা একটুও বুঝে নি।
সন্তানের কৈশোরের একটা সময়ে এসে অভিভাবকরা কিছুটা অসহায় হয়ে যায়, কোমল স্বভাবের সন্তানটা কেমন যেন বড় হয়ে যায়, গলার স্বরটা কেমন বেসুরে হয়ে যায়। অহেতুক আতংকে বাবা মা কেমন যেন দিশেহারা হয়ে বাজে আচরণ শুরু করেন সেটা তারাই জানেন, কিন্তু ওই সময়টা সন্তানদের সাথে বেশি মনযোগী ও ঘনিষ্ঠ হওয়া দরকার প্রতিটি অভিভাবকের। খুব সাবধানে হাসিমুখে তার জানার পরিধি ব্যাখ্যা করার সাথে সাথে বাস্তব জীবনের ধারনা দেয়ার মত দায়িত্ব একমাত্র পিতা-মাতার। কিন্তু হঠাৎ দুরত্বটা সন্তানদের বিপথে চালিত করে এবং নিজের ইচ্ছে মত সিদ্ধান্ত নেয়ার পথে ধাবিত করে এটা আমাদের অনেকের অজানা।
এতক্ষণে অনেকেই বিভক্তিমূলক মন্তব্য শুরু করেছেন কেউ হয়তো বাচ্চা মেয়েটাকে দায়ী করছেন, হয়তো বলছেন কেন গেলো অপরিচিতের সাথে। যদি ঘটনাটা আপনার ও আমার পরিবারে হতো তখন ব্যাখ্যা কি হতো?
হলি আর্টজানে জঙ্গি নিবরাশ নিহত হবার পর কিছু মেয়ে তাকে ক্রাশ বলে আখ্যায়িত করেছিলো! ঠিক তেমনি সরল চেহারার পেছনে হিংস্র আদনান একটা কিশোরীকে বন্ধুত্বের ফাঁদে ফেলে প্রাণ হরণ করলো। এত তাড়াতাড়ি মানুষ হয়ে উঠার আগে এই কিশোর খুনি হলো তার ব্যর্থতা কে কাকে দিবে?
কিছু ইমো, ব্লক,আনব্লকে আজ আবেগ বিবেক একসাথে এসে দাঁড়িয়েছে যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে যাচ্ছে মানুষের বিবেক। স্বামী সন্তান রেখে অন্যের হাত ধরে পালিয়ে যাওয়া ভাইয়ের বোনটা কিংবা ভার্সিটি যাওয়া পিতার মেয়েটা মুহুর্তে ভুল করে লাশ হয়ে আসছে। বাসার শান্ত ছেলেটা রাতদিন মোবাইল, ট্যাবে কি যেন করছে, জগৎটাকে গুটিয়ে নিয়ে কোথায় হারাচ্ছে আমরা কি তার খবর রাখি? কার সাথে বন্ধুত্ব কোথায় সময় কাটায় সে হিসাব কবে কে করছে? পরিবারের শিক্ষা তবে শেষ হলো?
কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে মানবতা? আর কত তাসফিয়া এভাবে ফাঁদে পড়ে মরবে? হাত কাঁপছে, দৃষ্টি ঝাপসা হচ্ছে। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে গোছানো কথা মালা। কি লিখছি জানি না, শুধু এটুকু জানি মানুষ তার চরিত্র হারাচ্ছে।