মুশফিকুর রহিম উইকেটকিপিং অনুশীলন করতে গিয়ে চোট পান ১২ সেপ্টেম্বর। কিন্তু চোটটা এমন এক জায়গায় যে সেখানে ইনজেকশন দেওয়া যায় না। আবার যায় না ব্যান্ডেজ করাও। মুশফিকুর রহিম তাই নিজেকে খেলার মতো ফিট রাখছেন ব্যথানাশক ট্যাবলেট খেয়ে।
গত চার দিনে ২৫টির মতো ব্যথানাশক ট্যাবলেট খেয়েছি। এভাবেই খেলছি।’ মুঠোফোনে দেশী সংবাদ কে বলেছেন পরশু দুবাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৪৪ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যান। চোট সম্পর্কে জানতে চাইলে মুশফিক জানিয়েছেন, ‘বাঁ পাঁজরের ৯ নম্বর হাড়টা ভেঙে গেছে। এখনো ওটা ভাঙাই আছে। এটা এমন একটা জায়গা যেখানে ইনজেকশনও দেওয়া যায় না। টেপ লাগিয়ে, ট্যাবলেট খেয়ে যতটুকু খেলা যায়। কাল (পরশু) তো পুরো ইনিংসেই সমস্যা হয়েছে। শট খেলতে গেলেই ওখানে লেগেছে।’
মুশফিকুর রহিমের বাঁ পাঁজরের ৯ নম্বর হাড়টা ভেঙে গেছে। এমন একটা জায়গা যেখানে ইনজেকশনও দেওয়া যায় না। টেপ লাগিয়ে, ট্যাবলেট খেয়ে খেলতে হয়। দিনে ৬টির মতো করে ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে, দুবাইয়ের তীব্র গরমে ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটি খেলেছেন মুশফিক
তবে নিজের ব্যথা মুশফিক ভুলে যাচ্ছেন তামিম ইকবালের সাহস দেখে, ‘ওর কিন্তু এক জায়গায় ভাঙেনি। দুই-তিন জায়গায় ভেঙেছে। ওই অবস্থায় খেলতে নামাটা অনেক সাহসী সিদ্ধান্ত এবং তামিম নিজেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে। দেশের প্রতি, খেলার প্রতি তার যে প্রতিজ্ঞা আর নিবেদন, এটা তা-ই প্রমাণ করে। ওকে দেখে সে জন্যই অন্য রকম একটা তাড়না কাজ করেছে আমার মধ্যে। আর কিছু না হোক, তামিমের জন্য হলেও আমাকে ২৫-২৬টা রান করতে হবে যাতে আমরা লড়াই করতে পারি।’
মুশফিক মনে করেন, দলের প্রতি সবার আত্মনিবেদনই অনেক। কিন্তু নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার এই ছবিটা সব সময় সেভাবে তুলে ধরা হয় না, ‘তামিমের সিদ্ধান্ত সারা বিশ্বেই অনেক সম্মান পাবে। দলের প্রতি বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের যে নিবেদন, সেটা আসলে খুব কম মানুষই জানে। গ্রায়েম স্মিথ সিডনিতে ভাঙা হাত নিয়ে খেলতে নামলে বিরাট ব্যাপার হয়ে যায়, কিন্তু আমাদের তামিম নামলে কিছু হয় না। আফসোসটা এ জায়গাতেই। হয়তো আমরা বাংলাদেশ দলে খেলি বলেই আমাদের নিয়ে ওই রকম আলোচনা হয় না। তবে আমরা নিজেরা অন্তত জানি কে কী রকম। দলের মধ্যে আমরা সবাই সবাইকে সম্মান করি। এটাই আমাদের আনন্দ।’
এবার তামিম ইকবাল এশিয়া কাপ খেলতে এসেছিলেন অনেক নাটকের পর। ভিসা জটিলতায় ভুগেছেন বারবার। প্রথম ম্যাচের আগে যাও-বা ভিসা পেলেন, তাতেও ছিল কিছু ভুল। তাতে নেই বাবার নাম। পাসপোর্ট নম্বরও দেওয়া পুরোনোটির। সেই ভুল ভিসা আর ডান হাতে চোট নিয়ে খেলতে এসেছিলেন তামিম। এসেই চোট পেলেন অন্য হাতে। এশিয়া কাপ তো বটেই, ছিটকে গেলেন অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পরের সিরিজটা থেকেও। ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান মোস্তাফিজ যখন আউট হয়ে ফিরে এলেন, তামিম ততক্ষণে জানেন কী করতে চলেছেন, ‘মাঠে নামার সময়টা যখন এল, তখনো সবাই যেন বুঝতে পারছিল না কী হতে চলেছে। কিন্তু আমি আর কিছু না ভেবে সোজা মাঠে নেমে পড়লাম। কেউ একজন বলল, আমি কি সব ভেবেচিন্তেই নামছি? বললাম, আমি নিশ্চিত। তখন মনে হচ্ছিল, আমার ভাগ্যে যদি এবারের এশিয়া কাপে আর একটি বল খেলাই থাকে, তবে তা-ই হোক। একটা বলই কেন নয়? তখন মনে হয়েছিল, আমার কারণে যদি ১০টা রানও যোগ হয়, এটাও অনেক। কেউ ভাবেনি আমি ওই একটা বলই খেলতে পারব, আর শেষে ৩২ রান যোগ হবে। মুশফিক যেভাবে ব্যাট করল, সত্যিই অবিশ্বাস্য।’
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে হাতে চোট পেয়ে মাঠ থেকে ড্রেসিংরুম, সেখান থেকে সোজা হাসপাতাল। হাসপাতালে গিয়ে স্ক্যান করার পর জানা গেল, তামিমের এশিয়া কাপ শেষ! জীবনের সেরা ফর্মে আছেন। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিন ম্যাচের দুটিতে সেঞ্চুরি, আরেকটিতে ফিফটি করেছেন। এই ফর্ম নিয়ে এশিয়া কাপ খেলা হবে না! নিজের চেয়েও তামিমের বেশি খারাপ লাগছিল দলের জন্য।