এই মোবাইল যুগ কাউকেই ছাড় দিলো না

0
338

নূর নাহার তৃপ্তি: ভাবছিলাম এই বিষয় নিয়ে ফেইসবুকে লিখবো না ঘরোয়া বিষয়, কিন্তু বিষয়টা আসলে ঘরোয়া না, ঘরে ঘরে এই কাহিনী! আমি একা পেরে উঠি না আর বিজনেসের কাজে বাইরে যেতে হয় বলে বাচ্চাদের দেখাশোনা আর ঘরের কাজের জন্য দুজন সাহায্যকারী থাকে, রাতে দিনে যে থাকে তার কাজ মূলত বাচ্চা দেখাশোনা করা।

এরা গ্রাম বা শহরে বস্তি থেকে উঠে আসা। খুব বেশি কিছু এদের থেকে আশা করিও না। কাজে অপটু, অপেশাদারী মনোভাব, অপরিচ্ছন্নতা, আচরণ সব নিয়ে এরা খুবই অদক্ষ, তারপরও এদের ছাড়া চলে না বলে চেষ্টা থাকে রেখে একটু শেখানোর!

কিন্তু এদের কাজ শেখার আগ্রহ খুবই কম। এদের যাবতীয় আগ্রহ মোবাইল! এই মোবাইল একটা জিনিস বটে, ধনী গরীব সবার জন্য! যাক, অল্প বয়সী রাখলে প্রেম আর প্রেম, বুড়া রাখলে পান চিবান দিয়ে শুয়ে থাকবে আর মধ্য বয়সীরাতো ভয়াবহ!

যাক দু দিন আগে যেটাকে বিদায় করলাম ওটার কাহিনী বলি। মধ্য বয়সী, দু বাচ্চার মা, বড়টা পনেরো, ছোটটা দশ বছর। মনে হলো এটা অন্তত মোবাইল আর প্রেম রেখে নিজের ডিউটি করবে! এ দেখি একি, রাতদিন মোবাইল কানে, যাক তারপরও রাখা।

নাই মামা থেকে কানা মামা বালা মনে করে! মাস গেলো বেতনের টাকা ছয় হাজার নিয়ে সাথে সাথে টাচ মোবাইল কিনে আনলো।মোবাইল তো আনলো না আনলো আপদ! এখন তার ইমো লাগবে, ভাইবার লাগবে! সবাইরে বিরক্ত। টাচ মোবাইলে ইমো চাই! একটু সময় দিতে রাজি না, পুরো বাড়ি মাথায় তুলছে, এদিকে রাফিফের জর, আমাকে সময় দিতে রাজি না।

সারাদিন ছুটাছুটি, শুয়ে থাকা, চুরি নিয়ে বসে থাকা, আমাদের ভয় লাগানো এই ইমোর জন্য! পরে বাহির হলো উনি ওনার দুই বাচ্চা রেখে বিশ পঁচিশ বছর বয়সী ফুফাতো ভাইয়ের সাথে ভেগে এসেছেন, তার সাথে ভিডিও চ্যাটিং এর জন্য এই ইমো লাগবে!

একটা ষোড়শী বয়সী মেয়ে প্রেমে পড়লে ঘরে যা করে উনি তাই করলেন। পরে না পেরে বের করে দিলাম। এই ঘটনা এখানে বলছি কারন কদিন আগে একজনের কাছে আরও ভয়ানক কাহিনী শুনেছি, এই মোবাইল প্রেম নিয়ে, উনি অফিস গেলে কি করে, ওটা আবার হাত কেটে একাকার কাহিনী!

দু একজন কাজের লোক পিটায় এই কাহিনী ছাপা হয়! ঘরে ঘরে এরা আমাদের কি করে জিম্মি করে রাখে সেই কাহিনী বলার না! এই মোবাইল যুগ কারোরে ছাড় দিলো না! কাজের লোক, দারোয়ান, ড্রাইভার সবার কানে দিন রাত মোবাইল! আর পরিস্থিতি ভয়ানক। এতোদিন ভাবতাম আমাদের উচ্চ ও মধ্যবিত্তবানদের সামাজিক অবক্ষয় হয়েছে।

এখন এটা সব শ্রেণির মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে! কার যে কার সাথে প্রেম, কার যে কার সাথে কি! সব বড় ঠুনকো, আর এসব দেখে দেখে প্রেমের নাম শুনলে গা জলে! এই মোবাইলীয় প্রেমের নিকুচি করি, হা আমি বুড়া হইছি, আমার গলা চুলকায় আরও বহু কথা কইতে, বহু মুখোশ খুলে দিতে।

অসুস্থ একটা সমাজে বসবাস করি। দিন-রাত মনে হয় আমার সন্তানের কি হবে! এদের মনে হয় না এদের এসব কাজ সন্তানের উপর প্রভাব ফেলবে না?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here