বর্তমান সময়ের তরুণরা ক্যারিয়ারের ওপর বেশি গরুত্ব দেয়। তারা অল্প বয়সে বিয়ে করতে চায় না। ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়; ভালো বেতনের চাকুরির অপেক্ষায় থাকে। আর এসব হতে হতে ত্রিশ বছর পার করে ফেলে।
অনেকে বলেন- বিয়ে এবং সম্পর্ক আসলে কী তা বুঝে তবেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। বিয়ের সঠিক বয়স কোনটি তা নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে।
প্রশ্ন হলো, বিয়ের আগে ক্যারিয়ার তৈরি করা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?
বিয়ে জীবনের একটা অংশ। ক্যারিয়ারও জীবনের একটা অংশ। আমার মতে বিয়ের ক্ষেত্রে শুধু ক্যারিয়ারের জন্য দেরি করা উচিত না। এমনকি উচ্চতর পড়াশোনার জন্যও দেরি করা উচিত না। তবে আমি বলছি না যে, দশম শ্রেণিতেই বিয়ে করে ফেলেন। প্রাপ্ত বয়স্ক হলে অবশ্যই বিয়ে করতে পারেন। হাদিসে আছে নবীজি সা. বলেছেন, ‘হে যুবক-যুবতীরা! তোমাদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে, তোমরা বিয়ে করে ফেলো। তাহলে দৃষ্টি সংযত থাকবে, শালীনতা বজায় থাকবে।
যুব সমাজ বিয়ে করতে দেরি করছে এই চিন্তা থেকে যে তারা মনে করে, বিয়ে করলে তো স্ত্রীর দেখাশোনা করতে হবে। আর সেটা বাধা হয়ে দাঁড়াবে ক্যারিয়ার গঠনে বা উচ্চতর পড়াশোনায়। এরকম ধারণা আসলে ভুল। এর উল্টোটা চিন্তা করে দেখেন বিয়ে করলে স্ত্রী আপনাকে পড়াশোনায় সাহায্য করবে। নোট তৈরিতে সাহায্য করবে। আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা করবে। আগে শুধু মা দেখা-শোনা করতেন। এখন মা’র সঙ্গে স্ত্রীও করবে।
অনেকে বলতে পারেন ‘ছাত্র অবস্থায় আমি তার ভরণ-পোষণ দিব কী করে?
তখন তো মাত্র উপার্জনের সময় আমার।’ তাদের এ আপত্তির উত্তরেই নবীজি সা. বলেছেন ‘যদি তাদের সামর্থ্য থাকে।’ সামর্থ্য বলতে পরিবার যদি তাদের খরচ বহন করতে পারে। আর বর্তমানে যারা ক্যারিয়ার গঠনের কথা বলেন, তাদের বেশির ভাগই ধনী পরিবার। তাদের সঞ্চয় করা টাকা থাকে। তাই অর্থনৈতিক কোনো সমস্যা না হলে দ্রুত বিয়ে করে ফেলা উচিত।
দ্রুত বিয়ে করে সন্তানও তাড়াতাড়ি নিবেন। অনেকে বলতে চান ‘আমি আরাম করতে চাই। একটু রিল্যাক্সে থাকতে চাই। তাই দেরিতে সন্তান নিবো।’ তাদের উদ্দেশে বলবো আরে! আরাম করতে চাইলেই তো দ্রুত সন্তান নিবেন।
২০/২৫ বয়সের মধ্যে বিয়ে করে দ্রুত সন্তানের বাবা হবেন। আর চল্লিশ বছর বয়সে আপনার ছেলের বয়স হবে আঠারো বা উনিশ। তখন আপনার ব্যবসা থাকলে তাকে বুঝিয়ে দিতে পারেন।
ব্যবসা না থাকলেও উপার্জন করার মতো বয়স ছেলের তখন হয়ে যাবে। তারপর আপনি বাকী জীবন আরাম করেন। অতএব আমি বলবো, জীবন উপভোগ করতে চাইলে দ্রুত বিয়ে করুন।
অন্যদিকে দ্রুত বিয়ে করলে সমাজের ক্ষতিকর বিষয় থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।
কারণ, তরুণ বয়সে নারী সংক্রান্ত বিপদে পড়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। কলেজ-ভার্সিটির ছেলেরা মেয়েদের কাছে নায়ক সাজার চেষ্টা করে।
অথচ বিয়ে করে ফেললে নায়িকা তো ঘরেই থাকে। তখন মাথায় আজে-বাজে চিন্তা আসবে না। পড়াশোনায়ও মনোযোগী হতে পারবেন। তাই বলছি ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবার সাথে সাথে সুযোগ থাকলে বিয়েটাও করে ফেলুন.
জীবন আনন্দ ও সুখময় হবে ইনশাআল্লাহ.
আরো পড়ুনঃ
জেনেনিন অল্প বয়সে বিয়ে করার ৬টি উপকারিতা
আর বিয়ের সাথে অর্থনৈতিক বিষয়ও জড়িত থাকে বলে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত অনেকেই বিয়ের কথা ভাবেন না। কিন্তু সত্যি বলতে কি, দ্রুত বিয়ে করে ফেলার সিদ্ধান্ত কিন্তু বুদ্ধিমানের মতো কাজ। বয়স একটু কম থাকতেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা উচিত। এতে জীবনটা অনেক বেশিই সহজ মনে হবে আপনার কাছে। অনেক ধরণের সমস্যা থেকে অনায়াসেই মুক্ত থাকতে পারবেন। আসুন জেনে নিই কম বয়সে বিয়ে করার ছয়টি সুফল।
০১. বেশি বয়সে বিয়ে করলে স্বামী-স্ত্রী নিজেদের জন্য কতটা সময় পান? বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সন্তানের দায়িত্ব এসে পড়ে। আর সন্তান হয়ে গেলে দু’জনের একান্ত সময় কাটানো খুব বেশি হয়ে ওঠে না। কিন্তু অল্প বয়সে বিয়ে করলে সঙ্গীর সাথে অনেকটা সময় পাওয়া যায়। এতে সম্পর্ক অনেক ভালো ও মধুর থাকে।
০২. আপনি যদি ৩০ পার করে বিয়ে করেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আপনার বয়সের কারণে আপনার মধ্যে যে গাম্ভীর্য চলে আসবে তার জন্য সম্পর্ক খুব বেশি মধুর ও ঘনিষ্ঠ হবে না। ব্যাপারটি বরং এমন হবে যে, বিয়ে করা উচিত তাই বিয়ে করেছি। এ কারণে আগেই বিয়ে করা ভালো। যখন আবেগ কাজ করে অনেক।
০৩. ‘একজনের চেয়ে দু’জন ভালো’ -বিষয়টি নিশ্চয়ই না বোঝার কথা নয়। একাই সুখ-দুঃখ ভোগ করার চেয়ে দু’জনে ভাগাভাগি করে নিলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। অল্প বয়সে বিয়ে করলে জীবনের সবকিছু ভাগ করে নেয়া যায়। ফলে মানসিক চাপটাও কম পড়ে।
০৪. সন্তানের জন্য খুব ভালো মাতা-পিতার উদাহরণ হতে পারবেন যদি বিয়ে আগে করে ফেলেন। আপনি দেরিতে বিয়ে করলে সন্তান মানুষ করার বিষয়টিও পিছিয়ে যাবে। আর আপনার মানিসকতাও কিন্তু দিনকে দিন নষ্ট হতে থাকবে।
০৫. আগে বিয়ে করলে আপনার কাছে এসে কেউ ‘কেন বিয়ে করছ না’, ‘কবে বিয়ে করবে’, ‘বয়স বেড়ে যাচ্ছে’, ‘কাউকে পছন্দ কর কি’ ইত্যাদি বিরক্তিকর কথা শোনার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।
০৬. দুর্ভাগ্যবশত অনেকেই বিয়ের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাই এখন ডিভোর্সের সংখ্যাও বাড়ছে। জলদি বিয়ে করার কিন্তু এই দিক থেকেও সুবিধা রয়েছে। যদি অল্প বয়সে বিয়ে করার পর, আল্লাহ না করুন কোনো কারণে যদি সম্পর্ক ভেঙেও যায়, তারপরও জীবনটাকে নতুন করে গুছিয়ে নেয়ার দ্বিতীয় সুযোগ পাওয়া যায়।